বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘উপদেষ্টাদের আসলে যেভাবে যতটা সক্রিয়ভাবে কাজ করার কথা, অতটা দেখতে পাই না। এই মুহূর্তে সবচেয়ে সক্রিয় হওয়া দরকার ছিল স্বাস্থ্য উপদেষ্টার। যার অফিস হওয়ার কথা হাসপাতাল। তিনি হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে দৌড়াবেন। আমাদের জায়গা থেকে বারবার স্পষ্টভাবে বলছি, তাঁদের আসলে যেভাবে যতটা সক্রিয়ভাবে কাজ করার কথা, অতটুকু দেখতে পাই না।’
আজ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিয়ে অবহেলা, বঞ্চনা, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন—এমনকি স্বাস্থ্যকর্মীদের দুর্ব্যবহার-এমন সব অভিযোগের বিষয়ে আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন সারজিস।
৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন পুলিশের নির্বিচার গুলিতে আহতদের ৫৭ জন বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন সাভারে সিআরপিতে। এদের মধ্যে স্পাইনাল কর্ডে গুলিবিদ্ধ ছয়জন রোগীর অবস্থা গুরুতর।
পাঁচদিন আগে এসব রোগীর চিকিৎসার বিষয়ে গোপনে খোঁজ নিতে সিআরপিতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী রুবায়াত রাজ ও সানজানা সেলিম বর্ষার নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী। সে সময় চিকিৎসায় নানা অনিয়ম, অবহেলা এবং বৈষম্যের চিত্র এবং ভুক্তভোগীদের বক্তব্য ধারণ করেন তাঁরা।
বিষয়টি সারজিস আলমের নজরে আনা হলে আজ ভোরে তিনি কাউকে কিছু না বলে আকস্মিক চলে যান সিআরপিতে।
এ সময় হাসপাতালের পরিবেশ, রোগীদের সঙ্গে কর্মীদের দুর্ব্যবহার ও খাবার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সারজিস আলম। বলেন, ‘আমরা পরিদর্শনে আসছি এটা টের পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় পরিষ্কার করে স্যাভলন দিচ্ছেন। এইগুলো তো এক–দুই দিনের কাজ না। এইগুলো হতে হবে প্রতিটি দিন। রোগীরা তো জিম্মি হয়ে থাকতে পারেন না। বিশেষ করে যাঁরা বেডশিট পরিবর্তন করেন, কাঁথা দেন, ড্রেসিংয়ের কাজ করেন, তাঁদের ব্যবহার খুবই খারাপ।
বেডশিটের পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে পুরোনো পত্রিকা। যেসব পত্রিকা কেজি ধরে কেনা। হাসপাতালের কর্মীরা যদি তাঁদের দায়বদ্ধতা না বোঝেন, তাহলে তাঁদের কাজ করার দরকার নেই। খাবার নিয়ে অভিযোগ দিলে এক দিন ভালো হয়; এরপর আবার ফিরে যায় পুরোনো কায়দায়। এর দায় অবশ্যই এখানকার প্রশাসনকে নিতে হবে।’
রোগীদের অভিযোগ, ১৫ দিনের ব্যবধানে একজন রোগী একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন। অথচ ভর্তি রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা চিকিৎসকের দায়িত্ব। এখানে শুধু ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয়। অথচ মেডিসিন কিংবা অর্থোপেডিক্স চিকিৎসা গ্রহণে অসহায়ের মতো দিন গুনতে হয় রোগীদের।
আমরা দেখতে পেয়েছি, এই যে গুলিবিদ্ধ অসহায় মানুষগুলো যারা চলতে ফিরতে পারে না তাদের কাছে ডাক্তাররা আসেন না বরং ডাক্তারদের কাছে তাদের গিয়ে ধরনা ধরতে হয়। মেডিসিনের জন্য স্টাফদের বারবার বলতে হয়, রোগীকে বারবার যেতে হয়। সিআরপির মতো প্রতিষ্ঠানে কেন এমন পরিস্থিতি, তা খুঁজে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান সারজিস আলম।
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে রংপুরে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান কর্তৃক অবাঞ্ছিত ঘোষণার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সারজিস আলম এ বিষয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যান।
ব্রিটিশ নাগরিক ভেলরি এন টেইলরের হাত ধরে সাড়ে চার দশক আগে সাভারে প্রতিষ্ঠিত হয় সিআরপি। পক্ষাঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে বিশেষ ভূমিকা রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের সম্মানজনক নাগরিকত্ব প্রদানের পাশাপাশি স্বাধীনতা পদক এবং জাতীয় সমাজসেবা পদক পান তিনি।
এমন একটি প্রতিষ্ঠানে এমন গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিআরপির প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহ মো. আতাউর রহমান। নিজেদের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে তিনি বলেন, যেসব বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নোটিশ করেছেন সেগুলোর বিষয়ে আমরা আরও সতর্ক হব। ক্লিনিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জনবলের অভাব রয়েছে। সেটি দ্রুতই সমাধান করা হবে। রোগীদের সেবায় আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। এর পরও অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে সমাধানের উদ্যোগ নেব।’