দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির
ক্রমাবনতি নাগরিকদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই,
রাহাজানি, দখলদারি ইত্যাদি নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশঙ্কাজনক হারে
বাড়ছে খুনখারাবির ঘটনা। সংবাদকর্মীরাও রেহাই পাচ্ছে না এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড
থেকে।
দুই দিনে দুজন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। রাজনৈতিক নেতাকর্মী,
ব্যবসায়ী, পেশাজীবীরাও সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন। নতুন করে শুরু হয়েছে
চাঁদাবাজির ঘটনা। আইন-শৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞরা এর জন্য নিয়ন্ত্রণমূলক
কর্মকাণ্ডের দুর্বলতাকেই দায়ী করছেন।
তাঁদের মতে, সম্প্রতি বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেছে।
পত্রিকান্তরে
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অন্তত
ছয়জন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁরা হলেন হাজারীবাগ এলাকার
শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন, ‘কিলার আব্বাস’ হিসেবে পরিচিত
মিরপুরের আব্বাস আলী, মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল
এবং ঢাকার অপরাধজগতের আরো তিনটি বড় নাম সুইডেন আসলাম, খন্দকার নাঈম আহমেদ
ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু। জানা যায়, এর মধ্যে
তাঁদের কয়েকজন দেশ ছেড়েছেন।
যাওয়ার আগে এখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড
পরিচালনার জন্য লোক নিয়োগ করে গেছেন। তারা নতুনভাবে দল তৈরি করছে। অনেক
কিশোর সদস্য দলে ভিড়ছে। দেশের বাইরে থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা দল নিয়ন্ত্রণ
করছেন। গত ১০ অক্টোবর রাজধানীর হাতিরঝিল থানাধীন মহানগর প্রজেক্ট এলাকায়
বাসায় হামলা চালিয়ে দীপ্ত টেলিভিশনের কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম তামিমকে
হত্যা করা হয়।
জানা যায়, হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা সদ্য কারামুক্ত শীর্ষ
সন্ত্রাসী ইমনের ঘনিষ্ঠ। ওই দিন ২০ থেকে ২৫ জন দুর্বৃত্ত ভবনের সিসি
ক্যামেরা ভেঙে হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যা করে। পুলিশের তদন্তেই উঠে এসেছে,
শীর্ষ সন্ত্রাসীরা তাঁদের সহযোগীদের দিয়ে নানাভাবে চাঁদাবাজি শুরু করেছেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন মগবাজার বিশাল সেন্টারের এক
দোকান দখলে নিতে ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখান বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে গত ২০
সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকায় দুজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায়
মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের
সন্ত্রাসী বাহিনী জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
গণ-আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে
অনেক থানা ও জেলখানায় হামলা হয়েছে। অনেক অস্ত্র লুট হয়েছে। অনেক
জঙ্গি-সন্ত্রাসী জেলখানা থেকে বেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের
এভাবে জামিনে মুক্ত হওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। আমরা
চাই, যেকোনো মূল্যে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।