বাজারে নিত্যপণ্যের অসহনীয় দাম ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সরকার কিছু কিছু উদ্যোগ নিলেও সার্বক্ষণিক তদারকি এবং সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে সেসব উদ্যোগ খুব একটা সফল হচ্ছে না। সরকার ১৯টি পণ্যে শুল্ক কমিয়েছে, কিন্তু শুল্ক কমানোর সুবিধা ভোক্তারা পাচ্ছে না। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চিনির দাম কমাতে গত ৯ অক্টোবর অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এতে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনির শুল্ক কর ১১ টাকা ১৮ পয়সা এবং পরিশোধিত চিনির শুল্ককর ১৪ টাকা ২৬ পয়সা কমার কথা।
কিন্তু বাজারে আগের দামেই চিনি বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে ডিম আমদানি করা হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, আমদানি করা প্রতিটি ডিমে সর্বসাকল্যে খরচ হচ্ছে সাত টাকার মতো। কিন্তু বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম এখনো ১৫ টাকার কাছাকাছি।
হঠাৎ বেড়ে গেছে মুরগির দাম। আলু, পেঁয়াজসহ প্রতিটি তরিতরকারির দাম সাধারণ ভোক্তার নাগালের বাইরে। চালের দামও ক্রমাগত বাড়ছে। এই অবস্থায় মানুষ রীতিমতো দিশাহারা।
অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি মানুষ এখনো যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। তাই বাজারে সব কিছুর অগ্নিমূল্য সত্ত্বেও মানুষ খুব একটা প্রতিবাদমুখর হচ্ছে না। রাস্তায় নেমে আসছে না। কিন্তু যেভাবে দিন দিন না খেয়ে থাকার উপক্রম হচ্ছে, তাতে মানুষ ক্রমেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে। চিনির বাজার পুরো নিয়ন্ত্রণ করছে সিটি, মেঘনা, এস আলম, আবদুল মোনেম ও দেশবন্ধু গ্রুপ।
এ ছাড়া ছোট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও পণ্যটি আমদানি করে। এরা শুল্ক কমানোর সুবিধা নিলেও দাম কমাচ্ছে না। সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বনানী কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের দামেই চিনি বিক্রি হচ্ছে, খোলা চিনি ১৩০ টাকা কেজি ও প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, কম্পানির পক্ষ থেকে এখনো দাম কমানো হয়নি। বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত সোমবার কারওয়ান বাজারে পণ্যমূল্য পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক পর্যায়ে লাভ করার আহ্বান জানান। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কি তাঁর এ আহ্বানে সাড়া দেবেন?
আমরা মনে করি, বাজারে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে গঠিত টাস্কফোর্স, ভোক্তা অধিকার, প্রতিযোগিতা কমিশন, ট্যারিফ কমিশন-প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ওপেন মার্কেট সেল, ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রিসহ বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপ আরো বাড়াতে হবে। বাজারে যারা কারসাজি করে তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে।