নিজস্ব
প্রতিবেদক: ২০ জনকে চাকরি থেকে অপসারণের প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে
বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে আন্দোলনে নেমেছেন কুমিল্লা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর রামপুর
এলাকায় কুমিল্লা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২-এর অফিসে কর্মবিরতি দিয়ে আন্দোলনে
অংশ নেন তারা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুমিল্লা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১,
পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-৩ ও পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-৪-এ বেলা
১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকে। এদিকে,
কুমিল্লার চারটি সমিতিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির
কার্যালয় থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ
মানুষ। পরে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সন্ধ্যা ৬টায় সংযোগ স্বাভাবিক হয়।
কুমিল্লার
মনোহরগঞ্জের সরসপুর ইউনিয়নের বাতাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন
বলেন, ‘সারা দিন এমনিতেই বিদ্যুৎ কম থাকে। যদি কারও দাবিদাওয়া থাকে, তাহলে
জনগণকে হয়রানি করবে কেন? এটা জনগণের অধিকারের প্রশ্ন। এসব চিন্তার পরিবর্তন
করতে হবে।’
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কর্মচারীরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে না নিলে এবং চাকরিচ্যুত জিএমদের
পুনর্বহাল না করলে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
পাশাপাশি সমিতির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিক্ষুব্ধরা।’
জেলা
প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা
বলেছি। তাদের বলেছি, বিদ্যুৎ রাষ্ট্রের সম্পদ, এটা বন্ধ করা যাবে না। তারা
সংযোগ স্বাভাবিক করেছে। তাদের দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
জানা
গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর রামপুর
এলাকায় কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অফিসে কর্মবিরতি দিয়ে আন্দোলনে
অংশ নেয় তারা। এদিকে কুমিল্লার চারটি সমিতিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পল্লী
বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়ায় ভোগান্তিতে
পড়েছে সাধারণ মানুষ।
আন্দোলনকারীরা জানান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একীভূত করে অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন এবং
চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিতদের চাকরি নিয়মিত করাসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নে
দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা
কর্মচারীরা। এরই মধ্যে বুধবার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১০ জন এবং বৃহস্পতিবার
আরো ১০জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে অবসান করা হয়। এর প্রতিবাদে আমরা
আন্দোলনে নেমেছি। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই কার্যক্রম
চলমান থাকবে।
এদিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বৃহস্পতিবার দুপুরে
উত্তর রামপুর এলাকায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক
প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যান কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছার। পরে
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের সাথে সম্মেলন কক্ষে বৈঠকেও অংশ নেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কুমিল্লা জোনের
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল হান্নান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
সৈয়দ শামসুল তাবরিজ, সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া খানমসহ
সেনাবাহিনী ও পুলিশ কর্মকর্তারা।
তবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দাবি-
জরুরি সেবা বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করা, নিয়ন্ত্রনকারী কর্তৃপক্ষ
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্দেশনার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং
দাপ্তরিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকায় বিধি অনুযায়ী চিঠির
মাধ্যমে তাদের চাকরি অবসান করা হয়েছে। তাদের এই আন্দোলনটি সম্পূর্ণ
অযৌক্তিক।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার সারা দেশের ন্যায় সকাল সাড়ে নয়টা থেকে
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় অবস্থিত কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর
আওতাধীন সকল বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এতে ওই সমিতির আওতায় চার উপজেলার
গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে। উপজেলা গুলোর মধ্যে হচ্ছে চান্দিনা,
দেবীদ্বার, মুরাদনগর ও বরুড়া।
টানা ছয় ঘন্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখার
পর গ্রাহকদের উত্তেজনায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিকাল তিনটায় বিদ্যুৎ সংযোগ
চালু করা করে আন্দোলনকারীরা।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর একাধিক
কর্মকর্তা কর্মচারী জানান, আরইবি-পল্লী বিদ্যুৎ একীভূতকরণ, অভিন্ন
চাকরিবিধি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে আমরা দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় যাবত
আন্দোলন করে যাচ্ছি। কর্তৃপক্ষ আমাদের আন্দোলন না মেনে উল্টো আমাদের
কর্মকর্তাদের অন্যায় ভাবে চাকরিরচ্যুত করছে।
বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে গ্রাহক ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন- আমরা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্মসূচি পালন করেছি।
কুমিল্লা
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -১ এর চান্দিনা উপজেলা গ্রাহক জাকির হোসেন তীব্র খুব
প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলনের অনেক উপায় আছে। পূর্বের কোন ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ
এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে
আন্দোলন করার কোন যুক্তি নেই । তারা গ্রাহকদের উত্তেজনার ভয়ে উল্টো পুলিশ
প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল মানেজার আবু রায়হান এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি ।
চান্দিনা
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাজমূল হুদা জানান, পল্লী বিদ্যুৎ থেকে
আমাদেরকে ফোন করে জানায় উত্তেজিত গ্রাহকরা পল্লী বিদ্যুৎ ঘেরাও করেছে। ঐ
সংবাদ পাওয়ার পরপর আমাদের পুলিশের সাথে সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে
গিয়ে দেখি উল্টো চিত্র। তারা নিজেরাই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আন্দোলন
করছে। পরবর্তীতে নউপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজিয়া হোসেন ঘটনাস্থলে পৌছলে
আমরা আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনা করে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করি। বিষয়টি জেলা
প্রশাসকের মাধ্যমে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবেন বলে জানান
ইউএনও।