বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪
৭ কার্তিক ১৪৩১
সার্ত্রের শেষ যাত্রা
জুলফিকার নিউটন
প্রকাশ: বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:২৮ এএম |

 সার্ত্রের শেষ যাত্রা

মনস্বী বান্ধবী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর দুরদানা মতিন একটি অসামান্য বই পাঠিয়েছেন। সিমোন দ্য বোভোয়ারের লেখা ‘বিদায়ের অনুষ্ঠান’ A Farewell to Sartre, Penguin,  ১৯৮৪। এই ধরনের বই আগে পড়িনি। এর বিষয় প্রিয়তমের জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু। গ্লানি, উদ্বেগ ও যন্ত্রণার খুঁটিনাটি কিছুই গোপন করা হয়নি। সততা এবং অনুরাগ, নির্মোহ দৃষ্টি এবং শ্রদ্ধান্বিত সৌহার্দ্য কায়িক আপজাত্যের করুণ বিবরণকে উচ্ছ্বাসের আতিশয্য থেকে রক্ষা করেছে। হয়তো প্রথম পাঠে একটু নির্মম মনে হতে পারে, কিন্তু অনুচ্চ বেদনাবোধের ধারা আগাগোড়াই বর্তমান।
সার্ত্রের মৃত্যুর অব্যবহিত পরে এটি প্রকাশিত হয়। সার্ত্রের জীবনের শেষ দশ বছর সিমোন দ্য বোভেয়ার নিজে যে রোজনামচা রেখেছিলেন তারই ভিত্তিতে বইটি লেখা। শুরু ১৯৭০ সালে, শেষ ১৯৮০ সালেতে।
১৯৭০ সালে রোজনামচা থেকে তখনকার এবং তার ঠিক আগেকার বছরগুলোয় সার্ত্রের কর্মময় জীবনের কিছুটা হদিশ মেলে। তখন তিনি ফ্লোবেয়ারের উপরে তাঁর মহাকায় গ্রন্থটি (The  family Idiot, vols I, II, III, ১৯৭১-৭২) রচনায় ব্যস্ত। এদিকে জনসংযোগ ছাড়া বুদ্ধিজীবীর নৈতিক উত্তরণ নেই এই বিশ্বাসে তিনি ফরাসি মাওপন্থীদের নানা উদ্যোগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। ১৯৬৮ সালের হেমন্ত ঋতুতে তিনি Interluttes নামে একটি বুলেটিন বার করেন; রাজনৈতিক কর্মীদের উদ্দেশ্যেই এটির প্রকাশ। আবার ফরাসি মাওপন্থীদের নিজস্ব পত্রিকার প্রথম দুই সম্পাদককে যখন পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, তখন সার্ত্রের সম্মতি নিয়ে তাঁকে সম্পাদক করে মাওপন্থীদের মুখপত্র La Cause du peuple  নতুন করে ১৯৭০সালের পয়লা মে বেরোয়। ছাপাখানা থেকে পুলিশ এই কাগজের যতগুলো কপি পায় বাজেয়াপ্ত করে। সার্ত্র-কে ধরতে সরকার সাহস পায়নি, কিন্তু এই পত্রিকার বিক্রেতাদের গ্রেপ্তার করে চালান দেয়। সার্ত্র, সিমোন এবং তাঁদের বন্ধুরা তখন রাস্তায় কাগজ বিক্রি করতে নামেন। ওই বছর জুন মাসে সার্ত্র "ঝবপড়ঁৎং জড়ঁমব" নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এটির উদ্দেশ্য ছিল যারা অন্যায়ভাবে বন্দি তাদের রক্ষার এবং তাদের পরিবারের সহায়তার ব্যবস্থা করা। এটির কয়েক হাজার সদস্য হয় এবং পারীর বাইরেও বিভিন্ন জেলায় কমিটি গড়ে ওঠে। অর্থাৎ লেখা ছাড়াও নানা বিবেকী উদ্যোগে সাত্র তখন খুবই জড়িত।
সার্ত্র এই সময়ে থাকতেন মঁপারনাসের কবরখানার উল্টোদিকে একটা বাড়ির দশতলার ফ্ল্যাটে। যেমন তাঁরা দম্পতি হয়েও বিয়ে করেননি তেমনি গভীর সৌহার্দ্য সত্ত্বেও সার্ত্র এবং সিমোন বাস করতেন স্বতন্ত্রভাবে আপন আপন ফ্ল্যাটে। সিমোন থাকতেন ওই পাড়ার কাছেই অন্য এক বাড়িতে। তাঁর সেই ‘স্টুডিও'-র মাঝখান থেকে সিঁড়ি উঠে গেছে উপরের শোয়ার ঘরে। ঘরের সঙ্গে লাগাও বারান্দা, অন্যপ্রান্তে বাথরুম। সার্ত্রের নিজস্ব আস্তানা থাকলেও তিনি সপ্তাহে দু'রাত কাটাতেন তাঁর পালিত কন্যা আর্লেৎ এলকাইমের কাছে। অন্য সন্ধ্যাগুলোয় আসতেন সিমোনের অ্যাপার্টমেন্টে। বিকেলের দিকে সিমোন যেতেন সার্ত্রের ফ্ল্যাটে, সেখানে বসে তাঁর নিজের স্মৃতিকথায় শেষ খণ্ড লিখতেন।
১৯৭০সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্যালেস্টিনিয়ানদের উপরে অত্যাচারের প্রতিবাদে দু হাজার লোকের এক জনসভায় সার্ত্র এবং জাঁ-জেনে অংশ নেন। আর তার কয়েকদিন পরেই জরা আর ব্যাধির অতর্কিত আক্রমণ ঘটে। দুপুরে তাঁকে ডাকতে গিয়ে সিমোন দেখেন সার্জ চলাফেরা করতে গেলে ঘরের টেবিলচেয়ারে বেসামালভাবে ধাক্কা খাচ্ছেন। তা হলেও তাঁরা নীচে নেমে রেস্তোরাঁয় খেতে যান (দু-বাড়িতেই রান্নাবান্নার পাট ছিল না, খাওয়াদাওয়া প্রধানত কাফে-রেস্তোরাঁয়)। ফেরার পথে দেখেন সার্ত্র মদ প্রায় না খেয়েই রীতিমতো টলছেন। টাক্সি থেকে নামবার সময়ে রাস্তায় পড়ে যাবার অবস্থা। সেদিন রোজনামচায় সিমোন লেখেন, “এখন থেকে জীবন এভাবেই চলবে: আনন্দের মুহূর্তগুলির উপরে ঝুলবে বিপদের আশঙ্কা-লঘুবন্ধনীর ঘেরে খণ্ডিত জীবন”।
অক্টোবর মাসে চিকিৎসকরা সব রকম পরীক্ষা করে সিদ্ধান্তে আসেন যে সার্ত্রের গুরু মস্তিষ্কের বাম গোলার্ধে রক্তচলাচল খুবই বিঘ্নিত; তাঁর রক্তপ্রবাহের নালীগুলি সঙ্কীর্ণ হয়ে এসেছে। একগাদা ইনজেকশন এবং সম্পূর্ণ বিশ্রাম দরকার। কিন্তু সার্ত্র কি বিশ্রাম নেবার মানুষ! ওই মাসেই তিনি বিল্যাঁক্যুর-এ রেনো কারখানার শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কারখানার গেটে দাঁড়িয়ে চোঙামুখে বক্তৃতা দেন। (তাঁকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি এবং কমিউনিস্টরা তাঁর বিরুদ্ধে  এক ইস্তাহার বার করেছিল)। তাঁর বক্তব্য ছিল, উনিশ শতকে শ্রমিক আর বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যে আত্মীয়তা গড়ে উঠেছিল বিশ শতকে তা প্রায় লোপ পেয়েছে। সেই ঐক্য আবার গড়ে তোলা দরকার। অন্যায়ের প্রতিরোধ ও সমাজের রূপান্তরের জন্য এই ঐক্য খুব জরুরি। কারখানার মজুররা য়ে সার্ত্রের কথায় সাড়া দিয়েছিল এমন দাবি অবশ্য সিমোন করেননি।
ফরাসি বামপন্থীদের মধ্যে যারা আপোষবিরোধী ১৯৭০সালের নভেম্বর মাসে তারা ঔ'ধপপঁংব নামে পত্রিকা বার করে। সার্ত্র এটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হন। ওই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে একটি সরকারি কয়লাখনিতে বিস্ফোরণের ফলে ষোলোজন খনিমজুর মারা যায়। সরকার বিনা প্রমাণে কয়েকজন মাওপন্থীকে গ্রেপ্তার করে। সার্ত্রের নেতৃত্বে ঝবপড়ঁৎং জড়ঁমব প্রতিষ্ঠান এর প্রতিবাদে একটি গণবিচারসভা ডাকে। সার্ত্র সেই বিচারসভায় সরকারকে মজুরদের হত্যাকারী বলে ঘোষণা করেন। শেষ পর্যন্ত প্রমাণাভাবে সরকার মাওপন্থীদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
সিমোনের রোজনামচায় সার্ত্রের কাজকর্মের এই জাতীয় খুঁটিনাটি বিবরণ বিস্তর আছে। এ থেকে বোঝা যায় যে জরা ও ব্যাধির আক্রমণে ভয় পেয়ে সার্ত্র নিজেকে গুটিয়ে নেবার চেষ্টা করেননি। ১৯৭১ সালের গোড়ায় তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিবাদে বড় অংশ নেন একটি ইহুদিদের উপরে সভিয়েট ইউনিয়নে অত্যাচারের বিরুদ্ধে , একটি বাস্কদের বিরুদ্ধে  স্প্যানিশ সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে। এপ্রিল মাসে গুস্তাভ ফ্লোবেয়ারের উপরে লেখা তাঁর বিরাট আলোচনা গ্রন্থের প্রথম দুটি খণ্ড গালিমার থেকে বেরোয়- দুখণ্ডে দুহাজার পৃষ্ঠা। তারপর মে মাসে আবার তিনি অকস্মাৎ ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর মুখ একদিকে বেঁকে যায়; কথা আটকে যায়; বিছানা থেকে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে। ডাক্তার পরীক্ষা করে বলেন এবারের সংকট আগেরবারের চাইতে গুরুতর। মস্তিষ্কের বাঁদিকে রক্তচলাচল খুবই ব্যাহত, ডানহাত কাজ করে না। অভ্যাসমতো সিগারেট ধরাতে যান, আঙুল থেকে বার বার খসে পড়ে। জুন মাসে জিভ প্রায় অচল হয়; কথা বলতে কি খেতে গেলে অসহ্য যন্ত্রণা। এই সময়ে সার্ত্রের বয়েস ছেষট্টি।
তারপর থেকে একটু সেরে ওঠা, আবার আরও খারাপ অবস্থা। সামান্য সুস্থ হলেই লেখার কাজ, সভাসমিতি, পত্রিকা সম্পাদনা। ফ্লোবেয়ারের উপরে আলোচনা গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ড শেষ করে চতুর্থ খণ্ডের পরিকল্পনা করছেন। একটি আলজেরিয়ান বালককে হত্যার প্রতিবাদে মিছিল: তার প্রথম সারিতে হাঁটছেন সার্ত্র, ফুকো, জেনে, ক্লোদ মোরিয়াক। ১৯৭২ সালে সার্ত্রের উপরে একটি ডকুমেন্টারি ছবি তোলা হয়। সার্ত্র তাতে নিজের জীবনের এবং দর্শনের বিবর্তন ব্যাখ্যা করেন। ‘ফ্রান্সে মাওপন্থীরা' বইয়ের ভূমিকায় লেখেন, জনগণের চেতনা থেকেই বিপ্লবচিন্তার উদ্ভব, জনগণের প্রয়াসের ভিতর দিয়েই তার প্রকৃত বিকাশ, আর বিপ্লবের এই স্বতঃস্ফূর্তিতে আস্থা মাওপন্থীদের বিবেকিতার উৎস। রুশপন্থী কমিউনিস্টদের সঙ্গে তাঁর এখন স্পষ্ট বিরোধের সম্পর্ক, কিন্তু বিভিন্ন বামপন্থী উদ্যোগের সঙ্গে তিনি যুক্ত। এদিকে দেহের ভাঙন ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। প্রস্রাবের চাপ সামলাতে পারেন না; পোশাকে, চেয়ারে, বিছানায় তার দাগ; চেষ্টা করেন গোপন করতে, কিন্তু সিমোনের অজ্ঞাত থাকে না। মাড়িতে পুঁজ, উপরের পাটির সবকটা দাঁত তুলে ফেলতে হয়। তবু উৎসাহে ভাঁটা পড়ে না। ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কয়েকজন তরুণ বামপন্থীর সহযোগে বার করেন নতুন পত্রিকা খরনবৎধঃরড়হ। এদিকে তাঁর নিজের পত্রিকা খবং ঞবসঢ়ং গড়ফবৎহবং-ও চলছে । রাজনৈতিক নির্বাচন তাঁর বিচারে ‘ধাপ্পাবাজি মাত্র’। “আমি বে-আইনী অস্তিত্বে আস্থাবান।” মার্চ মাসে আবার আংশিক পক্ষাঘাতের আক্রমণ। মুখ বেঁকে যায়, হাত নড়ে না, মস্তিষ্কের অবস্থা ভাল নয়, স্মৃতিভ্রংশের লক্ষণ দেখা যায়। চিকিৎসার ফলে মুখে এবং হাতে স্বাভাবিকতা এলেও কথাবার্তায় অসংলগ্নতা প্রকট হয়ে ওঠে। পরিচিতজনকেও সব সময়ে চিনতে পারেন না। বাস্তব-অবাস্তবের পার্থক্য গুলিয়ে ফেলতে থাকেন। এমন সব ঘটনার উল্লেখ করেন যা আদৌ কখনও ঘটেনি। চিকিৎসকের মতে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবে এই অবস্থা। ব্যাধির নাম অ্যানক্সিয়া; ধমনী সরু হয়ে যাওয়ার ফলে যথেষ্ট রক্ত মাথার ভিতরে বইছে না। পালিত কন্যা আর্লেত কয়েকদিনের জন্য তাঁকে নিজের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু স্মৃতিতে অনেক কিছুই ঝাপসা; মাঝে মাঝেই কথা এলোমেলো হয়ে যায়, মাথা ঘোরে, হাঁটাচলার উপরে যথেষ্ট দখল নেই। সিমোন তাঁকে নিয়ে গাড়িতে করে ফ্রান্সের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ঘোরেন। পারীতে ফিরে আসবার পর আবার সুস্থতা-অসুস্থতার পালাবদল চলতে থাকে।
নিজের অবস্থা বুঝতে পেরে সার্ত্র এই সময়ে একদিন সিমোনকে বলেন, “একটু একটু করে সবই যাবে, বার্ধক্যে এটাই তো স্বাভাবিক। ফ্লোবেয়ারসালের উপরে বইটা অসমাপ্ত রয়ে যাবে।” বই পড়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু যা পড়েন বিশেষ মনে থাকে না। এবারে সিমোন তাঁকে বেড়াবার জন্য ইটালিতে নিয়ে যান। পারীতে ফিরে ফ্ল্যাট বদল করেন, কিন্তু এবারও সার্ত্র নেন দশতলায় ফ্ল্যাট। নিজের শোবার ঘর ছাড়া অতিরিক্ত একটা ঘর থাকে যাতে রাতে কেউ না কেউ সেখানে ঘুমোতে পারে। এর মধ্যে La France Sauvage  পত্রিকায় আক্রমণাত্মক প্রবন্ধ প্রকাশের অভিযোগে আদালতে মামলা ওঠে। যাঁরা লেখার জন্য দায়ী তাঁরা আদালতে যেতে রাজি হন না। অগত্যা অসুস্থ অবস্থাতেই সার্ত্র আদালতে যান এবং পত্রিকার পক্ষে বক্তব্য পেশ করেন। বিচারে তাঁর শাস্তি হয় ক্ষতিপূরণ বাবদ এক ফ্রাঁ আর জরিমানা বাবদ চারুশো ফ্রাঁ। বিচারের দিন বিকেলে তাঁর চোখ পরীক্ষার ফলে জানা যায় যে তাঁর অক্ষিপট আক্রান্ত; পুরো দেখার সামর্থ্য আর কখনও ফিরে আসবে না; বই পড়া বেশ কিছুদিনের জন্য একেবারে বন্ধ রাখতে হবে। কয়েকদিন পরে (অক্টোবর ১৯৭৩) আবার তন্ন তন্ন পরীক্ষা করানো হয়। বহুমূত্র ব্যাধি বেড়েছে: মস্তিষ্কে রক্তাল্পতার সমস্যা প্রবলতর হয়েছে; মানসিক সক্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। বেশিটা সময় ঘুমিয়ে অথবা আচ্ছন্ন অবস্থায় কাটে। বই পড়তে পারেন না, পড়ে শোনাতে হয়। কিন্তু এই অবস্থাতেও মাঝে মাঝে স্রেফ মনের জোরে বুদ্ধিজীবীর দায়িত্ব পালনে উদ্যোগী হন। আরব-ইসরাইল যুদ্ধ নিয়ে ভাবেন, আলোচনা করেন, একটি ভিয়েতনামী মেয়ের উপরে বলাৎকারের প্রতিবাদে সিমোনের সহায়তায় একটি প্রবন্ধ লেখেন (নভেম্বর ১৯৭৩)। কিন্তু বেশির ভাগ সময় তিনি অবসন্ন, নিদ্রাতুর, ঘুমোলে মুখ থেকে লালা গড়ায়। তবে হাল ছাড়েননি। ডিসেম্বর মাসে বিক্টর  নামে একটি উগ্রবামপন্থী যুবককে তাঁর একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ করেন। সিমোন এই নিয়োগকে স্বাগত করতে পারেননি। তাঁর আশঙ্কা হয়, যে অশক্ত সার্ত্রকে সামনে রেখে বিক্টর  ক্রমে মাতব্বর হয়ে উঠবে, হয়তো নিজের বক্তব্য সার্ত্রের উপরে চাপাবে। সিমোনের লেখা পড়ে মনে হয় শেষদিকে তাই খানিকটা ঘটেছিল।
চোখে দেখতে পান না, লেখাপড়ার কাজ বন্ধ, সার্ত্র সিমোনকে বলেন, “আমি ফুরিয়ে গেছি”। কিন্তু কথাটা যে ঠিক নয় ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯ সালের রোজনামচা থেকে সেটা বোঝা যায়। লিখতে গেলে কাগজে আঁকিবুকির বেশি কিছু দাঁড়ায় না। কিন্তু একটু সুস্থ বোধ করলেই মননের কাজ চলতে থাকে, বিবেকিতা নীরব থাকতে দেয় না। আলোচনারসূত্রে নিজস্ব ভাবনা প্রকাশ করেন, টেপে তা রেকর্ড হয়, পত্রপত্রিকায় অথবা বই আকারে তা বেরোয়। সিমোন, বিক্টর  এবং অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে নানা পরিকল্পনা করেন। ১৯৭৪ সালে বেরোতে শুরু করে খধ ঋৎধহপব ঝধাঁধমব পুস্তিকামালা-প্রতিষ্ঠানদের বাইরে যে সব ‘বন্য’ ‘আদিম’ ‘মুক্ত’ ভাবনাচিন্তা দেখা দেয় তাদের জনসমক্ষে আনা এই পুস্তিকামালার উদ্দেশ্য। সার্ত্র এটির অন্যতম সম্পাদক। মার্চ মাসে সিমোন আবার তাঁকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে যান ভেনিসে। মে মাসে বেরোয় সার্ত্র এবং বিক্টরের আলোচনা ‘বিদ্রোহের সপক্ষে যুক্তি'। সিমোন (On a raison de se revolter) প্রস্তাব করেন এবারে যখন তাঁরা একত্রে বেড়াতে বেরোবেন তখন সিমোন সার্ত্রের সঙ্গে তাঁর নিজের কথাবার্তা টেপরেকর্ড করবেন- সাহিত্য, দর্শন, ব্যক্তিগত জীবন সবই তাতে থাকবে। ওই বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে রোমে এবং পারীতে তাঁদের যে সব আলাপ সিমোন টেপ করেন তাঁর ‘বিদায়ের অনুষ্ঠান' বইটির দ্বিতীয়ার্ধে তার প্রতিলিপি দিয়েছেন। এটি থেকে সার্ত্রের জীবন ও ভাবনা সম্পর্কে অনেক খুঁটিনাটি খবর মেলে।
যদিও ১৯৭৪ থেকেই সার্ত্র নিজেকে 'জ্যান্ত মড়া' বলে অভিহিত করতে থাকেন তাঁকে কিন্তু ক্বচিৎ অবসর নিতে দেখা যায়। ইহুদি বিক্টর কে ফরাসি নাগরিকত্ব দেবার জন্য তিনি প্রেসিডেন্টকে লিখছেন। বিপ্লবতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করছেন সমাজদার্শনিক হার্বার্ট মারকুসা-র সঙ্গে। খরনবৎধঃরড়হ পত্রিকা যাতে অর্থাভাবে উঠে না যায় তার জন্য দেশবাসীর কাছে আবেদন করছেন। বন্দী টেররিস্ট আন্ড্রিস বার্ডের সঙ্গে তার কারাবাসের অবস্থা সম্পর্কে কথা বলবার জন্য জার্মান সরবরের অনুমতি আদায় করে ডানিয়েল কোহেন বেনডিকট দোভাষী হিসেবে সঙ্গে নিয়ে ইটগার্টের জেলে তার সঙ্গে আধঘণ্টা কথা বলেছেন। জেল কর্তৃপক্ষের অত্যাচার থেকে রাজনৈতিক বন্দীদের রক্ষা করার উদ্দেশ্যে একটি আন্তর্জাতিক কমিটি গড়তে উদ্যোগী হয়েছেন (এতে তাঁর সহযোগী ছিলেন নোবেল বিজয়ী জার্মান ঔপন্যাসিক হাইনরিখ বোল)। সেনাবাহিনীতে গণতান্ত্রিক অধিকার দাবি করবার অভিযোগে যে সব সৈন্যকে বন্দি করা হয়েছিল তাদের মুক্তি দেবার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তা ছাড়া এই বছরই শুরু করেন তাঁর এক বিরাট উৎকাক্সক্ষায়ী পরিকল্পনা। সার্ত্র তাঁর নিজের বিশিষ্ট প্রতিন্যাস থেকে বিশ শতকের ইতিহাসের ব্যাখ্যা করবেন; সেটি রচিত হবে দশটি খণ্ডে  টেলিভিশন সিরিজের দশটি প্রোগ্রাম রূপে; প্রতি খণ্ডে বা প্রোগ্রামে থাকবে পঁচাত্তর মিনিট ইতিহাস ব্যাখ্যা এবং তারপর পনেরো মিনিটে সেই বিশেষ ইতিহাসের আলোয় সমকালীন কোনও বিশেষ সমস্যার আলোচনা। পুরো পরিকল্পনাটা তৈরি করবেন সার্ত্র, সিমোন, বিক্টর  এবং তাঁদের আর এক তরুণ সহকর্মী ফিলিপ গাবি। ইতিহাসের মালমশলা এঁদের নির্দেশ অনুযায়ী জোগাড় করে দেবেন একদল তরুণ ঐতিহাসিক ও গবেষক !
কিন্তু এত বড় পরিকল্পনার কে হবে প্রযোজক, কোথায় পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় অর্থ? ১৯৭৫ সালের বেশিটা সময় যায় এই পরিকল্পনার পিছনে। সার্ত্রের পরিকল্পনা সরকারের নাপসন্দ জেনে প্রযোজক পিছিয়ে যায়, প্রতিশ্রুতি রাখে না। উলটে গুজব রটায় যে সার্ত্র প্রভূত রয়ালটি চান বলেই এটি করা সম্ভব হল না। সিমোনের লেখা থেকে আমরা জানি সার্ত্র যা উপার্জন করেছেন তাই খোলা হাতে বিলিয়েছেন- কখনও সঞ্চয়ের চেষ্টা করেননি। শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনাটি স্বপ্নই থেকে যায়।
তবে সে বছর এপ্রিল মাসে তিনি আর সিমোন পর্তুগাল ঘুরে আসেন; সেখানে আগের বছর এপ্রিলে যে-রাষ্ট্রবিপ্লব ঘটেছিল তার চরিত্র এবং গতির অনুধাবন ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য। জুন মাসে সার্ত্রের সত্তর বছর উপলক্ষে তাঁর সঙ্গে একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয় Le Nouvel Observateur  পত্রিকায়। এটিতে তিনি তাঁর অতীত ও বর্তমান নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন। সেই সূত্রে তিনি বলেন, “লেখক হিসেবে এখন আমার কাজ শেষ। ওইদিক থেকে দেখলে আমার বেঁচে থাকার অর্থ চলে গেছে।...আমার তো খুব নির্বিঘ্ন বোধ করবার কথা।...কিন্তু যা নিয়ে আমার আর কিছু করবার নেই, তা নিয়ে কপাল চাপড়ানো নিরর্থ।...আমি লিখেছি, বেঁচেছি, আমার কোনও অনুশোচনা নেই।”
সিমোন সে বছর সার্ত্র-কে পরে বেড়াতে নিয়ে যান এথেন্স, ক্রিট এবং রোডস্-এ। পারীতে ফিরে আবার অসুস্থ। হাঁটতে চলতে খুব কষ্ট হয়। চিকিৎসক দেখে বলেন এবারের অবস্থা আগের চাইতেও বিপজ্জনক। কিন্তু তারি মধ্যেই যেটুকু সময় সুস্থ বোধ করেন বিক্তরের সঙ্গে আলোচনা চলে। ‘ক্ষমতা ও স্বাধীনতা' (Pouvoir et liberté) নামে যুক্তভাবে যে আলোচনা গ্রন্থটির পরিকল্পনা করেছেন তার টেপরেকর্ডিং হতে থাকে। ১৯৭৬ সালে সার্ত্রের কয়েকটি বক্তৃতা-আলোচনা-সাক্ষাৎকার একত্র করে একটি প্রবন্ধগ্রন্থ বেরোয়। তাঁকে নিয়ে একটি ফিল্ম (Sartre by Himself) মুক্তি পায়। অনেক বছর পরে আবার পারীর রঙ্গমঞ্চে Les Mains Sales  অভিনীত হয় এবং দেড়শোবার অভিনয়ের পরে মফস্বল-পর্যটনে বেরোয়। সার্ত্র ঘোষণা করেন যে তাঁর সাহিত্যজীবন সমাপ্ত; তাঁর যা বলবার ছিল ফুরিয়ে গেছে: বিক্টর সাত্রের সঙ্গে যে আলোচনা ভবিষ্যতে প্রকাশিত হবার উদ্দেশ্যে টেপ হচ্ছে তাঁর সঙ্গে তাঁর আগেকার চিন্তার ও সাহিত্যজীবনের প্রকৃত কোনও ধারাবাহিকতা নেই।
১৯৭৭ সালে সার্ত্রের দেহ একেবারেই পঙ্গু-রক্ত চলাচলের অভাবে পায়ে অসহ্য  যন্ত্রণা- বেশির ভাগ সময় ঘরেই কাটাতে হয়। সিমোন এবং আর্লেং ছাড়াও সার্ত্রের অন্য অনুরাগিণীরা আসেন-তরুণীদের সঙ্গ তাঁকে বিশেষ আনন্দ দেয় এবং চিকিৎসকের নিষেধ সত্ত্বেও লুকিয়ে অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে অসুস্থতা আরও বাড়ে। অনুরাগিণীরা অনেকে মদ উপহার আনেন। সিমোনকে খোঁজ করে করে তাঁদের বারণ করতে হয়। মার্চ মাসে তাঁকে তন্নতন্ন পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্তে আসেন তাঁর আর বেশিদিন বাঁচার সম্ভাবনা নেই। সার্ত্রকে এ কথা জানানো হয় না। সিমোন আবার তাঁকে ইতালিতে নিয়ে যান। পারীতে ফিরে এসে একটু সুস্থ থাকলেই ফের বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনায় সাড়া দেওয়া শুরু হয়। ইসরাইল এবং প্যালেস্টিনিয়ানদের মধ্যে আলোচনা, ন্যায়ভিত্তিক চুক্তি এবং নির্ভরযোগ্য শান্তিপ্রতিষ্ঠা তাঁর কাছে খুব জরুরি ঠেকে। ১৯৭৮সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অথব শরীর নিয়ে সার্ত্র কয়েকদিনের জন্য স্বয়ং জেরুসালেমে যান; চাকাওয়ালা চেয়ারে করে তাঁকে প্লেনে ওঠাতে নামাতে হয়। ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে খবং ঞবসঢ়ং গড়ফবৎহব পত্রিকার উদ্যোগে পারীতে ইসরাইল-প্যালেস্টাইন আলোচনার ব্যবস্থা হয়। বৈঠক বসে মিশেল ফুকোর অ্যাপার্টমেন্টে। পারস্পরিক ভাবনাবিনিময় ছাড়া এ থেকে বিশেষ কিছু ফল হয় না। ভিয়েতনাম থেকে যে শরণার্থীরা থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াতে সাময়িকভাবে আশ্রয় পেয়েছিল তাদের ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসের ব্যবস্থা করবার জন্য এই বছর জুন মাসে পারীতে সভা হয়। সার্ত্র সেই সভায় অংশ নেন। পরে রেমঁ আরঁ-র সঙ্গে ফরাসি দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেন যাতে সরকার শরণার্থী ভিয়েৎত্নামীদের পুনর্বাসনে সহায়তা করে।
১৯৮০ সাল। ১৯ শে মার্চ সকালে সার্ত্রকে ডাকতে গিয়ে সিমোন দেখেন তিনি বিছানার কিনারায় বসে হাঁ করে শ্বাস তুলছেন; কথা বলবার কি নড়বার কোনও সামর্থ্য নেই। এমার্জেন্সি সার্ভিসকে ডাকা হয়। অ্যাম্বুল্যান্স এসে তাঁকে ব্রুসে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখে। কিনি আর কাজ করছে না; কিন্তু অপারেুশন সইবার শক্তি নেই। তাঁর ইউরিমিয়া হয়েছে জেনে সিমোন চিকিৎসককে অনুরোধ করেন মৃত্যু আসন্ন একথা সার্ত্র-কে না বলতে। রক্তচলাচলের অভাবে শয্যাশায়ী অবস্থায় তার পিঠে অনেকগুলি ঘা দেখা দেয়, সেগুলিতে পচন ধরে। অসহ্য যন্ত্রণা, কিন্তু মাথা তখনও কাজ করছে। সিমোনকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন: “সৎকারের খরচা কীভাবে মেটানো যাবে?” পরের দিন চোখবোজা অবস্থায় সিমোনের কবজি নিজের হাতে নিয়ে বলেন, “প্রিয় ক্যাস্টর (সার্ত্রের দেওয়া সিমোনে: ডাকনাম), তোমাকে আমি খুব ভালবাসি।” ১৫ই এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল নটায় হাসপাতাল থেকে আর্লেত টেলিফোন করেন: সব শেষ। পের লাশ চুল্লীতে তাঁর দাহ হয়। পরে ছাই এনে রাখা হয় মঁপারনাসের কবরখানায়।'
বিশ্বজগৎ অথবা সমাজপরিবেশ আমার ইচ্ছায় চলে না। সময় নিয়ত বহমান। প্রাণ থাকলেই মৃত্যু অনিবার্য। বেশিদিন বেঁচে থাকলে জরা অবশ্যম্ভাবী। তবু হয়তো বা জীর্ণ দেহেও মনন এবং বিবেকিতাকে অনেকদিন সক্রিয় রাখা যায়। যৌবন, বিবেকিতা ও মনন যাদের জীবনে কোনওদিনই প্রাধান্য পায়নি তাদের কাছে এ আশ্বাস অর্থহীন। কিন্তু আমি মানুষের মধ্যে নিয়ত যে দীপ্যমানতার সন্ধান করি বার্ধক্যের এই উপাখ্যানে তা প্রবলভাবে প্রত্যক্ষ। সার্ত্রের বিবেকিতা প্রায় শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল; জরার যন্ত্রণা এবং আপজাত্য তাঁর মনকে মলিন বা সঙ্কীর্ণ করেনি। এবং সিমোন। সার্ত্রের মৃত্যুর সময়ে তাঁর বয়স বাহাত্তর। কিন্তু লেখায় বাহাত্তুরের কোনও চিহ্ন নেই। যেমন গভীর তাঁর অনুরাগ তেমনই মুক্ত তাঁর বুদ্ধি। যেমন অপ্রগলভ তাঁর বেদনাবোধ তেমনই তীক্ষè তাঁর দৃষ্টি। এমন জুড়ি সবদেশে সবকালেই দুর্লভ।












সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লা সিটির ‘বঞ্চিত’ অপসারিত কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের দাবি
বঙ্গভবনের সামনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ
ধর্মপুর-সাতরার রাস্তার সংস্কার কাজ উদ্বোধন করেন জামায়াতের কুমিল্লা মহানগর সেক্রেটারি অধ্যাপক এমদাদুল হক মামুন
বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ ঢুকে পরার চেষ্টা, বাধা
কুমিল্লা নগরীর ২৭ হাজার কিশোরী পাবে বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানববন্ধন
সুমি জুয়েলার্সের ২৭তম বর্ষপূর্তি উদযাপন
বঙ্গভবনের সামনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ
বঙ্গভবনের সামনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষার্থীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ
বুড়িচংয়ের আলোচিত আদনান হায়দারসহ গ্রেপ্তার ২
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২