শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪
১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
মুক্তমত ও মুক্তপথ
জুলফিকার নিউটন
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১:৩৮ এএম |

 মুক্তমত ও মুক্তপথ
আমাদের পরিচিত সমাজ চোখের সামনেই দ্রুত বদলে চলেছে। আজ থেকে ধরুন পঁচিশ বছর পরে সমাজের চেহারা কী হবে সে কথা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। আলোচনা সম্ভব কিছু বিকল্প সম্ভাবনা নিয়ে। ভাঙাগড়া চলছে। কোনো এক ধারায় চলছে এমন নয়, পাশাপাশি নানা ধারায় পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। সবকিছু আমাদের পছন্দ অনুযায়ী হচ্ছে অথবা হবে এমন নিশ্চয়ই নয়। তবু বুঝার চেষ্টাটা জরুরি। এক নতুন শতকের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমরা পথের সন্ধান করব। ইতিহাসের রচনায় মানুষের একটা নিজস্ব ভূমিকা আছে ও থাকবে, সীমাবদ্ধ তবু সচেতন ভূমিকা। এই বিশ্বাসটুকু রক্ষা করা চাই। পরিবর্তন ঘটছে শুধু সমাজের বহিরঙ্গে নয়, ব্যক্তিমানুষের জীবনদর্শনেও। আমরা বুঝতে চেষ্টা করব, ভালো-মন্দ বিচার করব, নতুন সমাজ সংগঠনে নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ী অংশগ্রহণ করব। যুক্তি ও সৃজনশীলতায় বিশ্বাসী মানুষ এই আশাকে আশ্রয় করেই পথ চলে। 
আমাদের পরিচিত সমাজের ভিত্তিতে আছে পরিবার। সমাজের ভাঙ্গন সম্বন্ধে ধারণা করতে গেলে ওইখান থেকে আলোচনা শুরু করা মন্দ নয়। পরিবারের অবক্ষয় নগরেই অধিক স্পষ্ট। আলোচনার এই অংশে নাগরিক পটভূমি স্বাভাবিকভাবেই প্রাধান্য পাবে।
ব্যক্তিই বিবেকের ধারক, মানুষের শ্রেষ্ঠ উপলব্ধির ও সৃজনশীলতার উৎস। ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে নিকটতম বৃত্ত পরিবার। কয়েকটি পরিবার নিয়ে একটি পল্লি। তার বাইরে গড়ে উঠেছে বৃহত্তর সমাজ। নগর ও মহানগর, বন্দর ও তীর্থস্থান, রাজধানী, রাজ্য, সাম্রাজ্য, যুগে যুগে গড়েছে ও ভেঙেছে, চলেছে রূপান্তরের ভিতর দিয়ে, স্থাপিত হয়েছে বিশ্বময় যোগাযোগের ব্যবস্থা। সংঘাত ও সহযোগ, সংকট ও সংকট মোচনের প্রয়াস এইসব নিয়ে যুগে যুগে রচিত হয়ে চলেছে মানুষের ইতিহাস। প্রতিটি যুগের আছে নিজস্ব রূপ, তার সংকটেরও নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। আমাদের চিন্তায় প্রাধান্য পাবে স্বভাবতই সমকালীন সংকট। নানা স্তরে নানা রূপে এই সংকটের প্রকাশ। 
আলোচনা আরম্ভ করা যাক পরিবার নিয়ে। এদেশের অতি পরিচিত প্রতিষ্ঠান যৌথ পরিবার, আমরা দেখেছি তার ভাঙনের দৃশ্য। অন্তত নগরে প্রধান হয়ে উঠছে, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ছোটো পরিবার। মনে রাখতে হবে যে, চিরাচরিত যেসব সদগুণের কথা আমরা বলে থাকি। যেমন– স্নেহ, সহযোগিতা, সমবেদনা, ভ্রাতৃত্ববোধ, নিজেকে অপরের ভিতর বিস্তৃত করে দেখা– এইসবই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সঞ্জাত হয়েছে, পুষ্টি লাভ করেছে, পরিবারের পরিধির ভিতর। অবশ্য কলহেরও স্থান থাকে পরিবারের ভিতরে ও বাইরে। তবু প্রকৃতির নিয়মেই স্নেহ ও সমবেদনায় আশ্রিত কিছু গুণ দীর্ঘকাল রস আহরণ করেছে আত্মীয়তার মৃত্তিকা থেকে। 
বস্তুত সনাতন বাঙালি সমাজের বৈশিষ্ট্য এই; বাঙালি সমাজ আত্মীয়তাধর্মী। আত্মীয়তার বাইরে নাগরিক জীবনের, জনজীবনের, উপযুক্ত কোনো সুনীতিবোধ এদেশের চেতনায় শিকড় গাড়তে পারেনি। আমাদের জনবীনে তাই দুর্নীতি অবাধ। এরই মাঝখানে পরিবারও ভাঙতে শুরু করেছে। 
পরিবারের ভাঙ্গন আর তার কারণ নিয়ে আলোচনা তাই আজকের দিনে জরুরি। ছোটো পরিবারের ভিতরও পারস্পরিক সম্পর্ক ক্রমে শিথিল হয়ে আসছে। তার কিছু কারণ বাজারনির্ভর নাগরিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। কোনো এক যুগে পারিবারিক পেশার অবিচ্ছিন্ন ধারা ছিল, জীববিকার সঙ্গে পরিবারের সংযোগ ছিল সহজ, বিশেষত গ্রামীণ সমাজে। নারীর স্থান ছিল গৃহে। পুরুষের কর্মস্থলের সঙ্গেও গৃহের তেমন দূরত্ব দেখা যেত না প্রায়শ। সেই অবস্থাটা আজ আর আশা করা যাচ্ছে না, বিশেষত নগরে। পিতা-পুত্রের কর্মস্থল ভিন্ন, ভাইয়েরা সবাই একই স্থানে কর্মে নিযুক্ত নয়, এটাই যদি স্বাভাবিক নিয়ম হয় তবে পারিবারিক বন্ধনে শিথিলতা রোধ করা কঠিন। নারীরাও আজ আর গৃহে আবদ্ধ নন। ক্রমশ বেশি সংখ্যায় তাঁরা কাজ খুঁজে নিচ্ছেন ঘরের বাইরে। অনুমান করা যায় এই ধারাটাই ভবিষ্যতে এগিয়ে যাবে। এর পরিণাম আজ সুপরিচিত, তবুও ভবিষ্যতের দিকে চোখ রেখে নতুনভাবে আলোচনা আবশ্যক। 
সেই একদিন ছিল যখন অতি প্রয়োজনীয় কিছু কাজ পরিবারের ভিতরই সম্পন্ন হতো। যেমন শিশুপালন, জন্ম থেকে শুরু করে অন্তত কৈশোর অবধি। ছোটো-বড়ো নানা ব্যাধিতে রোগীর সেবা। (যে বাড়িতে রোগীর সেবা হয় না সে বাড়ি ভালো নয়, কবির চৌধুরী)। তাছাড়া যৌথ পরিবারের সুখে-দুঃখ সঙ্গদান, হৃদয়ের সঙ্গে নানাভাবে হৃদয় মেলানো, আজ যাকে ‘মনোরঞ্জন” বলে তার অধিক কিছু। আজ যখন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ঘরের বাইরে নানা পেশাদারি এবং অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকেন তখন ঐতিহ্যগত পারিবারিক ভূমিকা পালন করা প্রায়ই অসম্ভব হয়ে ওঠে। কোনো কোনো বাড়িতে দাদা-দাদিরা আজও উপস্থিত। তাঁরা কিছু কিছু দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে তাতেও নানা রকমের জটিলতা এড়ানো যাচ্ছে না, যেমন মুখোমুখি দুই প্রজন্মের দ্বৈতশাসনের অমীমাংসিত জটিলতা। অতএব বেড়ে উঠেছে শিশু পালনের ও রোগীর সেবার বিকল্প ব্যবস্থা। এটাকেই অনিবার্য বলে আমরা মেনে নিতে অভ্যস্ত হচ্ছি। 
নাগরিক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য আজকাল পরিবারের ভিতর বড়ো হওয়ার সুযোগ ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে আসছে। ইউরোপীয় ভাষায় যাকে বলে কিন্ডারগার্ডেন (করহফবৎমধৎফবহ) আক্ষরিক অনুবাদে আমাদের ভাষায় তাকে বলা যাবে “শিশু উদ্যান”, অথবা সরল বাংলায় “খেলাঘর”। পিতামাতার অনুপস্থিতিতে এদেশেও শিশুশিক্ষা ও শিশুপালনের জন্য এই ব্যবস্থা অনেকেই মেনে নিয়েছেন। আরও একটু বড়ো হলে ছেলেমেয়রা স্থান পাচ্ছে ছাত্রাবাসে বা ছাত্রীসদনে। বিদেশে দেখেছি ছাত্রাবাসের পরিচালিকাকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে “হাউস মাদার”। এই মাইনে করা মায়েরা সুশিক্ষিতা ও সুদক্ষা হতেও পারেন। তবু জন্মদাত্রী জননীর স্থানে এই পেশাদারি মায়েদের প্রতিষ্ঠা দ্বারা সমাজজীবনে একটা যুগান্তকারী পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। এর পরিণাম দেখেশুনে আগামী শতকে আরও কিছু নতুন চিন্তা ও অন্য কোনো পরীক্ষার পথ প্রশস্ত হতে পারে। 
পরিবার খণ্ড খণ্ড হচ্ছে, যে খণ্ডটির যেখানে উপার্জনের সম্ভাবনা বেশি সেটি সেখানে চলে যাচ্ছে। এই ঝোঁক যতই বাড়বে আজকের ছোটো পরিবারকেও অখণ্ড রাখা ততই কঠিন হবে। স্বামী ও স্ত্রীর উপার্জনের শ্রেষ্ঠ সুযোগ একই অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া যাবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখন অবধি স্বামীকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে কর্মক্ষেত্র নির্বাচনের ব্যাপারে, তারই সঙ্গে সংগতি রেখে স্ত্রী খর্ব করছেন নিজের স্থান নির্বাচনের অধিকার। এটাই আজকের নিয়ম, তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। অনুমান করা যায়, এই ব্যতিক্রমের সংখ্যা বাড়বে। বিবাহেবিচ্ছেদ এখনই সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে নানা কারণে। এর বিরুদ্ধে  প্রতিক্রিয়ার কথাও অবশ্য শোনা যাচ্ছে। এই মূল ব্যাপারটা তবু উপেক্ষা করা যায় না। বাজার অর্থনীতির পরিধির ভিতর স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই যেখানে আর্থিক স্বাধীনতার দাবিকে প্রাধান্য দেবেন সেখানে পরিবারের ঐক্য রক্ষা করা কঠিন হবে। সেই সঙ্গে আরও জটিল হবে সন্তানের অভিভাবকত্বের সমস্যা। বিবাহ, প্রেম, একগামিতা ও শিশুপালন বিষয়ে সাবেকি ধ্যানধারণা ও বিধিব্যবস্থার বড়ো রকমের পরিবর্তনের জন্য সমাজকে প্রস্তুত হতে হবে। 
কিছুক্ষণ আগে রোগীর সেবার সমস্যাটা সংক্ষেপে ছুঁয়ে গিয়েছিলাম। ব্যবসায়িক সেবাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে চলছে, তাতে ব্যয়ের বাহুল্য সত্ত্বেও। সেই সঙ্গে বাড়ছে পেশাদারি সেবিকার ওপর নির্ভরতা। ভাঙা পরিবারে রোগীর সেবার ব্যবস্থা করা কঠিন ব্যাপার। তাছাড়া আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা এমনই জটিল হয়ে উঠেছে যে, পারিবারিক সেবার আয়োজনকে আধুনিকতার দাবির সঙ্গে মেলানো যাচ্ছে না। এই অবস্থাটা নগরের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু এদেশের অধিকাংশ লোকের, বিশেষত গ্রামবাসীদের, এটা সামর্থের বাইরে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে, এক বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থার কথা ক্রমেই শোনা যাচ্ছে দিকে দিকে। আমাদের মতো দেশে রোগীর সেবাকে যদি আমরা আনতে চাই সাধারণ মানুষের এবং গ্রামীণ সমাজের আয়ত্তের ভিতর, তবে একদিকে যেমন বিজ্ঞানের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে, অন্যদিকে তেমনি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিকে উপেক্ষা করাও ঠিক হবে না। কিন্তু এপথে বেশি দূর অগ্রসর হতে চাইলে আবশ্যক হবে শুধু চিকিৎসাবিদ্যার অথবা গবেষণার দিক পরিবর্তনই নয়, উপরস্তু তলা থেকে সমাজেরও পুনর্গঠন। 
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের কথায় ফিরে আসা যাক। রবীন্দ্রনাথ পল্লি সংগঠনের কথা বলেছিলেন। এটি নিঃসন্দেহে তাঁর একটি মূল্যবান চিন্তা। অমিয় চক্রবর্তীকে একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন : “শিক্ষাসংস্কার এবং পল্লীসঞ্জীবনই আমার জীবনের প্রধান কাজ।” 
আজকের দিনের পরিপ্রেক্ষিতে পল্লিসংগঠন এবং “পল্লীসঞ্জীবন” নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করার সময় এসেছে। তাত্ত্বিক বিতর্কে প্রথমেই প্রবেশ না করে বরং প্রয়োগসংক্রান্ত কিছু বাস্তব সমস্যা নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক। একদিকে প্রচ্ছন্ন বেকারি অন্যদিকে জল ও জ্বালানির অভাব আমাদের বহু গ্রামের প্রধান সমস্যার তালিকায় স্থান পায়। কুমিল্লার গ্রামে গ্রামে পর্যটন কালে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ লক্ষ করলেন যে, অসংখ্য প্রাচীন পুকুর সংস্কারের অভাবে অকেজো হয়ে আছে। এটা শুধু কুমিল্লার অভিজ্ঞতা নয়, দেশের আরও নানা অঞ্চলে অবস্থা এই রকম। সামান্য মূলধন এবং গ্রামের উদ্বৃত্ত শ্রমের সহায়তায় পঙ্কোদ্ধার করে এই পুকুরগলোকে ব্যবহার্য করে তোলা যায়। পুকুরের চারপাশে সুনির্বাচিত নানা ধরনের বৃক্ষ রোপণ করে একদিকে পরিবেশের উন্নতি সাধন করা সম্ভব, অন্যদিকে ফলমূল ও জ্বালানি কাঠের সংগ্রহ বাড়ানো যায়। পুকুরে মাছের চাষ করা চলে। এই সবের জন্য প্রধান প্রয়োজন পল্লিতে নতুন সংগঠন শক্তি এবং আত্মনির্ভরতার সংকল্প। গ্রামের অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত যুবকেরা যদি এ ব্যাপারে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন তবে অন্যান্য আনুষঙ্গিক সহায়তা লাভ করা কঠিন হবে না। এরই পাশে পাশে গ্রহণ করা যায় গ্রামোন্নয়নের আরও বিভিন্ন কার্যক্রম। যেমন, চাষবাসে জৈব সারের ওপর অধিক নির্ভরতা, সুলভ শৌচালয়, স্থানীয় ভেষজনির্ভর বিকল্প চিকিৎসার ব্যবস্থা, নিজেদেরই উদ্যোগে ধর্মগোলা ও স্বল্প সঞ্চয় সংগ্রহের ব্যবস্তা, গ্রামীণ বিদ্যালয় ও পাঠাগারের পরিচালনায় স্থানীয় অভিভাব ও যুবকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, এই সবই পল্লিসংগঠনের চিন্তার ভিতর স্থান পেতে পারে। সংবিধান সংশোধনের প্রশ্নটাও এই প্রসঙ্গে ভেবে দেখা দরকার, অর্থাৎ, সংগঠনের পূর্ণতার জন্য এটা প্রয়োজন কি না সেটাই বিবেচ্য। 
পরিবর্তন প্রয়োজন জীবনদর্শনে। পুরুষশাসিত সমাজে ক্ষমতার কথাটা প্রধান ছিল। এটা শুধু নারী-পুরুষের সম্পর্কের প্রশ্নে সীমাবদ্ধ থাকেনি। আধুনিক সভ্যতায় মানুষ ও প্রকৃতির ভিতর সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একই চিন্তা প্রাধান্য পেয়েছে। মানুষ ও প্রকৃতির ভিতর একটা সংগ্রাম চলছে। এই কথাটার ওপরই জোর পড়েছে। মানুষের লক্ষ্য প্রকৃতির ওপর আধিপত্য স্থাপন করা। নারী-পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আধিপত্যের চিন্তাটা বড়ো হয়ে উঠেছে। এইখানেই আবশ্যক জীবনদর্শনের একটা মৌল সংশোধন। আধিপত্যের ভিতর দিয়ে আমরা যা পাই তা আর যাই হোক মুক্তি নয়, কোনো পক্ষেরই মুক্তি নয়। মুক্তি আসে যোগের পথে, প্রেমের স্পর্শে। প্রেমেও মুক্তি নেই যখন সেটা আক্রান্ত হয় আধিপত্যের চিন্তা অথবা দুশ্চিন্তায়। মানুষ ও প্রকৃতির ভিতর সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষমতা আর আধিপত্যের ভাবনাটা যখন প্রবল হয়ে ওঠে তখন অবারিত হয় ধ্বংসের পথ। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় এই ব্যাপারটা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এটা মূল কথা। জীবনের নানা ক্ষেত্রে, ব্যবহারিক প্রয়োজনে, ব্যবসায়িক সম্পর্ক থেকেই যাবে। তাকে মুছে ফেলা যাবে না। কিন্তু ওইটুকুতে মানবজীবনের সার্থকতা নেই। জীবন তার পরম মূল্য লাভ করে, অন্তরে মুক্তির স্বাদ আসে, সেই স্বার্থশূন্য প্রীতি থেকে যাকে বলা হয়েছে অহৈতুকী প্রীতি। এরই স্পর্শে উৎসব-অনুষ্ঠান নির্মল হয়, প্রতিদিনের আলো হয় উজ্জ্বলতর, এর অভাবে অসুন্দর। 
এই সবই আদর্শের কথা, যে আদর্শ কখনো পূর্ণতায় পৌঁছয় না, তবু পথ দেখার শক্তি ধরে। ‘শুধু প্রাণধারণের গ্লানি’তে যাঁরা জীবনের অর্থ খুঁজে পান না, তাঁদের এগিয়ে আসতে হবে এই পথে। একে তুচ্ছ করলে বিপদের সম্ভাবনা। যাকে বলা হয়ে থাকে বাস্তববুদ্ধি, শুধু তাকে আশ্রয় করে মানবসমাজ দীর্ঘদিন টিকবে না। একুশ শতক অপেক্ষা করছে সমাজের বির্বতনে এক নতুন উত্তরণের আশায়। পথের সন্ধান শুরু হয়ে গেছে দিকে দিকে। যে চিন্তা ও প্রয়াস আজ সীমিত আছে অল্প মানুষের মাঝে, আশা করা যায় তাও ক্রমে বিস্তৃত হবে বহু মানবের চেতনা। 
পল্লিসংগঠনের কথাই আমরা এখানে বিশেষভাবে বলেছি। এর কারণ সহজ। আজকের সমাজে অসুস্থ নগর ও অসুস্থ পল্লি আঘাতে-প্রত্যাঘাতে পরস্পরকে আরও অসুস্থ করে তুলছে। নতুন যে সমাজ আমরা চাই, পল্লির পটভূমিকাতেই তাকে সহজে চিত্রিত করা যায়। বঙ্গবন্ধুর এ কথা জানতেন। তবু নগরও উপেক্ষণীয় নয়। এখানে কান পেতে শোনা যায় সারা বিশ্বের নুতন নুতন চিন্তা। শেষ কথা সমন্বয়ের সাধনা।
লেখক, গবেষক, অনুবাদক












সর্বশেষ সংবাদ
সাড়ে ২১ হাজার আবেদনে ফল পরিবর্তন ৩৩১ জনের
হয়রানি করতে মামলা করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
কুবিতে পিএইচডি ও এমফিল চালুর সিদ্ধান্ত
বরুড়ায় সম্পর্কের জেরে পালিয়ে যাচ্ছে কিশোর কিশোরীরা
চৌদ্দগ্রামে বাস পুড়িয়ে ৮ যাত্রী হত্যা সাবেক রেলমন্ত্রীর ভাতিজা তোফায়েল গ্রেফতার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
তিতাসে কিশোর গ্যাংকে চাঁদা না দেয়ায় গণপিটুনি
ডায়াবেটিসের রোগীদের হাতের এবং পায়ের যত্ন জরুরী........ডা. মজিবুর রহমান
চাঁদাবাজির অভিযোগে হাতিসহ দুইজন আটক
সাবেক আইজিপি শহিদুল হকসহ ৩ জন ফের দুই দিনের রিমান্ডে
অতিদ্রুত সংস্কার করে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন-ডাঃ তাহের
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২