বশিরুল ইসলাম:
কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা ডিউটি শুরুর এক ঘন্টা পর আসেন আবার দুই
ঘন্টা আগে চলে যান। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ১২টার পর এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে।
দুপুর দেড়টায় একমাত্র চক্ষু ডাক্তার ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। তিনিও
অসুস্থ্য বলে জানা গিয়েছে। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, হাসপাতালের
প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট এবং প্রতিটি ব্যক্তির জন্য কাজ আলাদা আলাদা করে ভাগ
করে দেওয়া আছে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাজ করবে। কিন্তু কেউ দায়িত্ব অবহেলা
করলে আমি ব্যবস্থা নেব। আজকে হাসপাতালে নির্দিষ্ট সময়ের আগে ডাক্তাররা
হাসপাতাল ত্যাগের বিষয়টি সত্য আমি দেখেছি। এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেব। তিনি আরো বলেন, ডাক্তারদের এমন আচরণ দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিস হঠাৎ করে
পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তবে এই বিষয়ে আমি কঠোর ব্যবস্থা নেব। যথা সময়ে
হাসপাতালে প্রবেশ এবং কর্তব্য শেষে হাসপাতাল ত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করবো।
আমার চেষ্টার কোন ত্রুটি থাকবে না।
অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম
অনুযায়ী বহি: বিভাগ সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ডাক্তার উপস্থিতি
বাধ্যতামূলক। শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বহির্বিভাগ এই ভাবে চলবে।
জরুরী বিভাগ ২৪ঘন্টা খোলা থাকবে। শুক্রবারসহ অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে
বহির্বিভাগে সেবা বন্ধ থাকে। তবে জরুরি বিভাগ এবং আন্তর্বিভাগ সার্বক্ষণিক
চালু থাকে। এছাড়াও সরকারি স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মসূচি যেমন ইপিআই, হজসেবা,
যক্ষা পরীক্ষা ইত্যাদি সেবামূলক কর্মসুচি বহির্বিভাগে সেবা প্রদানের সময়
পালন করা হয়।
উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহে রবিার ১৭ নভেম্বর কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাহিরে রোগীর দীর্ঘ সারি কোন চিকিৎসক ছিলনা। সকাল
থেকে সারিসারি রোগী চিকিৎসার জন্য দাড়িয়ে থাকলেও ৯টা পর্যন্ত ডাক্তারের কোন
দেখা মিলেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে পরিচালক
বলেন, হাসপাতালে প্রতিটি বিভাগের কাজ ভাগ করে দেওয়া আছে। কেউ দায়িত্বে
অবহেলা করলে তিনি কি করবেন। এটি দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিস তাই এটি হঠাৎ করে
পরিবর্তন করা কঠিন। তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। তিনিও সকাল ৯টায় অফিসে
এসেছেন। এ বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন তাই একটু
দেরি হয়েছে। ক্ষেপে গিয়ে বলেন, আপনি লিখতে থাকেন। যা ইচ্ছা তাই লিখেন।
কিছুই হবে না। আমি আপনি লিখে, বলে কিছুই করতে পারবোনা। অথচ স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালের অফিস সময় শনিবার থেকে
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ।
ঐ দিন (১৭নভেম্বর)
সকাল ৯টা পর্যন্ত ১২০ নং কক্ষে ও অন্যান্য কক্ষে ৯টা বেজে গেলেও কোন
ডাক্তার আসেনি। চক্ষু ডাক্তার তিনি শ^াস কষ্টের রোগী তিনি নিজেই অসুস্থ্য
তাই আসতে দেরি হয়েছে। দি¦তীয় তলায় ও কোন ডাক্তার দেখতে পাওয়া যায়নি। নিচ
তলায় ১২৪ নং কক্ষের সামনে দাড়ানো নুরপুরের বাবুল মিয়া (৪৮) জানান, সকাল
৭টায় এসেছি। এখন ৯টা বাজে সিরিয়ালে দাড়িয়ে আছি। ডাক্তারের কোন খবর নেই।
দেবিদ্বারের তালতলা এলাকার অহিদ উদ্দিন(৪৫) জানান, আমি ৭টায় এসেছি। দীর্ঘ
লাইনে দাড়িয়ে আছি কিন্তু ডাক্তার এখনো আসেনি। দীর্ঘ লাইনে এত রোগী ডাক্তার
কখন দেখবে জানিনা। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। ১২৩নং কক্ষের সামনে দাড়ানে
নাজমা(৩০) । তিনি কুমিল্লা ইপিজেডে ব্রান্ডিক্স কোম্পানীতে চাকুরী করেন।
তিনি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সকাল সাড়ে ৭টায় এখানে সিরিয়ালে দাড়িয়েছেন। এখন
৯টা বেজে গিয়েছে কিন্তু ডাক্তার এখনো চেম্বারে আসছেন না। আমি ডাক্তার
দেখিয়ে কখন অফিসে যাব এখনো বলতে পারছিনা।
চান্দিনার তুলাতুলি এলাকার
ছালমা জানান, ভোরে ৬টায় চলে এসেছি সিরিয়ালে আগে রোগী দেখানোর জন্য। যদি
পরিক্ষা নিরিক্ষা করতে হয় তাই পরিক্ষা করিয়ে একেবারে রিপোর্ট দেখিয়ে চলে
যাব। কিন্তু সকাল সকাল এসেও কোন কাজ হচ্ছেনা। এখনো ডাক্তার আসেননি। আজকে
মনে হয় ডাক্তার দেখিয়ে আবার কাল আসতে হবে।