কুবি
প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) বর্ণাঢ্য আয়োজনে ২০২৩-২০২৪
শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নবীন বরণ
অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় নবীন শিক্ষার্থীদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
বুধবার
(২০ নভেম্বর) সকাল ৯ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের পাশের প্রাঙ্গণে
এই নবীন বরণ অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টা থেকে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার
মাধ্যমে এই আয়োজনের সমাপ্তি হয়।
ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা কার্যালয়ের
পরিচালক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মাহবুবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি
ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী। সম্মানিত অতিথি
ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞানও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
মোহাম্মদ ইসমাইল। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল,
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলাইমান, এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো.
আবদুল হাকিম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক
ড. মো. হায়দার আলী বলেন, আমি দুইজন নবীনকে ফুল দিয়েছি কিন্তু অন্তর থেকে
বরণ করে নিচ্ছি সকলকে। আজ আমি এইটুকু সাহস পাচ্ছি যে কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চাইলে অনেক কিছুই পারবে। এর সাথে একটি ঘোষণা দিতে
চাই যে আগামী বছরের প্রথম প্রান্তে কুবি শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বারের মতো
সমাবর্তন পাবে। এক বছরের মধ্যে তোমাদের চারটা বড় হল হবে। আশা করি তোমাদের
আবাসন সমস্যার সমাধান হবে। উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষা যেমন দরকার তোমাদের
তেমনি ভালো মানুষ হওয়া দরকার। সেজন্য দরকার শৃঙ্খলা। সেজন্য শিক্ষক এবং
শিক্ষার্থীদেরকে ওবিই কারিকুলামের মাধ্যমে নিয়ম-শৃঙ্খলার অধীনে নিয়ে আসার
চেষ্টা করছি। আমাদের অনেক শিক্ষক উচ্চমানের রিসার্চের সাথে আছেন। উনাদের
মাধ্যমেই আমরা পিএইচডি এবং এমফিল চালু করবো।
তিনি আরও বলেন, কেউ
জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নয়, আমি নিজেও না। তাই আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল
থাকবো, শৃঙ্খলার মধ্যে থাকবো এবং এভাবেই আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি
বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলবো।
নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, আজকে যারা
ফ্রেশার আসছো তোমাদের সবাইকে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও অভিনন্দন জানাই। বদ্ধ পরিবার
থেকে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত পরিবেশে আসছো, চলার পথে যেমন ভালো জিনিস
দেখবে, তেমনি খারাপ। অনেক কিছুও দেখবে। আমরা কুবি ও নোবিপ্রবি র্যাগিং,
মাদকের ভয়াবহতা এবং লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি।
আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চর্চা হবে আমাদের দেশের শিক্ষানীতি, পাবলিক
পলিসি, ফরেইন পলিসি, কেমন হবে। একজন মানুষ যখন ন্যায় অন্যায়ের প্রভেদ তৈরি
করতে পারবে তখনই বিশ্ববিদ্যালয় স্বার্থক। কাজেই আজকে যারা তরুণ আছো আমি
বিশ্বাস করি তাদের মেধা, মননকে ও ক্রিয়েটিভিটিকে কাজে লাগিয়ে শুধু
কুমিল্লাকে নয় সারা বাংলাদেশকে পরিবর্তন করতে পারবে।
বিশেষ অতিথির
বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, প্রথমেই আমি জুলাই
বিপ্লবের শহীদদের স্মরণ করছি, জুলাই বিপ্লবের প্রেরণা নিয়ে নতুন আঙ্গিকে
আমরা নবীনদের বরণ করছি। দেশের শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ
সকল আন্দোলনে স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। তোমরা অনেকেই জুলাই বিপ্লবে
অংশগ্রহণ করেছো। সূতরাং তোমরা এই প্রেরণা কাজে লাগিয়ে কল্যাণকর কাজ করবে।
আশা করি নবীন শিক্ষার্থীরা দেশ গঠনেও বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখবে। এতাদিন তোমরা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে কারো না কারো অভিভাবকত্বে
ছিলে, এখন তোমরা স্বাধীন, এই স্বাধীনতার সুযোগ কাজে লাগাও। আমাদের
বিশ^বিদ্যালয়ের বয়স বেশী নয়, তবে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের
মঙ্গল করতে। কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের আশপাশের বিভিন্ন বিহারে প্রাচীন কালে
জ্ঞান চর্চা করা হতো। আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি জ্ঞান চর্চা
কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবো।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান
বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিশন এবং ভিশন বাস্তবায়নে কিছু দিক
নির্দেশনা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে
ফার্স্ট ইয়ার শিক্ষার্থীদের সাধারণত ডেম কেয়ার বলা হয়। মাধ্যমিক এবং উচ্চ
মাধ্যমিকে দীর্ঘ সময় শৃঙ্খলার মধ্যে থাকার পর, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে হয়তো মনে
হতে পারে যে তোমরা ফ্রিডম অর্জন করেছ। তবে সেই ফ্রিডমের মাঝেও অনেক কিছু
শিক্ষণীয় এবং করণীয় বিষয় রয়েছে। সবার আগে, তোমাদের মধ্যে শৃঙ্খলা এবং
দায়িত্বশীল আচরণের শিক্ষা থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মূল উদ্দেশ্য
একাডেমিক অর্জন হলেও, এর বাইরেও সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করার
অনেক সুযোগ রয়েছে।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো: আবদুল হাকিম বলেন, আমি প্রথমে
বিপ্লবে যারা শহীদ হয়েছে তাঁদের স্মরণ করছি। পাশাপাশি কুবির একমাত্র শহীদ
আবদুল কাইয়ুমের জান্নাত কামনা করছি। জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর র্যাগিং
শব্দটি অত্যন্ত নিন্দিত। এর বিরুদ্ধে আমরা সাময়িক বহিষ্কারসহ অনেক ব্যবস্থা
নিচ্ছি। আমরা আশা করি আগামীতে কুবিতে র্যাগিং থাকবে না। মাদক থাকবে না।
পিতামাতা অনেক আশা নিয়ে তোমাদের এখানে ভর্তি করিয়েছে। তাদের সন্তানটা
প্রতিষ্ঠিত হোক। তোমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছো তোমাদের সময় এসেছে
তোমাদের মাথাকে কাজে লাগানোর।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিভিন্ন
অনুষদের ডিন, হল প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় প্রধান, বিভিন্ন বিভাগের
শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।