মানুষ রূহের জগতে আল্লাহতায়ালাকে একমাত্র প্রতিপালক
হিসেবে স্বীকার করে এসেছে। আল্লাহতায়ালা বিষয়টি পবিত্র কোরআনে কারিমের
মাধ্যমে মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
তাঁকে রব হিসেবে মেনে নেওয়ার
দ্বারা তাঁর যাবতীয় বিধি-নিষেধ মেনে চলা মানুষের ওপর অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
অধিকন্তু আল্লাহতায়ালার আনুগত্য করা একটি যৌক্তিক বিষয়ও বটে। যে ব্যক্তি
তাঁর বিধি-নিষেধ যথাযথভাবে পালনে সক্ষম হবে, তার জন্য রয়েছে অনন্তকালের
অফুরন্ত নেয়ামত বেহেশত।
পক্ষান্তরে যে উদাসীন, তার জন্য রয়েছে কঠিন
আজাব। আদেশ পালনে অলসতা বা নিষেধ করা বিষয় থেকে বিরত না হওয়া-উদাসীনতা যে
প্রকারই হোক না কেন এর কোনোটিই আল্লাহতায়ালার অজানা থাকে না। এমন কি মানুষ
পাপ করলে তার বিরুদ্ধে চারটি সাক্ষী প্রস্তুত হয়ে যায়।
প্রথম সাক্ষী:
পাপ করার জায়গাটি। যেমন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘সেদিন জমিন নিজের
ভেতরে রাখা যাবতীয় সংবাদ বলে দেবে। ’ সূরা যিলযালের উক্ত আয়াতের তাফসিরে
নবী (সা.) বলেন, যে জায়গায় মানুষ আমল করে সেই স্থানটি তার বিরুদ্ধে সাক্ষী
হয়ে থাকেবে।
দ্বিতীয় সাক্ষী: মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। আল্লাহতায়ালা
ইরশাদ করেন, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর এটে দেব। আর তাদের হাতগুলো আমার সাথে
কথা বলবে এবং তাদের পাগুলো তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’ -সূরা ইয়াসিন :
৬৫
মানুষ যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে গুনাহ করে কেয়ামতের দিন সেটি তার
বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) বলেন, সর্বপ্রথম ডান উরু
সাক্ষ্য দেবে। -তাফসির ইবনে কাসির
তৃতীয় সাক্ষী: আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘দু’জন সম্মানিত ফেরেশতা, তোমরা যা করো তারা তা সব জানে।’ -সূরা ইনফিতার : ১১
প্রত্যেক
মানুষের সঙ্গে সর্বদা দু‘জন ফেরেশতা নিয়োজিত রয়েছেন। তারা সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তির যাবতীয় আমল সংরক্ষণ করে রাখেন। তাদের একজন লিখে রাখেন নেক আমল, আর
অপরজন সংরক্ষণ করেন বদ আমল। কারো কোনো আমলই তাদের অজানা থাকে না।
চতুর্থ
সাক্ষী: মানুষের আমলনামা। ফেরেশতারা যে আমলনামায় মানুষের যাবতীয় আমল লেখেন
সেটিও তার জন্য সাক্ষী হয়ে থাকে। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যখন
আমলনামা উন্মুক্ত হবে, ... তখন প্রত্যকেই জেনে নেবে সে কি উপস্থিত করেছে?’
-সূরা তাকবির : ১০
এখন কথা হলো, গুনাহ করে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষী দাঁড়
করালে এটা থেকে বাঁচার উপায় কী? কীভাবে সাক্ষীদের নিবৃত করা সম্ভব? এ বিষয়ে
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলে দিয়েছেন একটি সরল পথ। আর তা হলো- ‘তওবা’ করা।
তওবার মাধ্যমে মানুষ তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ থেকে পবিত্র হতে পারে।
তবে
তওবা কবুল হওয়ার কিছু শর্ত রয়েছে। কৃত গুনাহগুলো থেকে সম্পূর্ণভাবে
নিবৃত্ত থাকতে হবে। গুনাহে লিপ্ত থেকে তওবা করলে চলবে না। কৃতকর্মের জন্য
লজ্জিত হতে হবে। আগামীতে কখনো এমন গুনাহ আর না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে
হবে। দৃঢ় সংকল্পের পরও যদি কখনো আবার সেই গুনাহটি হয়ে যায়, তাহলে এটা তওবা
কবুলের প্রতিবন্ধক নয়। এমন হয়ে থাকে মূলত মানবিক দুর্বলতার কারণে। বস্তুত
আল্লাহতায়ালা এমন উপদান দিয়েই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এই দুর্বলতাকে তিনি
ক্ষমা করবেন। এ বিষয়ে হাদিস এসেছে, কোনো ব্যক্তি যদি বারবার তওবা করে আর এ
ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করে যে, সে আর কখনো গুনাহ করবে না, তারপরও যদি তার
দ্বারা গুনাহ হয়ে যায়, তাহলে সে বারংবার গুনাহকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে না।
-মেশকাত: ২০৪
এভাবে তওবা করলে আল্লাহতায়ালা তওবা কবুল করেন এবং
গুনাহগারের বিরুদ্ধের সাক্ষী চতুষ্টয়কে গুনাহের কথা ভুলিয়ে দেন। হাদিসে
আছে, ‘বান্দা যখন তওবা করে আল্লাহতায়ালা তখন তার কৃত গুনাহের কথা
কিরামান-কাতেবিন ফেরেশতাদ্বয়কে ভুলিয়ে দেন। এমনিভাবে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
এবং গুনাহ করার স্থানটিকেও গুনাহের কথা ভুলিয়ে দেন। এমনকি সে তার বিরুদ্ধে
যাবতীয় সাক্ষ্য-প্রমাণমুক্ত হয়ে আল্লাহতায়ালার সামনে উপস্থিত হবে। ’ -জামে
সগির :১/২১
লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, আল্লাহতায়ালা বান্দার গুনাহ মিটিয়ে
দেওয়ার জন্য ফেরেশতাদেরও ব্যবহার করেননি। বরং নিজেই কাজটি করেছেন। যেন
ফেরেশতাদের সামনে মানুষ লজ্জিত না হয়। তাঁরা যেন এ কথা বলে খোটা না দিতে
পারেন যে, তোমরা বেহেশতে যাওয়ার অনুপযুক্ত ছিলে। আমরা তোমাদের গুনাহ মিটিয়ে
দিয়েছি বলে তোমরা আজ বেহেশতে প্রবেশের উপযুক্ত হয়েছ। এভাবে আল্লাহ মানুষকে
এমন লজ্জা থেকে রক্ষা করেছেন।
আলেমরা বলেন, তিনটি কাজ করলে গুনাহ
পরিহার করার সহজ হয়। এক. গুনাহ ত্যাগের সাহস করা, দুই. নিজে দোয়া করা ও
তিন. আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দ্বারা দোয়া করানো। দোয়া করার
ক্ষেত্রে কোরআনে কারিম ও হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া ভালো।