আখেরাতে ঈমানদারদের মধ্যে যারা জান্নাত লাভ করবে, তাদের সন্তানরাও যদি ঈমানদার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে এবং জান্নাত লাভ করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা জান্নাতে তাদের একত্র করবেন, একসাথে রাখবেন। এটা জান্নাতের অন্যতম নেয়ামত ও পুরস্কার। সন্তানদের আমল যদি কমও হয়, তারা যদি জান্নাতে মর্যাদার স্তরে পিছিয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার রহমতে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে তাদেরকে বাবা-মায়ের কাছে নিয়ে যাবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
আর যারা ঈমান আনে এবং তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানের সাথে তাদের অনুসরণ করে, আমরা তাদের সাথে তাদের সন্তানদের মিলন ঘটাব এবং তাদের কর্মের কোন অংশই কমাব না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার কামাইয়ের ব্যাপারে দায়ী থাকবে। (সুরা তুর: ২১)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদের সন্তান-সন্ততিকেও তাদের সম্মানিত পিতৃপুরুষদের স্তরে পৌঁছে দেবেন, যদিও তারা কর্মের দিক দিয়ে সেই স্তরের যোগ্য না হয়- যেন সন্তানের পেয়ে বাবা-মায়ের চোখ শীতল হয়।
জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করে তার বাবা মা, স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে যে, তারা কোথায় আছে? জবাবে বলা হবে যে, তারা তোমার মর্যাদার স্তর পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। তাই তারা জান্নাতে আলাদা জায়গায় আছে। এই ব্যক্তি আরজ করবে, হে আল্লাহ! দুনিয়াতে আমি নিজের জন্যে ও তাদের সবার জন্যে আমল করেছিলাম। তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নির্দেশ হবে, তাদেরকেও জান্নাতের এই স্তরে একসাথে রাখা হোক।
কোরআনের আরেক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেন,
যারা তাদের রবের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সবর করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক প্রদান করেছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভাল কাজের মাধ্যমে মন্দকে দূর করে, তাদের জন্যই রয়েছে আখিরাতের শুভ পরিণাম। তা হল স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে। আর তাদের পিতৃপুরুষ, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানাদির মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও। আর ফেরেশতারা সব দরজা দিয়ে তাদের কাছে হাজির হয়ে সংবর্ধনা জানাবে। (সুরা রা’দ: ২২, ২৩)
এ দুটি আয়াত থেকেও বোঝা যায় দুনিয়াতে যারা ঈমানদার হবে ও নেক কাজ করবে, আল্লাহ তাআলা তাদের জান্নাত দান করবেন এবং সেখানে তাদের ঈমানদার আত্মীয়-স্বজনদেরও তাদের সাথে মিলিত করবেন। কারো মর্যাদার স্তর কম হলে আত্মীয়দের আবেদনে আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে তার মর্যাদার স্তর বাড়িয়ে দেবেন।
যারা ঈমানদার শুধু তাদের ক্ষেত্রেই এটা ঘটবে। বাবা, মা, ছেলে-মেয়ে বা অন্যান্য আত্মীয়রা কাফের হলে তারা জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ পাবে না।
কোরআনের আরেক জায়গায় এসেছে, আরশ বহনকারী ফেরেশতারা মুমিনদের জন্য দোয়া করেন আল্লাহ তাআলা যেন মুমিনদের জান্নাত দান করেন এবং তাদের নেককার বাবা-মা ও সন্তানদেরও তাদের সাথে মিলিত করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
যারা আরশকে ধারণ করে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবিহ পাঠ করে এবং তার প্রতি ঈমান রাখে। আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলে যে, ‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের আজাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন। হে আমাদের রব, আর আপনি তাদেরকে স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করান, যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন। আর তাদের বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে তাদেরকেও। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়।’ (সুরা গাফির: ৭-৮)