শুক্রবার
(২২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা। লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের খুন্তা
গ্রাম। লাকসাম-মুদাফরগঞ্জ সড়কের পাশে বেশ কিছু দোকান-পাট। ছোটখাটো বাজার।
একটি দোকানের সামনে নারী-পুরুষের জটলা। কাছে যেতেই দেখা গেলো, সেখানে
সাধারণ মানুষের জন্য নিত্যপণ্যের বাজার বসিয়েছেন ওই এলাকার কিছু প্রবাসী,
চাকুরীজীবী এবং উদ্যেমী যুবক। 'খুন্তা ফাউন্ডেশন' নামে তাঁদের একটি সামাজিক
সংগঠন রয়েছে। মূলত; ওই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্বল্প মূল্যে সাধারণ মানুষের
জন্য নিত্যপণ্যের বাজার বসিয়েছেন তাঁরা। কর্মসূচির নাম 'পাইকারি যেই দামে
ক্রয় সেই দামে বিক্রি'।
মুহূর্তের মধ্যেই সেখানে মানুষের ভিড় বাড়তে
থাকে। সবাই এসেছেন স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে। প্রতি লিটার সয়াবিন তৈল
১৬০ টাকা, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৬০ টাকা, প্রতি কেজি
আটা ৪০ টাকা, মুসরের ডাল প্রতি কেজি ১০০, ফুলকপি প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, প্রতি
কেজি বেগুন ৪৫ টাকা, প্রতি কেজি মুলা ৪০ টাকা।
খুন্তা ফাউন্ডেশন
'পাইকারি যেই দামে ক্রয় সেই দামে বিক্রি' কর্মসূচির মাধ্যমে গত ১ নভেম্বর
থেকে এলাকার সাধারণ মানুষের নিকট স্বল্প মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করছেন।
এভাবে
বাজারের চেয়ে অনেক কম মূল্যে এখানে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য। যাঁরা
এসেছেন, সবাই ফাউন্ডেশনের সদস্যদের সহায়তায় কম মূল্যে সবজিসহ নিত্যপণ্য
কিনে ঘরে ফিরছেন। জনতার বাজার থেকে হাসিমুখে বের হয়ে খুশী মনে বাড়ি ফিরছেন
ক্রেতারা।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, 'পাইকারি যেই
দামে ক্রয় সেই দামে বিক্রি' কর্মসূচির আওতায় ওই স্বল্প মূল্যের বাজার
বসিয়েছেন 'খুন্তা ফাউন্ডেশন'। এই কর্মসূচির উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশনের
সদস্যবৃন্দ।
'খুন্তা ফাউন্ডেশন'র সভাপতি ইতালি প্রবাসী মো. ফারুক হোসেন
জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে যাওয়ায়
আমরা এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। শত শত মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষ
বাজার মূল্যের প্রায় অর্ধেক দামে তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পেরে মহা
খুশি।
ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম সোহেল জানান, আমাদের এলাকার
লোকজন স্বল্প আয়ের মানুষ। তাঁদের সহায়তা দিতেই আমাদের এই আয়োজন। যতদিন
শাক-সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাজার দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসবে ততো
দিন পর্যন্ত আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
স্বল্প দামে সবজি কিনতে
পেরে আনন্দ প্রকাশ করেছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা রৌশনারা বেগম। তিনি বলেন,
‘আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক। শাকসবজিও এখন বড়লোকের খাবার। অনেক দিন পর আজ
এক লিটার সয়াবিন তৈল ১৬০ টাকা, এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, এক কেজি আলু ৬০
টাকা, এক কেজি আটা ৪০ টাকা, আধা কেজি গ্রাম মুসরের ডাল ৫০ টাকা, কেজি
ফুলকপি ৬৫ টাকা, এক কেজি বেগুন ৪৫ টাকা এবং এক কেজি মুলা ৪০ টাকায় সর্বমোট
৫৪০ টাকায় অনেক জিনিস কিনলাম। যাহা বর্তমান বাজার মূল্যের হিসেবে অর্ধেক।
আমরা চাই, খুন্তা ফাউন্ডেশনের এই কর্মসূচি চলমান থাকুক। এরকম বাজারের পরিধি
আরও বাড়লে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ধীরে ধীরে ভেঙে পড়বে।’
ওই
এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব আবদুল হক বলেন, ‘সবজিগুলা টাটকা। বর্তমান বাজারে এতো
কম দামে সবজি কিনতে পারবো চিন্তাও করিনি। ৪৫ টাকা দিয়া বেগুন, ৬৫ টাকায়
ফুলকপি, ৫০ টাকায় মুসরের ডাল এবং ১৬০ টাকায় সয়াবিন তৈল কিনছি। ছেলেগুলোর
জন্য দোয়া করি। আল্লাহ যেনো তাদেরকে ভালো রাখেন।’
অনেক দিন পর ৫৪০ টাকায় সবজিসহ আট পদের নিত্যপণ্য কিনেছেন জানিয়ে মোস্তফা কামাল নামের আরেক ক্রেতা
বলেন,
এখানে বাজার দামের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দরে সবজি বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপণ্যেরও
দাম কিছুটা কম। এ কার্যক্রম চলমান থাকলে সাধারণ মানুষ অনেক উপকৃত হবেন।
এই
কর্মসূচির উদ্যোক্তা খুন্তা ফাউন্ডেশন'র সদস্য শাহনূর রনি জানান, চার
সপ্তাহ ধরে আমাদের এ কার্যক্রম চলছে। আমরা গড়ে প্রায় তিন শতাধিক মানুষ
ক্রয় করতে পারবেন, এমন পরিমাণে বিভিন্ন সবজিসহ নিত্যপণ্য বিক্রি করছি।
সামনে এই পরিধি আরও বাড়বে।
তিনি জানান, গত ১ নভেম্বর থেকে খুন্তা এলাকায়
আমাদের এ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। সকাল ৯ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত এ
বিক্রয় কার্যক্রম চালু থাকে। এলাকার শত শত নারী-পুরুষ পৃথক পৃথক লাইনে
দাঁড়িয়ে শাক-সবজিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করছেন।
পাইকারি যেই দামে ক্রয়, সেই দামেই বিক্রি মানুষের হাতে নিত্যপণ্য তুলে দিচ্ছি। মানুষের মুখে হাসি ফুটছে, এতেই আমরা আনন্দিত।