গত দেড় দশকে লুটপাটের চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছিল
বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন
সংস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারায় প্রতিদিনই বেরিয়ে আসছে অবিশ্বাস্য
দুর্নীতির সব খবর। সাবেক মন্ত্রী, এমপি, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ অনেক
প্রভাবশালী ও উচ্চ পদধারীদের দুর্নীতির খবরে মানুষ অবাক হচ্ছে। সন্দেহজনক
লেনদেন ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে প্রতিদিনই জব্দ করা হচ্ছে অনেকের
ব্যাংক হিসাব।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৫
আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট
(বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
যৌথ প্রচেষ্টায় ৩৪৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক
অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। এসব অ্যাকাউন্টে পাওয়া গেছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি
টাকা। বিদেশে পাচার করা অর্থের ব্যাপারে অনুসন্ধানের পাশাপাশি অর্থ ফিরিয়ে
আনার উদ্যোগও চলমান রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
প্রধান
উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা বিভিন্ন সময় এ নিয়ে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকারের
কথা তুলে ধরেছেন। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের
রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের সময় তারা পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে
সংশ্লিষ্ট দেশ ও সংস্থাগুলোর সহায়তা চেয়েছেন। এ ছাড়া বিএফআইইউ বিভিন্ন
ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থসম্পদ সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন দেশে চিঠি
দেওয়া শুরু করেছে। পাচারের অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের
গৃহীত পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেছেন দেশের বিশিষ্টজনরা।
সেন্টার ফর পলিসি
ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যারা ব্যাংক থেকে ঋণ
নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে তাদের সম্পদ দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে সর্বোচ্চ
চেষ্টা করা উচিত।’ সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের
(টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ
সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে।
বিএফআইইউয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অর্থপাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ
ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আপসহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রথমত, পাচারের সঠিক
তথ্য উদ্ধার, পরিমাণ নির্ণয় এবং পরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দিকে আগানো হবে। এ
ক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা জোট এগমন্টের
সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ১৭৭টি দেশ। এই জোটের পাশাপাশি আরো কিছু দেশের সঙ্গে
দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে বিএফআইইউয়ের। আমাদের বিশ্বাস, মুদ্রাপাচারবিরোধী
সব সংস্থা আন্তরিক হলে এবং সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিলে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে
আনা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে মুদ্রাপাচারের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক
শাস্তির আওতায় আনা হবে।