সারাদেশেই
চলছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিনই ডেঙ্গু বা ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে সরকারি
হাসপাতাল ও প্রাইভেট চেম্বারগুলোতে বাড়ছে রোগীর চাপ। সাধারণত ডেঙ্গু
আক্রান্ত রোগী বা বর্তমান সময়ে জ্বরাক্রান্ত রোগীদের ঔষধের পাশাপাশি প্রচুর
পরমাণে তরল খাবার ও ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট
চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের দেওয়া এই পরামর্শমতে কুমিল্লায় চিকিৎসার প্রয়োজনে
ঔষধের পাশাপাশি বিভিন্ন বজার বা ফুটপাত থেকে সংগ্রহ করে স্বজনরা ডাবের
পানি খেতে দিচ্ছেন রোগীদের। তবে রোগীদের ডাবের পানি দিলেও স্বাস্থ্য
বিভাগের পরামর্শ না মেনে ডাবের খোসা ফেলছেন যত্রতত্র। এতে পরিত্যক্ত ডাবের
খোসার জমানো পানি থেকে ডেঙ্গুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও স্থানীয় সচেতন মহল।
সরেজমিনে কুমিল্লার শহরের
বিভিন্ন অলি-গলিতে ভ্রাম্যমাণ ডাবের দোকান ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ঘুরে
দেখা গেছে, ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকায় ও মৌসুমি রোগ জ্বর ও ডায়রিয়াজনিত
অসুস্থতার কারণে বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় ডাবের দোকানগুলোতে বিক্রি
বেড়েছে। কেউ কেউ আস্ত ডাব কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বাড়িতে
নিয়ে ডাব কাটার ঝামেলা এড়াতে কেবল ডাবের পানি নিতে সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন
প্লাস্টিকের বোতল। তবে সারাদিন ডাব বিক্রি শেষে ডাব বিক্রেতারা ডাবের খোসা
ফেলছেন সড়কের পাশে, আবার কেউ কেউ ফেলছেন যত্রতত্র। অন্যদিকে যারা ডাব বাড়ি
নিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশরাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া সঠিক নিয়ম
মানছেন না। এসব ডাবের খোসা ফেলছেন বাসা-বাড়ির আশপাশেই। ফলে সড়কের পাশে ও
বাড়ির আশেপাশে যত্রতত্র পড়ে থাকা এসব ডাবের পরিত্যক্ত খোসায় জমা পানির
কারণে ডেঙ্গুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ ব্যপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন
মুবিন বলেন, এখন সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে। ডেঙ্গুর পাশাপাশি এখন
অনেকেই মৌসুমি নানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন। এমতাবস্থায় চিকিৎসকরাও রোগীদের
ডাবের পানি পানের পরামর্শ দিচ্ছেন। ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ
লবণ। মানুষের রোগপ্রতিরোধে ডাবের পানি বেশ উপকারী। ডাবের পানি অনেক জটিল
রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে থাকে।
তিনি বলেন, তবে আমাদের অসচেতনতায় ডাবের
পরিত্যক্ত খোসা ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়াতে ও পরিবেশ দূষণে সাহায্য করছে। এসব
ডাবের খোসা থেকে পানি বের করার পর খোসা ছোট ছোট টুকরো করলে এতে আর পানি
জমার সুযোগ থাকবে না এবং ডেঙ্গুর ঝুঁকিও অনেকাংশে কমে আসবে। এছাড়া এমন
বস্তু যেখানে পানি জমে থাকতে পারে তা যত্রতত্র না ফেলে পরিবেশ সুরক্ষিত
রেখে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ বিষয়ে আমাদের সকলকে যার যার অবস্থান
থেকে আরও বেশি সচেতন হওয়া জরুরি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এ
ব্যপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ) স ম আজহারুল
ইসলাম বলেন, যত্রতত্র ডাবের খোসা ফেলা হচ্ছে, এটা প্রশাসনের নজরে এসেছে। এ
বিষয়ে কয়েকবার বিভিন্ন ডাব বিক্রেতাকে সরানো হয়েছে এবং তাদের সতর্ক করা
হয়েছে। ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
তিনি আরো বলেন,
তবে এ বিষয়ে ভোক্তা পর্যায়ে ব্যাপক জনসচেতনতা প্রয়োজন। নতুবা এ সমস্যা থেকে
পুরোপুরিভাবে উত্তোরণ সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে যৌথভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা
বাড়াতে শিগগিরই পুরো এলাকায় জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে।