গত ১৫ বছরে দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার জন্য দেশে অনেক কর্মসূচি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির নামে সরকারের পক্ষ থেকেই লুটপাটের এই সুবন্দোবস্ত করে দেওয়া হয় বিগত সরকারের আমলে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্র মানুষের জন্য চালু করা হয়েছিল বিভিন্ন ধরনের ভাতা। কিন্তু শুরু থেকে এই ভাতার তালিকা নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ।
দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অর্থের বিনিময়ে অনেক সচ্ছল মানুষ তালিকাভুক্ত হয়ে তুলে নিয়েছে ভাতা। এই তালিকায় অন্তত অর্ধকোটি সচ্ছল মানুষের নাম রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর তালিকাটি যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে ভাতা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে প্রকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
হতদরিদ্র মানুষের আর্থিক দুরবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বেশ কিছু ভাতা কার্যক্রম চালু করে। অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা ভাতাভোগীদের তালিকা নিয়ে দলীয়করণের অভিযোগ থাকায় বর্তমানে ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অনেক সচ্ছল ব্যক্তি ভাতার তালিকায় নিজের নাম তুলে দীর্ঘদিন ধরে ভাতা উত্তোলন করছিল। অনেকে ঘুষ দিয়েও তালিকাভুক্ত হয়ে ভাতা তুলে নিচ্ছিল।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে ইউনিসেফের এক জরিপে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণায়ও এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় বলে খবরে প্রকাশ।
দেশের মোট জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নানা কারণে এখনো দারিদ্র্যঝুঁকিতে রয়ে গেছে। যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে, সেই জনগোষ্ঠী ছাড়াও দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে অবস্থানকারীরাও বিবিধ কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। দরিদ্র ও প্রায় দরিদ্র মানুষের পক্ষে অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকি ও বিপর্যয় মোকাবেলা করা সম্ভব হয় না।
এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় দরিদ্র ও ঝুঁকিপ্রবণ জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করতেই সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি নেওয়া হয়। এসব কর্মসূচির আওতা ও পরিধি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সত্যি, তবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশ এখনো এসব কর্মসূচির আওতায় আসেনি, নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচিগুলো থেকে প্রাপ্ত গড় সুবিধার পরিমাণ খুবই কম। আবার সেই কর্মসূচি যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরো বেশি সমস্যার সম্মুখীন হবে।
ভাতা না পাওয়ায় অনেক হতদরিদ্র পরিবার বিপাকে পড়েছে। সময়মতো ভাতা না পাওয়ায় ওই সংকট আরো বেড়েছে। ভাতাভোগীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত দরিদ্রদের তালিকা চূড়ান্ত করে দ্রুত ভাতা দেওয়া শুরু করা হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।