কুমিল্লার
ব্রাহ্মণপাড়ায় একবছরে কীটনাশক ও কেড়ির ট্যাবলেট পানকরে আত্মহত্যার চেষ্টা
করেছে ২৪৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যাই বেশি। গতকাল রবিবার
( ২৪ নভেম্বর ) ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে এ তথ্য
নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, প্রেম ভালোবাসা,পারিবারিক কলহ,
ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিক দুশ্চিন্তা ও স্বজনদের সঙ্গে অভিমান করে উপজেলার
বিভিন্ন এলাকা থেকে কীটনাশক ও কেড়ির ট্যাবলেট খেয়ে গত বছরের নভেম্বর থেকে
চলতি ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে
চিকিৎসা নিয়েছে ২৪৩ জন নারীপুরুষ। আগত এসব রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে
উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। এ
ছাড়াও আত্মহত্যার চেষ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের থানা সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত
হওয়া যায়। বেসরকারি হিসেবে তা দুই থেকে তিন গুণ হবে বলে জানায় স্থানীয়রা।
সচেতন
মহল জানান, কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও উদাসীনতা কারণে মুদি দোকানে দীর্ঘদিন
যাবত বিক্রি হচ্ছে কীটনাশক। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে নারী-পুরুষ
ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকার সাধারণ জনগণ। এছাড়াও কীটনাশক সহজলভ্য হওয়ায় তরুণ
তরুণীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। চলতি বছর উপজেলায় ২২ জন আত্মহত্যা
করেছেন, সরকারী হিসেবের বাহিরেও আত্মহত্যা পরিমান দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হবে
বলে জানান এলাকাবাসী। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় বেশির ভাগই তরুনী আত্মহত্যা
করেন তাদের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর। পরিবারের সাথে অভিমান করে আত্মহত্যা করেন
বলে জানা গেছে। উপজেলায় সবকয়টি ইউনিয়নে দীর্ঘদিন যাবত কীটনাশকের
দোকানগুলোতে রেজিস্ট্রেশন বিহীন তরুণ -তরুনী, গৃহবধূ, ছাত্র -ছাত্রী ও
সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছে কীটনাশক। সহজলভ্য হওয়ায় তারা বিষপান করে
আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের
হাটবাজার গিয়ে দেখা যায়- মুদি মনোহরিসহ শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খাবার রয়েছে
এসব খাবারের সাথে দোকানের গ্যালারিতে সাজানো রয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কৃষি
কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক।
এ ব্যপারে নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক সিদলাই বাজারের কয়েকজন লোক জানান,বাজারে অনেক মুদি দোকানে কীটনাশক
বিক্রি করার অনুমতি না থাকলেও তিনি দীর্ঘ দিন যাবত ক্ষমতা দেখিয়ে এসব
কীটনাশক বিক্রি করে থাকেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুমিল্লা
জজকোর্টের আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া
বলেন,কীটনাশক বিক্রির জন্য কিছু শর্ত সাপেক্ষে কীটনাশক বিক্রির লাইসেন্স
দেওয়া হয়। এবং বিক্রয়কৃত কীটনাশক বিক্রয় রেজিস্ট্রারে কেতার নাম লিপিবদ্ধ
করতে হয়, কোনো অবস্থাতে শিশু ও পাগলের নিকট বিক্রয় করতে পারবে না। এখানে
আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে মুদি দোকানে কীটনাশক বিক্রি করছে। যেখানে
মানুষের খাবার আছে সে সব দোকানে কোনো ধরনের সার ও কীটনাশক বিক্রি করার কোনো
সুযোগ নেই। এখানে লাইসেন্স দেওয়ার কোনো বিধান নেই। যারা এই প্রক্রিয়ার
সাথে জড়িত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, কীটনাশক
দোকানের লাইসেন্স বাতিল করতে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এ
ব্যপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ রানা বলেন, যত্রতত্র এবং
লাইসেন্সবিহীন ভাবে কীটনাশক বিক্রির বিরুদ্ধে আমরা উপজেলা প্রশাসনের
সহায়তায় কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে আসছি। এছাড়া কীটনাশক বিক্রেতাদের নির্দেশনা
দেওয়া আছে কীটনাশক বিক্রির একটা সুনির্দিষ্ট রেজিস্ট্রার অনুসরণ করার জন্য
যেখানে কৃষকের তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এছাড়া মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন,
শিশু,অপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের কাছে কীটনাশক বিক্রি না করার জন্য নির্দেশনা
দেওয়া আছে। আমরা সবসময় কৃষকদের কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে পরামর্শ
দিয়ে আসছি।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার
পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আবু হাসনাত মোঃ মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, কীটনাশক
ডিলাররা সতর্কতার সহিত তা যথাযথ কৃষকের কাছে বিক্রি করতে হবে। প্রেম,
ভালোবাসা, বিচ্ছেদ, পরকীয়া ও পারিবারিক কলহের কারণে বিষপান করে আত্মহত্যার
চেষ্টা করে। যারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তাদেরকে সামাজিকভাবে বুঝিয়ে
আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যেতে
পারে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ দেলোয়ার
হোসেন জানান, কীটনাশক যথাযথ জায়গায় বিক্রি করতে হবে। পরকীয়া পারিবারিক
কলহের কারণে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। অচিরেই সামাজিকভাবে তা
প্রতিরোধ করতে হবে।
এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স, ম,আজহারুল
ইসলাম বলেন, বিষ পানের বিষয়টি এলার্মিং। সাধারণ মানুষের কাছে কীটনাশক
সহজলভ্য হয় অনেকভাবে। এরমধ্যে নির্ধারিত দোকান ছাড়াও বিভিন্ন দোকানে লুকিয়ে
লুকিয়ে কীটনাশক বিক্রি করা হয়। অথচ এসব কীটনাশক বিক্রি করার কথা ডিলারদের।
গত এক বছরে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ৮ দোকানিকে এ ধরনের কীটনাশক
বিক্রির দায়ে জরিমানাসহ সতর্ক করেছে।
তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে
সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা অত্যন্ত জরুরী। এছাড়াও এ বিষয়ে মসজিদের ইমাম
শিক্ষক ও সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষ যেন এই পথটা বেছে না নেয়
সেলক্ষ্যে মানুষের নিজের জীবনের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করতে কাছের মানুষদের
দেওয়া ভরসার কোনো বিকল্প নেই। কারণ এটা হচ্ছে মানুষের মানসিক সমস্যা।