কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে ওষুধের
বাজার-সর্বত্রই দাম বাড়ছে। ভোক্তার স্বস্তি কোথাও নেই। এর মধ্যে সবচেয়ে
খারাপ অবস্থা ওষুধের বাজারে। এখানে বাস্তবে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
একেকটি
কম্পানি বছরে কয়েকবার করেও দাম বাড়াচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে গত তিন মাসে ৫০টির বেশি ওষুধের দাম গড়ে ২৯
শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১১০ শতাংশ বেড়েছে অ্যানাফ্লেক্স ম্যাক্স
ট্যাবলেটের দাম। আটটি ওষুধের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি।
এর মধ্যে
রয়েছে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী ব্যথানাশক, ভিটামিন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ,
হৃদরোগ, চর্ম ও প্রদাহজনিত ওষুধ। ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে ১১টির ওষুধের
দাম। ১০ থেকে ৩০ শতাংশ দাম বেড়েছে ২২টির। ৯টি ওষুধের দাম বেড়েছে ৬ থেকে ১০
শতাংশ।
এমনিতেই অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে রোগীদের ব্যক্তিগত
চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। গড়ে তা ৭০ শতাংশের বেশি। এর ওপর যেভাবে ওষুধের দাম
বাড়ছে, তাতে নিম্নবিত্ত মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্ত ও স্থির আয়ের মানুষের
পক্ষেও চিকিৎসার খরচ বহন করা রীতিমতো অসাধ্য হয়ে উঠেছে। শুধু ওষুধ নয়,
চিকিৎসকের ফি, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয়, হাসপাতালের খরচ-সবই ক্রমাগতভাবে
বাড়ছে। এর ওপর যদি এভাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওষুধের দাম বাড়তে থাকে, তাহলে
মানুষ কোথায় যাবে? ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির সমস্যা,
হাঁপানি, অ্যাজমা, গ্যাস্ট্রিক-এমনই আরো কিছু রোগ বা সমস্যা রয়েছে, যেসব
রোগে সারা জীবনই ওষুধ গ্রহণের প্রয়োজন হয়।
তদুপরি বৃদ্ধ বয়সে অসুখবিসুখ
লেগেই থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেভাবে ওষুধসহ চিকিৎসা খরচ বেড়ে চলেছে, তাতে
দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের পক্ষেই নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে
পড়েছে। তার পরও ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানা যাচ্ছে না।
প্রকাশিত খবর
থেকে জানা যায়, মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় এগিয়ে রয়েছে স্কয়ার
ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। গত তিন মাসে যে ৫০টি ওষুধের দাম বেড়েছে তার
মধ্যে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসেরই রয়েছে ২১টি। এ ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির
তালিকায় আছে এসিআই, অ্যারিস্টো ফার্মা, সার্ভিয়ার ফার্মা, ইউনিমেড
ইউনিহেলথ, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল, বিকন ফার্মা, নভিসতা ফার্মা ইত্যাদি।
ওষুধের দোকান মালিকরা বলছেন, ওষুধের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের সঙ্গে প্রায়ই
তাদের বাগবিতণ্ডা করতে হচ্ছে। অথচ ওষুধশিল্প সমিতির ভাষ্য, ওষুধের দাম
বাড়েনি, দাম সমন্বয় করা হয়েছে। আর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলেছে, তারা মাত্র
১০টি ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে। তাহলে ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ
করছে কে? বাংলাদেশে ওষুধশিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২১৪টি কম্পানি
ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করছে। কম্পানিগুলো দেড় হাজার জেনেরিক নামের ওষুধ তৈরি
করে, যেগুলো প্রায় ৩১ হাজার ব্র্যান্ড নামে বিপণন করা হয়। প্রাথমিক
স্বাস্থ্য সেবার আওতায় তালিকাভুক্ত ১১৭টি জেনেরিক নামের ওষুধের দাম ঔষধ
প্রশাসন অধিদপ্তর নির্ধারণ করে। বাকি ওষুধগুলোর দাম উৎপাদনকারী
প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই নির্ধারণ করে।
পেঁয়াজ বা কোনো খাদ্যপণ্যের দাম
বেড়ে গেলে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। ওষুধের ক্ষেত্রেও কি একই ব্যবস্থা
নেওয়া হবে? আমরা মনে করি, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ঔষধ প্রশাসনকে
বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর মূল্য যেন অযৌক্তিকভাবে না
বাড়ে, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।