কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৮৯৯ সালের ২৪ নভেম্বর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ভিক্টোরিয়া কলেজ দক্ষিণ বাংলার শিক্ষার মানোন্নয়নে বাতিঘরের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ব্রিটিশ আমল থেকেই দ্যুতি ছড়াচ্ছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। এ কলেজ থেকে বেরিয়েছেন বরেণ্য রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সংস্কৃতিকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা, লেখক, গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক। সেই সঙ্গে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, সব সময়ই সামনের সারিতে ছিলেন এখানকার শিক্ষার্থীরা। এমনকি বাঙ্গালি জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। ১৯২১ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই কলেজে আড্ডা দিয়েছেন, গান গেয়েছেন, কবিতা লিখেছেন। ১৯২৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কলেজ প্রাঙ্গণে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে দুই দফা এ কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. আখতার হামিদ খান।
কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
অবিভক্ত কুমিল্লা জেলা তথা চট্টগ্রাম বিভাগের সুপ্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ। আজ থেকে প্রায় ১২৪ বৎসর পূর্বে এই কলেজের গোড়া পত্তন হয়। জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় ১৮৯৯ সালে এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রী আনন্দচন্দ্র রায় (১৮৬৩-১৯২০) মূলত পশ্চিম দেশীয় লোক ছিলেন। তাদের পূর্ব পুরুষের উপাধি ছিল সিং। এই কলেজ স্থাপনের পরই বৃটিশ সরকার তাকে রায় বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করেন। প্রকৃতপক্ষে জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় ও তার ভ্রাতা সতীশ চন্দ্র রায়ের উদ্দম ও উদ্যোগেই প্রধানত এই কলেজটি স্থাপিত হয়েছিল। উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা যখন কুমিল্লা শহরের সমৃদ্ধির অপরিহার্য অঙ্গরূপে পরিগণিত হলো, তখন তিনিই প্রথম এই প্রকার প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখার প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরের দিকে একটু তাকালেই যে শ্বেত প্রস্তর নির্মিত মুর্তিটি প্রথমেই আগন্তুকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, সেটিই এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায়ের আবক্ষ মূর্তি বা প্রতিকৃতি। এই প্রতিকৃতির একটু নীচেই লেখা রয়েছে : ওহ ষড়ারহম সবসড়ৎু ড়ভ জধর ইধযধফঁৎ অহধহফধ ঈযধহফৎধ জড়ু যিড় ভড়ঁহফবফ ঈড়সরষষধ ঠরপঃড়ৎরধ ঈড়ষষবমব রহ ১৮৯৯। ১৯৩৬ সালে আনন্দচন্দ্র রায়ের এই আবক্ষ মর্মর মুর্তিটির উন্মোচন করা হয়। স্থানীয় জনসাধারণ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ আনন্দচন্দ্র রায়কে মূলত সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্যই এটি স্থাপন করেছিলেন।
আনন্দচন্দ্র রায় ১৮৮৬ সালে "রায় এন্ট্রান্স ইস্কুল" নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৮ সালে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার "জুবিলি জয়ন্তী" স্মারক চিহ্ন স্বরূপ এটিকে ভিক্টোরিয়া স্কুলে রূপান্তরিত করা হয়। পরবর্তীকালে এই বিদ্যাপীটটিই ভিক্টোরিয়া কলেজ নাম ধারণ করে। একই বছর এই কলেজটি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফিলিয়েটেড কলেজ হিসেবে গণ্য হয়। দুর্ভাগ্য এই যে, ১৯০২ সালে এক প্রচন্ড অগ্নিকান্ডের ফলে এই কলেজটি সম্পূর্ণ ভষ্মিভূত হয়। অবশ্য এর কিছু কাল পরেই প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক এর পুননির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। ১৮৯৯ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ একটি টালির ঘর দিয়ে শুরু হয়েছিল। পরে অনেকের আর্থানুকূল্যে বর্তমান উচ্চ মাধ্যমিক শাখার অধ্যক্ষের চেম্বার, অফিসকক্ষ, লাইব্রেরী ও অধ্যাপক মিলনায়তনটি নির্মিত হয়। শোনা যায় এ কলেজটি ব্যারিস্টার এ রসুল, জনাব হোচ্চাম হায়দার চৌধুরী, নওয়াব ফয়জুন্নেসা প্রমুখ ব্যক্তিদের আর্থিক আনুকূল্য লাভেও ধন্য হয়েছিল। ১৯০৪ সালে একটি ট্রাস্ট ডিডের মাধ্যমে স্কুল ও কলেজটিকে পৃথক করা হয়েছিল। এই ট্রাস্ট ডিড করার মূল কারণ ছিল কলেজটির সার্বিক উন্নতি সাধন। এ সময়ে কলেজে একটি গভর্নিং বডিও ছিল। এই বডির উপরেই বর্তেছিল কলেজ পরিচালনার দায়ভার। এই গভর্নিং বডি ত্রিপুরার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কলেজ অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠাতা শ্রী আনন্দচন্দ্র রায়ের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। শ্রী আনন্দচন্দ্র রায় ছিলেন এই গভর্নিং বডির প্রথম সম্পাদক। ১৯০৪ সালের টাস্ট ডিডে মূলত শ্রী আনন্দচন্দ্র রায়কে কলেজ গভর্নিং বডির আজীবন সম্পাদক রাখার স্বপক্ষে একটি রায় ঘোষণা করে হয়েছে। ১৮৯৯ সাল থেকেই কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফিলিয়েটেড কলেজের সারিতে দাঁড়াতে সমর্থ হয়েছিল এই কলেজ। এ সময়ে এই কলেজে এফ এ স্ট্যান্ডার্ড চালু হয়। এর কিছুকাল পরেই চালু হয় আইএ স্ট্যান্ডার্ড। ১৯০৪ সালের পূর্বে এই কলেজে অন্য কোন বিভাগ বা স্নাতক শ্রেণী চালু করা সম্ভব ছিল না। ১৯১৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফিলিয়েশনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বাস্তব ক্ষেত্রে তাই ঘটেছিল। ১৯১৮ সালের দিকেই কেবল কলেজের নতুন ভবনটি নির্মিত হয় এবং ঐ বছরই স্নাতক শ্রেণী খোলার জন্য কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি আসে। বিজ্ঞান বিষয়ক আইএসসি এফিলিয়েশন আসে ১৯২৪ সালে। অবাক ব্যাপার এই যে, এই কলেজে বিশ দশকের (১৯২৫) মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে দেশ বিভাগ (১৯৪৭) পর্যন্ত ইংরেজী, গণিত, সংস্কৃত, রাজনীতি বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও আরবী বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। তখন অনার্স কোর্স ছিল দুই বছর ব্যাপী। পাস কোর্সও তাই। এমএ কোর্সও দুই বছর পড়ানো হতো। ১৯৪২ সালে এ কলেজে বিএসসি কোর্স চালু হয়। এবং ১৯৫৫-৫৬ সালের দিকে বিকম কোর্স শুরু হয়। এর কিছুকাল আগে থেকেই অর্থাৎ, ১৯৪৭-৪৮ সাল থেকে এখানে আইকম কোর্স চালু ছিল। ১৯৬২-৬৩ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি শাখায় বিভক্ত হয়। একই প্রশাসনিক দায়িত্বে ডিগ্রি শাখা খোলা হয় মূল কলেজ ভবন থেকে প্রায় দেড় মাইল দূরে ধর্মপুর এলাকায়, শহরতলীতে। ডিগ্রি শাখা আবার তিন ভাগে বিভক্ত। কলা অনুষদ, বাণিজ্য অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদ। এখানে রয়েছে ডিগ্রি শাখার আলাদা প্রশাসনিক ভবন, বিশাল মসজিদ ও লাইব্রেরী, ছেলেদের জন্য কবি নজরুল ইসলাম ছাত্রাবাস এবং মেয়েদের জন্য নওয়াব ফয়জুন্নেসা ছাত্রী হোস্টেল। ভিক্টোরিয়া কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক শাখাও কলা-বাণিজ্য ও বিজ্ঞান - এই দুই অনুষদের বিভক্ত। উচ্চ মাধ্যমিক শাখার মূল ভবনেও রয়েছে বিশাল লাইব্রেরী। মূল ভবনের পশ্চিম পাশে একটি পুকুর ছিল যা ভরাট করে তৈরী করা হয়েছে বিশাল মাঠ। মাঠের পাশেই নির্মিত হয়েছে বাস্কেটবল গ্রাউন্ড ও মসজিদ। কলেজের সামনে রাণীর দীঘির পাড়ে বসে কবি নজরুল ইসলাম বন্ধুদের নিয়ে প্রতিদিন আসর জমাতেন। এখানে বসেই কবি "মাধবী লতা দোলে" সহ বিভিন্ন গান লিখেছেন। এখানে বসে তিনি নার্গিসকে অনেক চিঠি লিখেছেন । দীর্ঘদিন এই স্মৃতি স্তম্ভ সংষ্কার না করায় এর জীর্ন-শীর্ন অবস্থা হয়েছিলো, কিন্তু ২০১৫ এ এটি নতুন করে তৈরি করা হয়। প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। ফলে বর্তমানে এটি সংরক্ষিত অবস্থায় আছে। উচ্চ মাধ্যমিক শাখার সম্মুখ ভাগে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে কলেজের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ওল্ড ভিক্টোরিয়ান্স নির্মাণ করেছে একটি স্মৃতি স্তম্ভ। কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখার ছাত্রদের জন্য টমসম (মূল : থমসন) ব্রীজের কাসে রয়েছে একটি সোহরাওয়ার্দি ও রবীন্দ্রনাথ ছাত্রাবাস। এবং চর্থায় রয়েছে শেরে বাংলা ছাত্রাবাস। ১৯৬৩-৬৪ সালের দিকে কলেজে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা ও অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। পরে ১৯৭১-৭২ সালের দিকে একাউন্টিং, ব্যবস্থাপনা, রাজনীতি বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রভৃতি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালের ২৩ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই চট্টগ্রাম বিভাগের সব কলেজ এর অধীনে চলে যায়। ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে এই কলেজে বাংলা ও অর্থনীতি বিষয়ে এমএ খোলা হয়েছিল এবং তা প্রায় এক বছরের মতো চালু ছিল। ১৯৮২ সালে এই কলেজে আইসিএমএ কোর্স চালু হয়। ১৯৫৮-৫৯ সালের দিকে এ কলেজে নাইট শিফট চালু হয়। তা ১৯৬৮ সালে ১লা মে নাগাদ চালু ছিল।
ভিক্টোরিয়া নামে নামকরণঃ
১৮৯৯ সালের ২৪ নভেম্বর কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন দানবীর ও জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায়। মহারানি ভিক্টোরিয়ার নামে এ কলেজের নাম করা হয়। কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় এলাকার রানীর দীঘির পশ্চিম পাড়ে কলেজের অবস্থান। বর্তমানে এই ভবনে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির পাঠ দেওয়া হয়। এখানকার জামতলা ও রানীর দীঘির পাড় ঘিরে আড্ডা ও গল্পে মাতেন শিক্ষার্থীরা। আর প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে, ধর্মপুর এলাকায় ১৯৬২ সালে চালু হয় ডিগ্রি শাখা। সেখানে চলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির পাঠদান। দেশভাগের আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে কয়েকটি কলেজ ছিল, ভিক্টোরিয়া কলেজ তার মধ্যে অন্যতম। দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এখানকার শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। ১৯৬৮ সালের ১ মে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। এরপর থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের নাম পরিবর্তন হয়ে কুমিল্লা সরকারী ভিক্টোরিয়া কলেজ নামকরণ হয়। ১৯৮৪-৮৫ সাল থেকে কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হিসেবে মর্যাদা পায়। এরপর থেকে ডিগ্রি শাখা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে যায়। বর্তমানে ভিক্টোরিয়া কলেজ দেশের শতবর্ষী কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম সুনামধন্য শিক্ষায়তনের মর্যাদা লাভ করেছে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত কলেজগুলোর মধ্যে সেরা প্রতিষ্ঠানেরও স্বীকৃতি রয়েছে।
আলোকিত শিক্ষার্থীরা
উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী শচীন দেববর্মন, ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ওসমান চৌধুরী, সাবেক উপাচার্য খান সারওয়ার মুরশিদ, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, দিলিপ বিশ্বাস (চিত্র পরিচালক), বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি ছিদ্দিক আহমদ চৌধুরী, নভেরা আহমদ (ভাস্কর), ফজলুল হালিম চৌধুরী, শামসুল হক, সাংবাদিক এবিএম মূসা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ এস এম শাহজাহান, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা, শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞান লেখক অজয় রায়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার রফিকুল ইসলাম, জাতীয় পতাকার রূপকার শিবনারায়ণ দাস, অক্সফোর্ডের গবেষক আবদুস সাত্তার খান, সাবেক মন্ত্রি পরিষদ সচিব ও বর্তমান অন্তর্বতী সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার এ কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদও এই কলেজে অধ্যয়ন করেছেন।
শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রমে সরব
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলে প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থী আছেন। কলেজে ২০টি বিষয়ে স্নাতক এবং ১৮টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা আছেন ১৯০ জন। সহশিক্ষা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সারা বছরই সরব থাকে কলেজ প্রাঙ্গণ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ বিতর্ক পরিষদ, সাংস্কৃতিক সংগঠন নোঙর, নাট্য সংগঠন ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার, রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন ও রেড ক্রিসেন্ট, বিএনসিসি, ক্যারিয়ার ক্লাবসহ রোভার স্কাউটের মতো সংগঠনগুলোর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব চর্চার সুবর্ণ সুযোগ পান। ক্যাম্পাস সাহিত্য পত্রিকা নামে একটি প্রকাশনাও বের হয় নিয়মিত। এ কলেজে ৫০০ আসনবিশিষ্ট একটি মিলনায়তন আছে। বছরের বিভিন্ন সময় সংস্কৃতিকর্মীরা এবং বিভিন্ন বিভাগের আয়োজিত সাংস্কৃতিক নানা ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে মিলনায়তনটি মাতিয়ে রাখেন।
১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেও ১২৪ বছর ধরে তার ঐতিহ্য ও শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। প্রতিটি বিভাগে সিইডিপি’র ব্যবস্থাপনায় একটি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও স্মার্টবোর্ড স্থাপন এবং প্রতিটি বিভাগে ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা পঠন-পাঠন প্রক্রিয়ায় ছাত্র-শিক্ষক উভয়কেই প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় উজ্জীবিত করছে। তবে ভিক্টোরিয়া কলেজের কিছু সমস্যা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। যেমন, ডিগ্রী শাখায় পর্যাপ্ত একাডেমিক ভবনের সংকট থাকায় শিক্ষার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। গ্রন্থাগারে রয়েছে পর্যাপ্ত আসনের অভাব। ছাত্রাবাসগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরী। এছাড়া শিক্ষক-কর্মকর্তাবৃন্দের ডরমেটরির অবস্থাও মানসম্মত নয়। একটি কলেজ ক্যাফেটোরিয়া পুনরায় চালু ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণের দাবি। কলেজের আশ-পাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে কলেজ ক্যাম্পাস পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে নীচ তলার শ্রেণীকক্ষগুলোতে পানি উঠায় পাঠদান কার্যক্রম দারুণ ভাবে ব্যাহত হয়। এছাড়া কলা ভবন ও বিজ্ঞান ভবন-২ এর অবস্থাও নাজুক। বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবুল বাসার ভূঞাঁ কলেজে যোগদানের পর কিছু সংস্কার কাজ শুরু করেছেন। আশা রাখছি নতুন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ এর দক্ষ নেতৃত্বে ভিক্টোরিয়া কলেজ তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে এবং জ্ঞান পিপাসু শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ভরে উঠবে কলেজের আঙ্গিনা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ আজ ১২৫ বছরে পা দিচ্ছে। শুভ হোক আগামীর পথচলা। শতবর্ষের ঐতিহ্য ও গৌরব নিয়ে টিকে থাকুক যুগ যুগ ধরে। জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করুক এ অঞ্চলের প্রতিটি দ্বার।
লেখক: প্রভাষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা
মোবাইল: ০১৯১২-৪৫১৯৮৮
Email- [email protected]