একই
সনে জন্ম বাবা ও ছেলের! এও কি সম্ভব? জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী এমনটাই
বাস্তবতা কুমিল্লার চান্দিনার তেতুইয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম ও তার
বড় ছেলে আল-আমিনের। অদ্ভূত হলেও পরিচয়পত্রের এমন ভুলে সীমাহীন বিড়ম্বনায়
পড়েছেন তারা। ভুল সংশোধনের আশায় ঘুরছেন এক বছর ধরে।
কুমিল্লার চান্দিনা
উপজেলার তেতুইয়া গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম বলেন, গত এক বছর
ধরে এনআইডির তথ্যগত এ ভুল সংশোধনে কখনো নির্বাচন কার্যালয়ের বারান্দায় আবার
কখনো কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বয়সের এই তথ্যগত ভুল সংশোধন করতে
পারেননি। স্থানীয় চান্দিনা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলে তারা
বলছেন কুমিল্লা যেতে কুমিল্লায় আসলে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের
কর্মকর্তারা করছেন নানা তালবাহানা।
একদিকে এনআইডির তথ্যগত ভুল বিড়ম্বনায়
কুমিল্লার জাবেদ আহমেদও। জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা
জটিলতায়, কর্মস্থল সিলেট থেকে কুমিল্লায় দৌড়ঝাঁপ করেও পাচ্ছেন না সমাধান।
তাদের মতো হাজারো মানুষের এনআইডি বা পরিচয়পত্রে রয়েছে নিজের নামে কিংবা
বাবা-মায়ের নামে ভুল, ভুল রয়েছে কারও ঠিকানায়, কারো জন্মসালে। রয়েছে বাবার
নামের স্থানে স্বামীর নাম চলে আসার মত ঘটনা। আর এসব ভুলে সামাজিক বিড়ম্বনার
পাশাপাশি দাপ্তরিক নানা কাজ যেমন পাসপোর্ট আবেদন, ব্যাংক একাউন্ট খোলা,
জমি রেজিষ্ট্রেশন, চাকরির আবেদন কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স করাসহ নানাবিধ কাজ
সম্পন্ন করতে প্রয়োজন এই জাতীয় পরিচয় পত্র। কিন্তু এটির তথ্যগত ভুলে
প্রতিটি কাজেই নাগরিককে পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। তাই সেবার ব্রত নিয়ে চালু
হওয়া এই স্মার্ট এনআইডি এখন অনেকের কাছে হয়রানির উপলক্ষ। বিড়ম্বনার বিষয়টি
বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন অফিস দ্রুতই ব্যবস্থা নিবে আশা ভুক্তভোগীদের।
ভুক্তভোগী
জাবেদ আহমেদ বলেন, সিলেটে আমার কর্মস্থল আর কুমিল্লার লাকসাম হচ্ছে আমার
বাড়ি। নির্বাচন অফিস জাতীয় পরিচয়পত্র করার সময় ভুল বশত আমার এনআইডিতে
সিলেটে স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে বর্তমান ঠিকানা দেয় সিলেটে। এখন আমি নানা
দাপ্তরিক কাজে গিয়ে হয়রানীর মুখোমুখি হতে হয়। প্রতিমাসে দুই একবার
কুমিল্লায় আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে তথ্যগত ভুল সংশোধনে কোন সমাধান পাচ্ছিনা।
কুমিল্লা
অঞ্চলের ছয় জেলার ৫৪ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঝুলে আছে মোট
৫৯ হাজার ৬৬৩ টি এনআইডি সংশোধনের আবেদন। বছরের পর বছর ঘুরেও মিলছে না
কাঙ্ক্ষিত সমাধান। তার জন্য নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তাদের অবহেলাকে দুষছেন
ভুক্তভোগীরা।
ভোগান্তি আরেক নাম নির্বাচন অফিস জানিয়ে বেশ কয়েকজন
ভুক্তভোগীরা বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের নানা তথ্যগত ভুল সংশোধন করতে এসে
কর্মকর্তাদের অবহেলায় হয়রানি শিকার হচ্ছেন তারা। কর্মকর্তারাম একই সঙ্গে
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কথা না বলে একেক সময় একেক কাগজ চেয়ে বসছেন এতে আরো
ভোগান্তি বাড়ছে।
কুমিল্লার মানবাধিকার কর্মী আলী আকবর মাসুম বলেন, বলেন,
নির্বাচন অফিসের এমন উদাসীনতায় বাড়ছে গ্রাহক হয়রানি। যার মধ্য দিয়ে
জালিয়াতি, অসদুপায় অবলম্বনসহ বাড়ছে নানা অপকর্মও।
অবশ্য নিজেদের ভুল
স্বীকার করে কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ দুলাল তালুকদার বলেন,
বহু গ্রাহক রাষ্ট্রের আইন অমান্য করে ভোটার হচ্ছেন ১৮ বছরের কম বয়সেই।
রয়েছে একাধিক নামে জন্ম সনদ এবং পাসপোর্ট। নাগরিক তথ্য গোপন করে অন্যের
সম্পত্তি আত্মসাৎ অসদুপায় অবলম্বন করছে অনেকে। তবে যাচাইয়ে সঠিক তথ্য
প্রদানকারীদের দ্রুতই এনআইডি সংশোধনে নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।
তিনি আরও
বলেন, গত আট মাসে কুমিল্লা অঞ্চলে ভোটার হতে আবেদন করেন এক লাখ ৬২ হাজার
৭৬৪ জন। আবেদন অনুমোদন হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ৩৯৮ জনের।