কবিতা এবং দর্শনের মধ্যে মূলত কোন
পার্থক্য নেই। কেননা উভয়ই মানুষের প্রজ্ঞা এবং অনুভূতিকে প্রকাশ করে। একজন
কবি তাঁর কবিতার মধ্যে নিজের উপলব্ধির প্রকাশ ঘটান এবং প্রগাঢ় বিশ্বাসকে
প্রতিবিম্বিত করেন। একজন দার্শনিক, ঠিক একই রকমভাবে মানুষের অস্তিত্বকে
নিরূপণ করতে চান এবং জ্ঞান ও বুদ্ধির সাহায্যে তাঁর সর্বপ্রকার উপলব্ধির
ব্যাখ্যা উপস্থিত করেন। অবশ্য দার্শনিককে এমন এক-একটি অবস্থান নিতে হয়
যেখানে তিনি নিজের ইচ্ছাকে প্রকাশ করছেন বলে মনে করেন না, কিন্তু সকলের
জন্য গ্রহণযোগ্য একটি বোধের তিনি রূপকার হন। কবি আবার আপন ইচ্ছাকে এমন একটি
অবয়বে প্রকাশ করেন, যে অবয়বটি সকলের উচ্চারণের অধিগম্যতায় এসে সকল
মানুষেরই ভাষ্য হয়।
কবি মুহম্মদ ইকবাল একই সঙ্গে দার্শনিক ছিলেন, কবিও
ছিলেন। বলা যেতে পারে যে, তিনি ছিলেন সামগ্রিক রূপে একজন দার্শনিক কবি।
ধর্ম সম্পর্কে, জীবন সম্পর্কে তাঁর যে সমস্ত জিজ্ঞাসা ছিল সে সমস্ত
জিজ্ঞাসাকে তিনি কবিতার অবয়বে, প্রকাশ করেছিলেন। এই বিশিষ্ট অবয়বের ফলে তার
বিভিন্ন জিজ্ঞাসা উপমা এবং রূপকের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। যেমন মানব
সমাজের সকল মানুষের বিশ্বাসগত ঐক্যকে তিনি গোলাপ ফুলের পাপড়ির সঙ্গে তুলনা
করেছেন। বলেছেন, একটি গোলাপ ফুল প্রস্ফুটিত লাবণ্যে যখন বিকশিত হয় তখন যেমন
তার প্রতিটি পাপড়ি সুবিন্যস্ত বন্ধনে ফুলটিকে ধারণ করে, তেমনি একটি
জাতিসত্তা তার অন্তর্গত সকল মানুষকে একটি বিশ্বাস এবং নীতির বন্ধনে আবদ্ধ
করে। যেমন করে আমাদের কণ্ঠনালীর অভ্যন্তর থেকে যে বাতাস নির্গত হয় সেটি যখন
একটি নিয়মগত প্রক্রিয়ায় বাঁশির মধ্যে ফুক্তাররূপে প্রবেশ করে তখন যেমন
একটি সমন্বিত সুর নিষ্ক্রান্ত হয়, তেমনি মানুষ যদি একটি বিশ্বাসের বন্ধনে
আবদ্ধ হয় তখন তারা একটি সমন্বিত জাতিসত্তা নির্মাণ করে। আমরা লক্ষ্য করছি
যে, কবি ইকবাল তাঁর একটি দার্শনিক প্রতিপাদ্যকে কবিতার রূপকল্পে প্রকাশ
করেছেন। ইকবালের বিশিষ্টতা এখানেই যে, তাঁর দার্শনিক প্রজ্ঞা এবং কাব্যগত
অনুভূতি একত্রিত হয়ে এমন একটি সৃষ্টির জন্ম দিয়েছে, যেটি একই সঙ্গে
জীবন-দর্শন এবং কবিতা। ইকবাল ইচ্ছা করলে তাঁর জীবন-দর্শনকে গদ্যে প্রকাশ
করতে পারতেন এবং তা যে যথেষ্ট উচ্চমানের হত তা নিশ্চিন্তেই বলা যায়। তিনি
ইংরেজিতে যে সমস্ত গ্রন্থ রচনা করেছেন সেগুলোতে তার বিচার-বুদ্ধির সুসংহত
বিস্তার আছে এবং পণ্ডিতরা এক বাক্যে স্বীকার করেছেন যে, ইকবাল একজন অসাধারণ
প্রজ্ঞাবান মনীষী। তবুও তিনি তার জীবন-দর্শন প্রকাশের জন্য কবিতার রূপকল্প
বেছে নিয়েছিলেন। কেননা তিনি কবিতার অবয়বকে সম্মানিত ভেবেছেন এবং কবিতার
মাধ্যমে একটি সত্য প্রকাশের যে বিচিত্র পন্থা আছে তা তিনি অনুভব করেছিলেন।
যেমন তিনি এক জায়গায় বলেছেন : “যদি তুমি সত্যকে উপাসনা কর তাহলে একমাত্র
সত্যের পথে চল, অন্যপথে চলো না, মনে রাখবে সম্পূর্ণ এবং অসম্পূর্ণ উভয়েরই
রহস্য আছে। কিন্তু যখন মানুষ সত্যকে গ্রহণ করে পূর্ণতা পায় তখন সে উজ্জ্বল
মাণিক্যে পরিণত হয়।” এই বর্ণনার মধ্যে আমরা সত্য উপলব্ধির স্বরূপকে একটি
অনবদ্য। গ্রহণযোগ্যতার মধ্যে পেলাম। এখানেই ইকবালের সার্থকতা।
যখন তিনি
তাঁর প্রথম দার্শনিক মহাকাব্য ‘আসরার-ই-খুদী' প্রকাশ করেন, তখন পাঠকগণ
বুঝতে পারলেন যে, পৃথিবীর কাব্যের ইতিহাসে এক মহৎ প্রতিভার জন্ম হয়েছে,
যিনি কঠিনকে আনন্দের মধ্যে এনেছেন এবং বিশ্বাসকে দীপ্তির মধ্যে প্রোজ্জ্বল
করেছেন। আসরার-ই-খুদী' কাব্যে কবি ইকবাল বিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধ সমাজ-সংঘের
মধ্যে একজন অংশভাগীর যথার্থ অবস্থিতিকে চিহ্নিত করেছেন। বিশ্বাসের ঐক্যের
জন্য একজন বিশ্বাসীকে যথার্থরূপে আত্মসচেতন হতে হয় এবং নিজেকে আবিষ্কার
করতে হয় সততাসিদ্ধ কর্মের মধ্যে। সে আবিষ্কার যে কত বিপুল, বিরাট এবং
মহিয়ান তা কবি ইকবাল নানাবিধ উপমার সাহায্যে প্রমাণ করবার চেষ্টা করেছেন।
ইকবাল নিজে এ সম্পর্কে বলেছেন : ‘একজন ধর্ম-বিশ্বাসে নিষ্ঠাবান মানুষ তার
আত্মবিলুপ্তি ঘটাবে না, সে আত্মপ্রতিষ্ঠা ঘটাবে। সে আত্মআবিষ্কার এবং
আত্মপ্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে একটি পূর্ণকাম একক সত্তায় পরিণত হবে।”
কিন্তু আস্রার-ই-খুদী’র এই দর্শন যেন ‘এনার্কী’ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না
করে সেজন্য তিনি আর’-এর একটি সম্পূরক গ্রন্থ রচনা করলেন এবং নাম দিলেন
‘রূমুজ-ই-বেখুদী'। অর্থাৎ আত্ম-আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে একজন মুসলমানকে একটি
আদর্শভিত্তিক সমাজের কথাও চিন্তা করতে হবে এবং তখন তাকে আর একক থাকা চলবে
না, তাকে একটি সংঘের সম্পন্নতার মধ্যে মিশে যেতে হবে। এখানেই আত্মবোধ
সংরক্ষণ করেও আত্মবিলোপের কথা এসে পড়ে।
অস্তিত্ব কি এবং আত্মাই বা কি
এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া খুব সহজ নয়। তার কারণ অস্তিত্ব বা আত্মা এই দুটি
শব্দের সীমাবদ্ধতা আছে। পৃথিবীতে আমাদের যে সমস্ত অভিজ্ঞতা ঘটে সে সমস্ত
অভিজ্ঞতা বিভিন্ন সীমায় কেন্দ্রীভূত। প্রতিটি বস্তুর অথবা প্রতিটি
অভিজ্ঞানের অথবা প্রতিটি বোধের আপনাপন সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু কোন কিছুই
একটি সামগ্রিক চেতনায় বিচ্ছিন্ন নয়। এই সমগ্র বা এ্যাবসলিউট হচ্ছে সকল
অস্তিত্বের একটি একীভূত ব্যঞ্জনা। এই একীভূত ব্যঞ্জনায় একটি একক সৃষ্টি
করে। এবং সে এককের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। অর্থাৎ সেই একক তার সীমাবোধকে
হারিয়ে ফেলে এবং চিহ্নিতকরণকে হারিয়ে ফেলে। তখন প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে
যে, যদি সমগ্র বোধের কোন সীমা না থাকে তাহলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বস্তুর বা
অভিজ্ঞতার কোন সীমা থাকবে? সীমার বোধটি হচ্ছে এক প্রকার মানসিক বোধ।
যথার্থরূপে সসীম বলে কিছুই নেই। আমরা পৃথিবীতে যাকে বাস্তব বলি সে বাস্তবের
কোন একক সত্তা নেই। একটি বাস্তব অন্য বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কিত। পৃথিবীর
সকল বস্তুর মধ্যে পরস্পর পরস্পরগত একটি বয়ন আছে। আমরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড অথবা
বিশ্বভূমির কল্পনা যখন করি তখন বিভিন্ন বাস্তবের মধ্য দিয়েই তা করি।
যেহেতু বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তুলনারহিত এবং সীমাসংবদ্ধ নয়, সুতরাং প্রতিটি জীবন
নিজস্ব। এককথায় পরিস্ফুট হয়েও অনন্তের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যথার্থ বাস্তব
কাকে বলে তার পরীক্ষা করা খুবই কঠিন। আমরা শুধু সংক্ষেপে এ কথা বলতে পারি
যে, বাস্তব হচ্ছে একটা সম্পর্ক-বস্তুর সঙ্গে বস্তুর সম্পর্ক, বোধের সঙ্গে
দৃষ্টির সম্পর্ক, ইচ্ছার সঙ্গে প্রত্যয়ের সম্পর্ক। এভাবে চিন্তা করলে আমরা এ
সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, সৃষ্টির প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি, এ প্রক্রিয়া
শেষ হওয়ার নয়। আমরা অনবরত অগ্রসর হচ্ছি এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায়, এক
ব্যবস্থা থেকে অন্য ব্যবস্থায়, বিশৃঙ্খলা থেকে বোধে এবং কল্পনা থেকে
প্রত্যয়ে। আমরা প্রত্যেকেই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি প্রক্রিয়ায়
অংশভাগী। এ মুহূর্তে যেসব মানুষ পৃথিবীতে আছে তারাই কিন্তু সমগ্র মানব জাতি
নয়। নতুন মানুষ পৃথিবীতে অনবরত আসছে এবং এভাবে অনন্তকাল ধরে সৃষ্টিকর্মে
সকল মানুষই অংশ নিয়ে চলেছে। পৃথিবী সর্বদাই এক ধরনের পরিপূর্ণতার দিকে
যাচ্ছে, কিন্তু পরির্প্ণূায়ন কখনও সম্পূর্ণ হচ্ছে না। সুতরাং আমরা কখনও
একথা বলতে পারি না যে, পৃথিবীর একটা সমগ্র সত্য রূপ ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে।
এটা গড়ে ওঠার পথে এবং সব সময় গড়ে ওঠার পথেই থাকবে। সৃষ্টিকর্মের ধারায় আমরা
সকলেই অংশ নিচ্ছি।
জীবনের মৌলিক প্রবৃত্তি হচ্ছে অগ্রসরমানতা। সম্মুখে
গমনের পথে যত বাধাই আসুক না কেন, সে সব বাধাকে জীবন উৎপাটন করে অথবা আপনার
অন্তর্গত করে। অন্তর্গত করার অর্থ হচ্ছে গ্রহণ করা অথবা বলা যেতে পারে
আত্মবোধের মধ্যে নিমজ্জিত করা। জীবন তার সম্মুখ যাত্রায় বাসনার জন্ম দেয়,
আদর্শের জন্ম দেয় এবং আপন।
সুরক্ষার জন্য বুদ্ধি, অনুভূতি ইত্যাদি
প্রকরণেরও জন্ম দেয়। এ সমস্ত প্রকরণ জীবনকে তার মর্যাদায় অক্ষুন্ন রাখার
জন্য সর্বদা সাহায্য করে। খুব গভীরভাবে চিন্তা করলে আমরা অনুভব করতে পারব
যে, জীবনের অগ্রযাত্রার পাথেয় হচ্ছে বস্তু অথবা বস্তুর স্বভাব। কিন্তু যাকে
আমরা বস্তু অথবা বস্তুর স্বভাব বলছি তা কিন্তু পাপ কিংবা পরাজয়। নয়, তা
মানুষকে আকর্ষণ করে এবং আচ্ছন্ন করে। কিন্তু এই আচ্ছন্নতা এবং আকর্ষণের
কারণে জীবন এমন একটি শক্তি লাভ করে যে শক্তির সাহায্যে মানুষ সকল প্রকরণকে
নিজের মধ্যে বিলীন করে দেয়। মানুষের যে অহংবোধ আছে যাকে আমরা আত্মবোধ বলতে
পারি, সেটা সর্বাংশে স্বাধীন নয়, সেটি অংশত স্বাধীন এবং অংশত সুনির্দিষ্ট।
কিন্তু এই আত্মবোধটি তখনই পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করবে যখন তা আল্লাহর
অস্তিত্বে অনন্ত চৈতন্যে বিলীন হবে।
ইকবাল তার আশরার-ই-খুদী’তে মানুষের
অহংবোধ বা আত্মবোধের এই স্বাধীনতার কথাই বলেছেন। তিনি আশরার-ই-খুদীর
আরম্ভে বলছেন : “যখন বিশ্ব-বিমােহনকারী উজ্জ্বল সূর্য রাত্রির ওপর ঝাপিয়ে
পড়লে একটি প্রবল দস্যুর মত তখন আমার ক্রন্দনে গোলাপের পাপড়ি নিষিক্ত হল।
আমার অশ্র নার্গিস ফুলের অক্ষিকোটর থেকে নিদ্রা ধুয়ে ফেললে এবং আমার আবেগ
কিশলয়কে জাগ্রত করল এবং প্রাণবন্ত করতে সাহায্য করল, উদ্যান-পালক আমার
সঙ্গীতের ক্ষমতা পরীক্ষা করল। সে আমার কবিতাকে বপন করল এবং সেখান থেকে
তরবারীর জন্ম হলো। আমার অশ্রর বীজকণাগুলো সে মৃত্তিকায় বপন করল এবং আমার
আর্তনাদকে সে উদ্যানের লতাগুল্মের সঙ্গে বয়ন করল, যেমন করে কাপড় বয়ন করা
হয়। যদিও আমি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, তবু উজ্জ্বল দেদীপ্যমান সূর্য আমারই। আমার
বক্ষের নিবিড়ে একশত ঊষা অবস্থান করে। জামসিদের পানপাত্রের চাইতে আমার
ধূলিকণা উজ্জ্বল। আমার ধূলিকণা সে সমস্ত বস্তুকেও জানে যেগুলো এখনও জন্মলাভ
করেনি।” এভাবে প্রস্তাবনা করে ইকবাল তার ‘আশর-ই-খুদী’তে আপন অভিপ্রায়ের
প্রতিষ্ঠা ঘটিয়েছেন। ইকবালের বক্তব্যের মধ্যে যুক্তি আছে, গভীর দর্শন আছে,
কিন্তু আবেগ এবং কল্পনার উদ্দীপনা এমন একটি বিস্ময় সৃষ্টি করে যে আমরা
অভিভূত হয়ে পড়ি, তার বক্তব্যকে প্রশ্ন করি না বা গ্রহণ করি।
কবি ইকবাল
তার আশরার-ই-খুদী' মওলানা জালালউদ্দিীন রুমীর মসনবী'র ভঙ্গিতে রচনা
করেছিলেন। তিনি তার কাব্যের প্রস্তাবনায় জালালউদ্দিন রুমীর কথা উল্লেখ করে
বলেছেন যে, তিনি সত্য অনুসন্ধানে ব্যর্থ হয়ে বেদনা-বিষাদে এক রাত্রে
তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়েছিলেন। তখন তিনি একটি কল্যাণময় মধুর স্বপ্ন দেখলেন।
দেখলেন যে, সত্যের গ্রহিতা মওলানা রুমী, যিনি ইরানী ভাষায় ‘ফোরকান' রচনা
করেছেন, তিনি তাঁকে তন্দ্রা থেকে জাগিয়ে তুললেন এ কবি ইকবাল সূফীদের
আত্মবিলোপে বিশ্বাস করতেন না, যাকে বলে “ফানাফিল্লাহ। সত্তা বিলোপের যে
ব্যঞ্জনার কথা তিনি বলেছেন সেটি হচ্ছে অজস্রকে আত্মবোধের মধ্যে বিনিঃশেষ
করে এমন একটি অহংবোধের প্রকাশ ঘটানো যে প্রকাশ হবে আল্লাহর যথার্থ
প্রতিনিধির। মওলানা রুমী যেভাবে আল্লাহর অস্তিত্বে বিলীন হওয়ার কথা
বলেছিলেন যে বিলীনতার মধ্যে ব্যক্তি-সত্তা একেবারেই থাকবে না। ইকবাল রুমীর
সে তত্ত্বকে গ্রহণ করেননি। কিন্তু তিনি রুমীর মহত্ত্বে এবং কাব্যগত
তাৎপর্যে বিমুগ্ধ ছিলেন, তাই তিনি রুমীর রচনা-পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছেন,
কিন্তু রুমীর বিনিঃশেষে-সাধনাকে গ্রহণ করেননি। ইকবাল কঠিন একটি দর্শনকে
আনন্দ বোধের দর্শনে পরিণত করেছেন, একটি অসাধারণ প্রভাকে আবেগের উচ্চারণ
করেছেন এবং মানুষের অস্তিত্বকে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রে সমুজ্জ্বল করেছেন। তার
দর্শন বিনিঃশেষের দর্শন নয়, বরঞ্চ আত্মপ্রকাশের দর্শন, আত্মবিলুপ্তির দর্শন
নয়, বরঞ্চ সকল সংকটের মধ্যে আত্ম-আবিষ্কারের দর্শন। যে মহান স্রষ্টা একক ও
অদ্বিতীয় তারই প্রতিনিধি হয়ে, তারই সম্পূর্ণতার মধ্যে অবগাহন করবার
প্রচণ্ড ইচ্ছায় চৈতন্যের জন্ম হয়েছে, সেই চৈতন্যই হচ্ছে ব্যক্তি-সত্তা বা
আত্মবোধের চৈতন্য।
লেখক, গবেষক ও অনুবাদক