শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪
১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ঐক্যের আহ্বান ফখরুলের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:৫৪ এএম |

  ঐক্যের আহ্বান ফখরুলের



বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকট উত্তরণে ‘অনৈক্য সৃষ্টি না করে ঐক্যের মাধ্যমে’ সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান রেখেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “আপনারা অনেকে দায়িত্ব নিয়েছেন, দায়িত্বে এসেছেন। এই দায়িত্বটা দায়িত্বশীলভাবে পালন করতে হবে। গোটা জাতিকে সামনে রেখে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা এমন কিছু করব না, এমন কোনো হঠকারিতা করব না, যে হঠকারিতার মধ্য দিয়ে আমরা আবার অন্ধকারের মধ্যে চলে যাব।”
জাতীয় কবিতা পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের ‘রাষ্ট্র পূনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমাদের এখন লক্ষ্য একটাই হওয়া উচিত, সেই লক্ষ্য হচ্ছে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্যে যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন সেই সংস্কারগুলো ন্যূনতম করে আমরা একটা সেই ধরনের রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য নির্বাচন করে পার্লামেন্টে যাই।
“অনেকেই বলছেন যে, নির্বাচনই তো গণতন্ত্র নয়। অবশ্যই না। কিন্তু তার জন্য (গণতন্ত্রের জন্য) একটা প্রক্রিয়া লাগবে তো। সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যদি না যাই সেই জায়গায় আমরা পৌঁছাতে পারব না।”
আর সেজন্য যে ঐক্য দরকার, সে কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাদের সকলেরই এখন যেটা উচিত, অনৈক্য সৃষ্টি না করে ঐক্যের মধ্য থেকে আমরা যে সুযোগ পেয়েছি, সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে অন্তত আমরা কিছুটা হলেও সামনের দিকে এগিয়ে যাই।
“আমি শুধু এতটুকু বুঝি যে, আমাদের এখন সময় হয়েছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটা লিবারেল ডেমোক্রেসির পথে এগিয়ে যাওয়ার।”
সেজন্য সবাইকে শান্ত থেকে বিষয়গুলো অনুধাবন করে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়ার এবং ‘সবাইকে সঙ্গে নিয়ে’ পথ চলার কথা বলেন ফখরুল। চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার ঘটনার পর ইসককন নিয়ে যে আলোচনা চলছে, সে বিষয়েও কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “আজকে যখন আমরা ভারতবর্ষের মিডিয়ার বিষয়গুলো দেখতে পাইৃ, কাল রাতেই আমাকে কয়েকজন ফোন করেছিলেন। তাদের একটাই মাত্র লক্ষ্য, প্রশ্ন যে, ইসকনের ব্যাপারে আপনারা কি করছেন?
“এই প্রশ্নটা একেবারেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একটা অবস্থা তারা তৈরি করতে চায়, সেই অবস্থা নিয়ে প্রথমবার ফেইল করেছে। এখন নতুন করে আবার সেই অবস্থা তৈরি করতে চায়।এটার ব্যাপারে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।”

‘ফ্যাসিবাদ যেন ফিরে না আসে’:
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যে, ৫৩ বছর হয়ে গেছে আমরা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর এটাই আমরা করতে পারিনি। আমরা সব সময় যুদ্ধ করছি, লড়াই করছি, নিজেরা ভাইয়ে ভাইয়ে রক্ত ঝরাচ্ছি। কিন্তু ওই পথে যাওয়ার জন্য কেউ সেভাবে চেষ্টা করছি না। ফ্যাসিবাদ পরাজিত হয়েছে। ফ্যাসিবাদ যে কোনো সময় আবার ফিরে আসতে পারে। আমরা সেই রাস্তা যেন তৈরি করে না দিই। আজকে আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন কতগুলো কাজ করছি, যে কাজগুলোর মধ্য দিয়ে কিন্তু ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে।”
ফখরুল বলেন, “আমি অনুরোধ করব, এখানে কবিরা উপস্থিত আছেন, সাহিত্যিকরা উপস্থিত আছেন, আমি মনে করি, আপনাদের এখন দায়িত্ব অনেক বেড়েছে। আগে পারেননি, বলে তাই এখন পারবেন না? এখন আপনারা জনগণকে সঠিকভাবে উদ্বুদ্ধ করুন, অনুপ্রাণিত করুন। সবার মত যে এক হবে তা তো না। আমাদের ভিন্ন ভিন্ন মত থাকবে, এসব মতগুলোকে নিয়ে আমাদের এক সাথেৃ শত ফুল ফুটতে দিতে হবে এবং সেটা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”

‘আওয়ামী ন্যারেটিভস’
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে, তারও আগে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, মুক্তিযুদ্ধ, সমস্ত কিছুকে একটা বিকৃত অর্ধ সত্য, সত্য সব কিছু মিলিয়ে টিলিয়ে একভাবে তারা ন্যারেটিভ তৈরি করেছে। সেই ন্যারিটিভের উদ্দেশ্য হলো চিরদিন দরকার আওয়ামী লীগ সরকার। কারণ লুটপাট না চালাইলে বাঁচতে পারবে না। ওবায়দুল কাদের বলে গিয়েছিল, ‘এই নির্বাচনে আমাদের বিজয় হতে হবে। তা না হলে গাট্টি বোচকা নিয়ে বিদেশে যেতে হবে কিংবা জেলের ভাত খেতে হবে।’ সুতরাং তারা বুঝেছে যে, বাঘের পিঠে চড়ছি নামা অত সহজ না।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভ ইজ আ রং ন্যারেটিভ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ খালি একক ব্যক্তিত্বে হয় নাই। আমি মনে করি ছবি নামানো না, এখানে একাধিক ছবি থাকা উচিত। ইতিহাসের এই সত্যটা আমাদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দ্যাট ইজ এ ডিফারেন্ট ন্যারেটিভ। দেশের নায়ক কোনো ব্যক্তি না, নায়ক হল দেশের জনগণ। এই জায়গাটার ওপর স্ট্রেস করে এবং তার সেনাপতি একাধিক ছিল। শেরে বাংলা, মাওলানা ভাসানী, মনির সিং, অমল সেন, কর্নেল তাহের, জেনারেল জিয়াউর রহমান এভরিবডিৃ কনট্রিবিউশনের স্বীকৃতি দিতে হবে। তাহলে প্রপার ন্যারেটিভটা এখানে আসবে।”

‘রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে পরিবর্তন জরুরি’
নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে কোনো সংস্কার টিকবে না।সংস্কার আজকে মনে হবে আছে, শক্তিশালী হয়েছে। ধীরে ধীরে সেটা বিবর্ণ হতে থাকবে, মলিন হতে থাকবে। একসময় ইউজলেস হয়ে যাবে। যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা কেন আলোচনায় বসবে না, কেন সরকার এ বিষয়ে আলোচনায় বসবে, সেই প্রশ্ন তোলেন মান্না।
তিনি বলেন, “সরকার কি সব বলতে পারবে? কনস্টিটিউশন জটিল জিনিস। আমি তো উপদেষ্টামণ্ডলীর মধ্যে কনস্টিটিউশনাল চেইঞ্জ বোঝাতে পারবেন এরকম মানুষই দেখি না। একজন-দুইজনের নাম যদি বলতেও পারি, তাকে কেউ দেখতে পারে না এখন। এরকম একটা অবস্থা হয়েছে।”

‘ঐক্য ধরে রাখতে হবে’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “চট্টগ্রামের ঘটনা একটা উসকানি ছিল, একটা ধর্মের নামে, সম্প্রদায়ের নামে ধর্মীয় দাঙ্গা বাধানোর জন্য। একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর জন্য সেখানে অনেকে অপেক্ষা করছিল যে, এর মধ্য দিয়ে প্রতি অভ্যুত্থানের একটা তৎপরতা জারি রাখা যায় কিনা।”
সেখানে ধৈর্য্য, সংবেদনশীলতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে নতুন একটি উদাহরণ তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সারা বাংলাদেশে খেয়াল করবেন, মানুষ কিন্তু জেগে উঠেছে অভ্যুত্থানকে রক্ষা করব, ঐক্যটাকে রক্ষা করব, কোনো উসকানিতে আমরা পা দেব না। এটাই হল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সাফল্যের জায়গা। এই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে, এই ঐক্যকে জাগিয়ে তুলতে হবে।”
চট্টগ্রামের ঘটনার প্রসঙ্গ ধরে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, নৃশংসভাবে একজন আইনজীবীকে হত্যা করে সেখানে সংঘাতের উসকানি তৈরি করা হয়েছে, যাতে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে।
“এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপরে আক্রমণ করার জন্য একটা উসকানি দেওয়া হয়েছে। সেই আক্রমণটা ঘটলে পুরো পশ্চিমা বিশ্বে এটা প্রচার করা যেত যে, এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে। কাজেই বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করা দরকার। পার্শ্ববর্তী দেশসহ যেভাবে বাংলাদেশে আজকে এই অভ্যুত্থান এবং জনআকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে তৎপরতা চলছে, সেখানে আমাদের ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। আমরা সেই জায়গা তৈরি করব।”
তিনি বলেন, “আমাদের যে কাজ রাষ্ট্র পুনর্গঠন বলেন, রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটা গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তের দিকে নিয়ে যাওয়া বলেন, এটা করার জন্য মানুষের সামনে কর্মসূচি ও লক্ষ্য স্পষ্ট করা দরকার। লেখক-শিল্পীদের চাইতে এই ভূমিকা কে বেশি ভালো করে পালন করতে পারেন!”

‘অশনি সংকত’
লেখক সলিমুল্লা খান বলেন, “আমি একটা সাবধানবাণী উচ্চারণ করতে চাই, ৫ অগাস্টের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পর তার ফলাফলকে আত্মসাৎ করার জন্য এতই তৎপর হয়ে উঠেছে যে, এর ফলাফল প্রায় বিফলে যাবে। এখন যে ঘটনা আমরা দুইদিন দেখছি, মনে হচ্ছে যে একটা অশনি সংকেত চতুর্দিকে দেখা যাচ্ছে। হয়ত এটা কালো মেঘ, মানে ঝড়ের পূর্বাভাস এট বলছি না, কিন্তু কালো মেঘ দেখা দিয়েছে।”
এ কারণে কবি-সাহিত্যিক-রাজনীতিবিদ সকলকে জাতীয় প্রশ্নে অভিন্ন অবস্থানে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান সলিমুল্লা খান।
তিনি বলেন, “কোনোক্রমেই আমরা যেন আবার স্বৈরাচারের পথকে সুগম না করি।”
কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনের সঞ্চালনায় বিএনপির নুরুল ইসলাম মনি, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান, কবি হাসান হাফিজ, লেখক আবু সাঈদ, কবি সোহরাব হাসান, মাহবুব মোর্শেদ বক্তব্য দেন।















সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লা স্টেডিয়ামে শহীদ জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু আজ
হেফাজতে ইসলাম কুমিল্লা মহানগরের বিক্ষোভ
ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ৭ জনের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে বিতরণ
ভাষা সৈনিক অজিত গুহ মহাবিদ্যালয়ে জুলাই বিপ্লব-২০২৪ স্মরণসভা
প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে -
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
ইশরাকের পোস্ট শেয়ার করে উপদেষ্টা নাহিদের মন্তব্য
বদলি হলেন ডিএমপির ৬ এডিসি-এসি
৪০ কেজি গাঁজাসহ ধরা পড়লেন নেটফ্লিক্স অভিনেত্রী
১১৭ বছরের মধ্যে রেকর্ড তুষারপাত সিউলে, নিহত ৪
অস্ট্রেলিয়া দলে প্রথমবার ডাক পেলেন ওয়েবস্টার
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২