প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:৫০ এএম |
দেবিদ্বারের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদকে দেখা গেছে ভারতের কলকাতায়। পলাতক এই সাবেক এমপি পাঁচ তারকা বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করছেন। শরীর ঠিকঠাক রাখতে করছেন জিমও। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের নামে নেওয়া লুটের টাকায় খাচ্ছেন উন্নতমানের খাবারও। সেই ছবি আবার গর্বের সাথে পোস্ট করছেন ফেসবুক প্রোফাইলেও। অথচ তার ও তার বাহিনীর হামলায় আহত অনেকে এখনো সুস্থ হয়ে উঠেন নি। প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে সাবেক এমপি আজাদকে হামলা করতে দেখা গেছে আন্দোলনের সময়। মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
পালিয়ে থাকা সেই সাবেক এমপি আজাদের বিলাসী জীবনযাপনের ছবি ফেসবুকে দেখে ক্ষুব্ধ নেটিজেনরা। লিখেছেন অনেক কড়া মন্তব্য। কেউ লিখেছেন ‘আহারে শরীরটা শুকিয়ে গেছে ভাইয়ের।’ জিমের ছবি দেখে কেউ লিখেছে পিস্তল চালানোর জন্য ফিট হতে হবে তাই জিমে ভাই।’
আরেকজন লিখেছেন পিস্তল হাতে নিয়ে যদি দেবিদ্বারের মানুষের সেবা করতে হয় তাহলে সে রকম সেবা দেবিদ্বারের মানুষের দরকার নেই। অন্য একজন প্রশ্ন করে লিখেছেন- ঢাকার নবাবপুর ইসলামী ব্যাংক থেকে দেড়শ’ কোটি টাকা নিয়ে কোথায় পালিয়ে গেলেন ?
জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকার পর দেবিদ্বারের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ কুমিল্লা সীমান্ত পথে ভারতের আগরতলায় পালিয়ে যান। সেখান থেকে যান কোলকাতায়। সেখানে আছেন বিলাশ বহুল ৫ তারকা হোটেল সোনার বাংলায়। বিভিন্ন সূত্র তেমন বলছে। আরেকটি সূত্র বলছে, পাঁচ তারকা হোটেলে তিনি কলকাতাতেই আছেন। তবে সোনার বাংলায় নয়। অন্য একটি হোটেলে। সাধারণত পাঁচ তারকা হোটেলে আধুনিক জিম ও সকালের নাস্তায় বুফেতে বহু ধরনের খাবার থাকে। কলকাতায় থাকলেও সাবেক এমপি আজাদের অভিভাবক খ্যাত কুমিল্লার সাবেক এমপি বাহারের সাথে রয়েছে আজাদের নিবিড় যোগাযোগ। দৈনিক কুমিল্লার কাগজ আগে থেকে নিশ্চিত হলেও আজাদের কোলকাতা থাকার প্রমাণ না থাকায় তা প্রকাশ করা হয়নি।
সোমবার সকালে সাবেক এমপি আজাদের ফেসবুকে তিনি ৪টি ছবি পোস্ট করেন। তাতে তাকে শারীরিক কসরত করতে দেখা গেছে। দেখা গেছে ব্যায়াম শেষে সকালের খাবার খেতে। ব্যায়ামের ছবি ও খাবার খাওয়ার ছবি হোটেল বয় তুলে দিলেও টেবিলে রাখা খাবারের ছবি আজাদ নিজেই তুলেছেন।
কোলকাতায় পালিয়ে থাকা সাবেক এমপি আজাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার একাধিক মামলা রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আবদুর রাজ্জাক রুবেল নামে শ্রমিক দলের এক নেতা হত্যার আসামি তিনি। তার ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদও সে মামলার আসামি। আরেক ছোট ভাই মাসুদের কাছে দাউদকান্দির গৌরিপুরে তিতাসের যুবলীগ নেতা জামাল হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র পাওয়া যায়। বিদেশে পালানোর সময় সে গ্রেফতারও হয়। পরে ভাই আজাদের ক্ষমতা ও অর্থের জোরে ছাড়া পেয়ে যান মাসুদ।
ব্যাংক থেকে বিভিন্ন কায়দায় বিপুল অঙ্কের ঋণ নেওয়া আজাদ অর্থের জোরে প্রথমে দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান হন। উপজেলা নির্বাচনে ভোটের দিন কুমিল্লা শহর থেকে দশটি কালো মাইক্রোবাসে সন্ত্রাসীরা গিয়ে ১০টি কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মেরে আজাদকে পাশ করায়। এরপর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিমের আর্শীবাদে অনেক দূর এগিয়ে যান তিনি। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলেও সবাইকে ম্যানেজ করে স্বতন্ত্র এমপিও হয়ে যান। এমপি হয়ে একই কায়দায় তার ছোট ভাই মামুনুর রশিদকে উপজেলা চেয়ারম্যানও বানিয়ে ফেলেন। যেন আলাদিনের চেরাগ ছিল আজাদের হাতে।
নিজে এমপি, ভাইকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও বাবাকে ইউপি চেয়ারম্যান বানানোর পর দেবিদ্বার ছিলো আজাদের হাতের মুঠোয়। সেই গরমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতাকে প্রতিহত করতে নিজেই পিস্তল হাতে দেবিদ্বার সদরে নেমে পড়েন। পিস্তল হাতের সেই ছবি ভাইরালও হয়।