বৃহস্পতিবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৪
২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ
জুলফিকার নিউটন
প্রকাশ: বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১:১০ এএম আপডেট: ০৫.১২.২০২৪ ১২:৫৪ এএম |

 গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ
কমিউনিস্ট দুনিয়া আজ একটা বড়ো রকমের ওলটপালটের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। বিপর্যয়ের চেহারা একেক রকম। ১৯৮৯ সালের মে-জুন মাসের চিত্রটা মনে করা যাক। পোল্যান্ডের নির্বাচনের ফলাফলে কমিউনিস্ট দলের শঙ্কিত বোধ করার যথেষ্ট কারণ দেখা দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ওদেশের পার্লামেন্টে এখনও অধিকাংশ আসন কমিউনিস্ট দলের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু যে কয়টি আসনে কমিউনিস্ট প্রার্থীর সঙ্গে বিরোধী ‘সলিডারিটি’র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ ছিল তার ভিতর শতকরা নব্বইভাগেরও বেশি আসনে ‘সলিডারিটি’ জয়ী হয়েছে। চীনের ছাত্রআন্দোলন কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ও জনতার ভিতর অভূতপূর্ব সমর্থন লাভ করেছে। অন্য কোনোভাবে আন্দোলনকে দমাতে না পেরে চীন সরকার সৈন্য ডেকে রক্তাক্ত ছাত্রনিধনযজ্ঞ সম্পন্ন করেছে। সোভিয়েত দেশে গর্বাচভের নেতৃত্বের গুণে ঐরকম কোনো অমানুষিক কাণ্ড কোখনও ঘটেনি। ওখানে বাক্স্বধীনতা প্রসারিত হয়েছে। বহুবছর পর এই প্রথম ওদেশের পার্লামেন্টে বেসরকারি কণ্ঠস্বর শোনা গেল। দক্ষিণ ও বামপন্থিদের মাঝামাঝি পথে গর্বাচভকে সাবধানে চলতে হয়েছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। 
ঘটনার এই বৈচিত্র্যের ভিতরও একটা জায়গায় মিল চোখে পড়ে। সব দেশেই গণতন্ত্রের সপক্ষে মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। ওই একটি দাবি কমিউনিস্ট দুনিয়ার রক্ষণশীল নেতা ও শাসকদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করেছে। গণতন্ত্রের দাবির ভিতর রক্ষণশীল শাসকদল পশ্চিমী সংস্কৃতির প্রভাব দেখতে পাচ্ছেন। বিষয়টা আরও একটু গভীরভাবে ভেবে দেখনোর নিশ্চয়ই সময় এসেছে। 
পশ্চিমী প্রভাব কমিউনিস্ট দেশগুলোতে ক্রমেই বেশি করে এসে পৌঁছাচ্ছে এ কথাটা অস্বীকার করা যাবে না। তৃতীয় বিশ্বেও একই ব্যাপারে ঘটছে। তবে আপাতত আমাদের আলোচনার বিষয় কমিউনিস্ট দুনিয়া। পশ্চিমের সঙ্গে কম্যূনিস্ট দেশের যোগাযোগ বেড়ে চলেছে। ব্যাপারটা অনিচ্ছ্য়া ঘটছে এমনও নয়। কমিউনিস্ট দেশগুলো স্বেচ্ছায় যোগাযোগ বাড়িয়েছে। পশ্চিমী প্রযুক্তি তারা আগ্রহ করে চাইছে। মানুষ ও মালপত্রের যাতায়াত বাড়ছে। কয়েক বছরের ভিতর সংবাদবহনের আশ্চর্য উন্নতি ঘটেছে। টেলিভিশনের গুণে এক দেশের ঘটনা ও জীবনযাত্রা অবিলম্বে ছুবি হয়ে অন্য দেশের দর্শকদের সামনে পৌঁছে যাচ্ছে। এসব আজ ঠেকানো মুশকিল।
চীনের ১৯৮৯ সালের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে যাঁরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা এর পিছনে পশ্চিমী প্রভাব দেখছেন। এখন প্রশ্নটা এই। তবে কি এইরকমের ‘অশান্তি’ ঠেকানোর জন্য পশ্চিমের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে হবে? সেটা কি আজ সম্ভব? প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এমন একটা অবস্থায় কি আমরা পৌঁছে যাইনি যে নতুন করে দেওয়াল তুলে পৃথিবীটাকে আর স্থায়ীভাবে খণ্ড খণ্ড করা যাবে না? আরও একটা প্রশ্ন আছে। চীনে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পঞ্চাশ বছর আগে। সোভিয়েত দেশে তো সত্তর বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে। এই সময়ে সমগ্র জনতাকে ও বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে মার্কসবাদে, সরকারি মতবাদে, দীক্ষিত করার চেষ্টা চলেছে অবিরত, সর্বউপায়ে। তবু কেন ছাত্রছাত্রীদের ভিতর ‘পশ্চিমী’ প্রভাব এত দ্রুত, এত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে? কমিউনিস্ট মতবাদে দীক্ষাদানের প্রয়াস কেন ব্যর্থ হয়? পশ্চিমী প্রভাবের দোষ-ত্রুটি অস্বীকার না করেও প্রশ্ন থেকে যায়, আন্দোলন, বন্দুক দিয়ে দমন করেই কি শেষ পর্যন্ত ওই প্রভাব আটাকনো যাবে? এতে কি অনিবার্য পরিবর্তনকে অযথা আরও হিংসাত্মক করে তোলা হবে না?
প্রতিটি দেশের সমস্যা ও ঘটনাবলির পিছনে থাকে কিছুটা সেই দেশের বিশেষ পরিস্থিতির ঘাতপ্রতিঘাত আর কিছুটা যুগের সামান্য ধর্ম বা সাধারণ গতির প্রভাব। যেমন ধরা যাক চীনের সাম্প্রতিক ঘটনাচক্র। এর পিছনে উজিঝুঁকি মারে একটা ক্ষমতার লড়াই, যার একদিকে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী লি পেং আর অন্যদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক চাও জিয়াং। চাও ভরসা রেখেছিলেন ছাত্র-আন্দোলনের ওপর; লি পেং নির্ভর করলেন সেনাবাহিনীর ওপর। প্রবীণ নেতা তেং শিয়াওপিং এবং রাষ্ট্রপতি ইয়াং শাংকুন ছাত্র-আন্দোলনের বিরুদ্ধে  দাঁড়ালেন, ফলে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে চাও জিয়াং পরাজিত হলেন। সেনাবাহিনীর ভিতরও বিভেদ ছিল। তবে তেং শিয়াও পিং কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যান, তাঁর কর্তৃত্ব কার্যকর হলো। এইসব চীনের বিশেষ পরিস্থিতির কথা, চীন বিশেষজ্ঞদের কাজে এইরকম নানা তথ্য পাওয়া যাবে।
সোভিয়েত দেশে কমিউনিস্ট দল শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণির নামে ক্ষমতা দখল করেছিল। উৎপাদনের প্রধান প্রধান উপকরণের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানার অবসান ঘটিয়ে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হবে সমাজের কর্তৃত্ব, এইরকম ছিল লক্ষ্য। সাম্যবাদের এই আদর্শ বহু মানুষকে সেদিন অনুপ্রাণিত করেছিল।












সর্বশেষ সংবাদ
গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ
১৯ বছর পর কুমিল্লায় জামায়াতের কর্মী সম্মেলন
কুমিল্লায় মাদক নিয়ে দ্বন্দ্বে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
কুমিল্লা সদরে জামায়াতের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী দ্বীন মোহাম্মদ
চান্দিনায় অবৈধ ৬ ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল বন্ধ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
ভারতের পেয়াজ-রসুনের দিকে আমরা তাকিয়ে নেই: হাজী ইয়াছিন
দেবিদ্বারে আ.লীগ নেতার অবৈধ স্থাপনাসহ শতাধিক দোকান উচ্ছেদ
কুমিল্লায় আমীরে জামায়াতকে স্বাগত জানিয়ে মহানগরী জামায়াতের মিছিল
এক বিজয় অর্জন করেছো, আরেক বিজয় আসবে
কুমিল্লা থেকে জোবায়ের নিখোঁজ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২