গত ১৫ বছরে দেশে অনেক উন্নয়নকাজ হয়েছে। কিন্তু সেসবের কত শতাংশ নিয়ম মেনে হয়েছে, কতটা টেকসই, তা নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। বিগত সরকারের অর্থে এমন অনেক ভবন বা স্থাপনা তৈরি হয়, যেগুলোতে লোহার রডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় বাঁশ। কোনো কোনোটি নির্মাণ শেষ না হতেই ভেঙে পড়ে। আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে দেশে দুর্নীতির যে বিস্তার ঘটেছিল, তা ছিল নজিরবিহীন। এমন কোনো খাত নেই, যেখানে লাগামহীন দুর্নীতি হয়নি। সেই সীমাহীন দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ পেয়েছে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র’ শিরোনামের প্রতিবেদনে; যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ১৭ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে এবং এর ৪০ শতাংশ বা প্রায় সাত লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা গত রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন।
প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে শেখ হাসিনা ও তার পরিবার এবং তাদের সরাসরি প্রশ্রয়ে রাজনীতিবিদ, আমলা, এমপি, মন্ত্রী, পুলিশসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা শুধু দেশের বাইরে টাকাই পাচার করেছেন ৩০ লাখ কোটিরও বেশি। অন্তর্র্বতী সরকারের গঠন করে দেওয়া শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি পদ্মা সেতু, রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগাপ্রকল্পের ওপর তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই সীমাহীন লুটপাট ও অনিয়ম হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দেড় দশকে দেশে বিভিন্ন খাতে ২৮ ধরনের দুর্নীতি করা হয়েছে। ব্যাংক খাত ছিল সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত খাত।
ব্যাংক খাতে ঋণ জালিয়াতি, অনিয়ম ও ঋণের অপব্যবহার করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় শক্তির অন্যায্য ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকানা দখলে নেওয়া হয়েছিল। এরপর রয়েছে ভৌত অবকাঠামো এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতটিও সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে একটি। অর্থনীতির শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলের গত ১৫ বছরে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কর ফাঁকি, কর অব্যাহতির অপব্যবহার ও সরকারি তহবিলের দুর্বল ব্যবস্থাপনার ফলে রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, ব্যাহত হয়েছে উন্নয়ন।
শ্বেতপত্র কমিটির সদস্যরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, দেশের বড় ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে সাতটির প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকা করে বেশি ব্যয় হয়েছে। ২৯টি বড় প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ বিলিয়ন ডলার বা সাত লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরীক্ষা করা সাতটি প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ছিল এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ভুল ব্যক্তিদের বরাদ্দ দেওয়ায় লাখ লাখ মানুষ বঞ্চিত হয়েছে।
অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে দেশে আইন রয়েছে, বিধি-বিধান রয়েছে, নীতিমালা রয়েছে। রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে দুর্নীতির লাগাম টানতে হবে।