ভারতের
জাতীয় পাতাকার অবমাননা ও হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে
বাংলাদেশিদের সেবা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘অল ত্রিপুরা হোটেল অ্যান্ড
রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এটিএইচআরওএ। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক
সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সোমবার এক জরুরি
বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশি নাগরিকদের সেবা না দেয়ার
সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আমরা ধর্মনিরপেক্ষ
একটি দেশের নাগরিক এবং আমরা সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশে মৌলবাদী
একটি অংশের হাতে আমাদের জাতীয় পতাকার অসম্মান ও সংখ্যালঘুরা নিপীড়নের
শিকার হচ্ছে। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এখন সেটা সীমা ছাড়িয়ে
গেছে।
“বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি যে আচরণ করা হচ্ছে, আমরা তার নিন্দা জানাই।”
গত
৫ অগাস্ট গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পর সংখ্যালঘু, বিশেষ করে
হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সংবাদ প্রকাশ করে আসছিল ভারতীয়
সংবাদমাধ্যমগুলো। এ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছিল।
সম্প্রতি
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ
ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র কয়েকটি ঘটনায় সেই অস্বস্তি নতুন মাত্রা
পেয়েছে।
যার সবশেষ বহিঃপ্রকাশ ঘটে সোমবার বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া
রাজ্য ত্রিপুরার আগরতলায়। এদিন দুপুরের দিকে সেখানকার বাংলাদেশ সহকারী হাই
কমিশনে প্রাঙ্গণে ঢুকে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। পরে তারা সেখানে
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলেছে বলে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও
বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে
বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র সমালোচনাও এসেছে।
বাংলাদেশ মিশনে হামলার বিষয়ে ঢাকায় ভাতীয় হাই কমিশনারকে ডেকে প্রতিবাদও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওদিকে
একইদিন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠাতে ভারতের
কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
এ নিয়েও সমালোচনায় মুখর হয়েছে বাংলাদেশ।
এর
আগে ২৮ নভেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাই কমিশনের সামনে জাতীয় পতাকা এবং
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ
জানিয়েছিল অন্তর্র্বতী সরকার।
বাংলাদেশ নিয়ে কলকাতার পর সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে ত্রিপুরায়।
হোটেল-রেস্তোরাঁর
আগে জাতীয় পতাকার অবনমাননা ও হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে এই রাজ্যের
একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদের কোনো চিকিৎসাসেবা না
দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল।
আগরতলার ওই চিকিৎসাকেন্দ্রটির নাম ‘আইএলএ
হসপিটাল’। ত্রিপুরার স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের দাবির মুখে হাসপাতালটি
বাংলাদেশিদের চিকিৎসাসেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।
হাসপাতালটির চিফ
অপারেটিং অফিসার গৌতম হাজারিকা বলেন, “আমাদের হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশিদের
চিকিৎসা বন্ধের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাই। আখাউড়া ও আইএলএস হাসপাতালে
আমাদের যেসব হেল্প ডেস্ক রয়েছে, সেগুলো আজ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
এর আগে একই সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতার মানিকতলার ‘জেএন রয় হসপিটাল’।
গত শুক্রবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদের চিকিৎসাসেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।
ওই
হাসপাতালের শুভ্রাংশু বখত নামের এক কর্মকর্তা পিটিআইকে বলেছেন, “আমাদের
তেরাঙ্গাসহ (জাতীয় পতাকা) ভারতের বারবার অবমাননার ঘটনা আমরা উপেক্ষা করতে
পারি না। আমাদের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের একটি
প্রতিবাদ।”
আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন
স্থানে ভারতীয় হাই কমিশন ও সহকারী হাই কমিশনগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা
হয়েছে।
এদিকে হামলার জেরে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।