নির্বাচনের
রোডম্যাপের সঙ্গে সংস্কার কার্যক্রমের সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে নির্বাচন
কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন,
নির্বাচনি রোডম্যাপের সঙ্গে কতগুলো জাতীয় উদ্যোগের সম্পর্ক রয়েছে। সংস্কার
কার্যক্রমগুলো রয়েছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। সুতরাং,
একবাক্যে অবশ্যই আমাদের এটি নিয়ে ভাবতে হবে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর)
আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশনের সঙ্গে
মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মতবিনিময়ে
নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলেও তিনি জানান। নির্বাচন কখন
এবং কীভাবে হওয়া উচিত-এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এই কমিশনার
বলেন, আমরা কোনও সময় নিয়ে আলোচনা করিনি। নির্বাচন কীভাবে হওয়া উচিত,
নির্বাচন ভালোভাবে করার জন্য কী করণীয়-সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকের
মিটিংয়ে রোডম্যাপ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে-যখনই হোক
না কেন একটি ভালো সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে করা সম্ভব।
নতুন ইসি রোডম্যাপ
নিয়ে ভাবছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, রোডম্যাপ একটি
সামষ্টিক বিষয়। এর সঙ্গে কতগুলো জাতীয় উদ্যোগ রয়েছে। যেমন- একটা সময় যখন
আসবে যে এখন থেকে নির্বাচন, তখন আমার কত সময় লাগবে। সেরকম প্রস্তুতি
নির্বাচন কমিশনের সবসময় আছে এবং থাকবে। তবে যে রোডম্যাপ আপনারা চাচ্ছেন কয়
তারিখে, কী ঘোষণা করবেন? না এ ধরনের কোনও আলোচনা হয়নি। তবে, আমরা ইতোমধ্যে
কাজ শুরু করেছি। কাজ করছি। আজকেও এনআইডি নিয়ে বসেছি।
বৈঠকের বিষয়ে ইসি
সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা নবগঠিত নির্বাচন
কমিশনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। আমাদের দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। নির্বাচন
ব্যবস্থা সম্পর্কীয় যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের একটা সফল
মতবিনিময় হয়েছে।
তিনি বলেন, ওনারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে
বদ্ধপরিকর। আমরাও সহায়তা করতে এক পায়ে দাঁড়িয়েছি। আমাদের উভয়ের লক্ষ্য একই।
আমরা সেটি অর্জনের জন্য কাজ করছি। তারা যাতে তাদের কাজ সুচারুরূপে করতে
পারেন এবং সফল হন-সেজন্য আমরাও আমাদের পক্ষ থেকে কতগুলো সংস্কার প্রস্তাব
দেবো। আমরা যেসব সুপারিশ দেবো, এর মধ্যে কিছু কমিশন বাস্তবায়ন করবে। কিছু
সরকার করবে এবং বাকিটা সরকার ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে
বাস্তবায়িত হবে। আমরা এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। কতগুলো বিষয় চিহ্নিত
করেছি। এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। আমাদের প্রায় এক মাস সময় আছে। এর মধ্যে
আমরা সুপারিশ করে সরকারের কাছে দেবো।
এক প্রশ্নের জবাবে সুজন সম্পাদক
বদিউল আলম বলেন, কোনও নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। ইসির স্বাধীনতা,
ক্ষমতা, দায়দায়িত্ব থেকে শুরু করে সবই আলোচনায় এসেছে। যত বিষয় নির্বাচন
সংক্রান্ত তার সবই আলোচনায় এসেছে। আমরা ওনাদের কাছে মতামত চেয়েছি। ওনাদের
যদি শেয়ার করার থাকে, সেটা অবশ্যই আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবেন। আমাদের
আলোচনা শুরু হয়েছে, এটা অব্যাহত থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
আমি আগেও বলেছি, নির্বাচন কমিশনের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে। সুষ্ঠু
নির্বাচনের খাতিরে তারা রাতকে দিন ও দিনকে রাত করা ছাড়া সবই করতে পারে। এ
বিষয়ে আইনে যতটা বলা আছে, আদালতের নির্দেশে সেটা আরও সুস্পষ্ট করা আছে।
আইনের যেটা অস্পষ্টতা রয়েছে সেটা তারা পূরণ করতে পারে। তাদের অগাধ ক্ষমতা
দেওয়া আছে।
তিনি বলেন, আমাদের মতামত, আমাদের যে বোঝাপড়া, সেগুলো তাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি। আমার মনে হয় ওনারাও অনুধাবন করেন।
অপর
এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের
আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। তবে মতবিনিময়ে অনেক কিছু উঠে
এসেছে। আমার মনে হয়েছে, উই আর অন দ্য সেম পেইজ। আমাদের মধ্যে খুব একটা
মতপার্থক্য নেই। বস্তুত কোনও মতপার্থক্য চিহ্নিত হয়নি।
তিনি বলেন,
নির্বাচন সংক্রান্ত অনেক অপরাধ হয়েছে। এটার বিচার হওয়া দরকার, এটাও আমরা
আলোচনা করেছি। যারা অপরাধ করেছে, যাদের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে, তাদের অবশ্যই
বিচারের আওতায় আসতে হবে।
আগের কমিশন থেকে বলা হয়েছিল-ফল প্রকাশের পর
শাস্তির কোনও সুযোগ থাকে না, এ বিষয়ে বদিউল আলম বলেন, তারা ইচ্ছে করলেই এটা
করতে পারতেন। আদালতের রায় আছে গেজেট হওয়ার আগে তারা নির্বাচন বাতিল করতে
পারতেন এবং তাদের পুননির্বাচন দেওয়ারও ক্ষমতা আছে। তবে সেটা তারা প্রয়োগ
করেনি।
বৈঠকের বিষয়ে কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো.
সানাউল্লাহ বলেন, আমরা শুনেছি। ওনারা বলেছেন। ওনারা কীভাবে ভাবছেন সেটা
আমরা শুনেছি। পাশাপাশি আমরাও মতামত দিয়েছি। যে জায়গাটাতে আমরা একই স্থানে
দাঁড়িয়ে আছি, সেটা হচ্ছে কীভাবে একটা সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করা যায়।
প্রেক্ষাপট আপনারাও জানেন আমরাও জানি। আমাদের বড় ঘাটতির যে জায়গাগুলো রয়েছে
সেটি সবাই জানি। এই বিষয়গুলোই আলোচনা হয়েছে। এটা আমাদের প্রথম ও একমাত্র
মিটিং নয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিছু তথ্য আদান-প্রদান করবো। আশা করি
ওনারা সময় বের করে আমাদের সঙ্গে আরও একাধিকবার বসার সুযোগ করে দেবেন। তাতে
আমরা উপকৃত হবো।
নির্বাচনে আস্থার ঘাটতি সব থেকে বড় বলে এক প্রশ্নের
জবাবে তিনি জানান। বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার ওপরে যে আস্থার ঘাটতি তৈরি
হয়েছে, সেটা ফেরত আনতে হবে।
মতবিনিময়ে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিনসহ অন্যান্য কমিশনার এবং ইসি সংস্কার কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।