বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
১২ পৌষ ১৪৩১
শান্তি-সম্প্রীতির প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ
প্রকাশ: শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১:৩০ এএম |

 শান্তি-সম্প্রীতির প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ


রাজনীতিকদের পর ধর্মীয় নেতারাও দেশে শান্তি, সম্প্রীতি এবং স্বাধীন অস্তিত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। এ প্রশ্নে তাঁরা দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় অন্তর্র্বতী সরকারের পাশে থেকে সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে দেশের বিশিষ্ট আলেম, ইসলামি বক্তা এবং হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টধর্মের নেতারা এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে বিকেল সাড়ে চারটায় সংলাপ শুরু হয়ে সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় শেষ হয়।
দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা গতকাল সব ধর্মের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। গতকাল বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এবং এর আগের দিন মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে ‘জাতীয় ঐক্যের’ লক্ষ্যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে এই সংলাপ শেষ হবে বলে জানা গেছে।
সংলাপের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ধর্মীয় নেতাদের খোলাখুলিভাবে আলোচনার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, প্রকৃত খবরটা জানতে হবে। সেই প্রক্রিয়াটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এত বড় দেশে যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু প্রকৃত তথ্য জানতে হবে, যাতে তাৎক্ষণিক সমাধান করা যায়। যেদিক থেকেই হোক, দোষী দোষীই। তাকে বিচারের আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব।
যাঁরা উপস্থিত ছিলেন
সংলাপে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেকসহ ১৬ জন বিশিষ্ট আলেম অংশ নেন। এর মধ্যে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজেদুর রহমানসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন। তাঁরা হলেন মুহিউদ্দিন রাব্বানী, আহমদ আলী কাসেমী, জুনায়েদ আল হাবিব ও মুনির হোসাইন কাসেমী।
আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) মহাসচিব মাহফুজুল হক, ইসলামি বক্তা ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমদুল্লাহ, মিরপুরের আরজাবাদ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, ফরিদাবাদ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল কুদ্দুছ, লালবাগ মাদ্রাসার মুহাদ্দিস ও ইসলামি বক্তা মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, ছারছিনার দরবার শরিফের প্রতিনিধি ও দারুন নাজাত মাদ্রাসার ওসমান গণি সালেহী, আহলে হাদিস অনুসারীদের প্রতিনিধি আবদুল্লাহ বিন আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদপুরের কাদেরিয়ার তৈয়বিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন আল আজহারী, ফরিদগঞ্জ মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও ধানমন্ডি আত-তাকওয়া মসজিদের খতিব মুফতি সাইফুল ইসলাম।
অন্যান্য ধর্মীয় নেতার মধ্যে সংলাপে অংশ নেন রমনার সেন্ট মেরিজ ক্যাথিড্রাল চার্চের প্রধান পুরোহিত ফাদার আলবাট রোজারিও, পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্টুডেন্ট কাউন্সিলর সিস্টার রেভা ভেরোনিকা ডি কস্তা, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকমল বড়ুয়া, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়, রমনার হরিচাঁদ মন্দিরের ধর্মীয় সহসম্পাদক অবিনাশ মিত্র, গারো সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি (গারো পুরোহিত) খামাল জনসন মৃ প্রমুখ।
এ সময় চার উপদেষ্টা আ ফ ম খালেদ হোসেন, আদিলুর রহমান খান, মাহফুজ আলম ও সুপ্রদীপ চাকমা, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক বলেন, ‘আমরা সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। সম্প্রীতি আছে বলেই আমরা মিলেমিশে আছি। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘু মুসলমানরা এতটা নিরাপত্তার মধ্যে নেই।’
‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ’
সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজেদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেশ কয়েকজন অমুসলিম ভাই (বৈঠকে) স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে না। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নেই পাশের দেশে। চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরে মুসলমান হত্যার পরও কোনো দাঙ্গা হয়নি, কোনো অঘটন ঘটেনি।’ তিনি বলেন, ‘দেশের বিরুদ্ধে যারাই ষড়যন্ত্র করবে, তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কঠিন হস্তে দমন করব।’
মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আর ইসলাম সম্প্রীতির কথাই বলে। আমরা সারা দেশে ধর্ম প্রচারে এ কথাগুলোই বলি। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য সরকার সহযোগিতা চাইলে আমরা করতে প্রস্তুত।’
সংলাপ শেষে শায়খ আহমদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ দেশের ওলামায়ে কেরাম ধর্মীয় নেতারা দায়িত্বশীল। আইনজীবী সাইফুল হত্যাকাণ্ডের পরও দায়িত্বশীলতার কারণে মুসলমানরা ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই।’
ফাদার আলবাট রোজারিও সাংবাদিকদের বলেন, ‘গতকাল রাজনৈতিক দলগুলো যে কথাগুলো বলে গেছে, তার সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি, একাত্মতা জানিয়েছি। কঠিন সময়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ইসকনের ব্যাপারে হিন্দু ভাইদের মনে একটা কষ্ট, এই ক্ষোভ নিরাময় করতে বলেছি। আন্তর্জাতিক সংলাপের ব্যবস্থা করার কথা বলেছি, সারা পৃথিবীর মানুষ যাতে জানতে পারে আমরা সম্প্রীতির মানুষ।’ তিনি মনে করেন, আইনজীবী হত্যার ঘটনায় ভারতীয় গণমাধ্যমে অনেক উসকানিমূলক কথা বলা হচ্ছে।
সিস্টার রেভা ভেরোনিকা ডি কস্তা বলেন, ‘ধর্মীয় নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, আমরা সম্প্রীতির দেশ চাই। মিডিয়া যেন কোনোভাবে অন্যায় ভুল সংবাদ সম্প্রচার না করে। যুবসমাজ যারা নতুন স্বাধীনতার চিন্তা করেছে, তারা যেন সংযত ধৈর্যের জীবন যাপন করে।’
ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে ভালো আছি। আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’ ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোন মিডিয়া কোথায় কী অপপ্রচার করছে, এটা ওদের দেশের বিষয়। আমাদের বিষয় নয়। আমরা কী প্রচার করছি, এটা হচ্ছে বড় বিষয়। আমরা শান্তিতে আছি।’
অধ্যাপক সুকমল বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকায় যেসব কূটনৈতিক মিশন আছে, তারা দেখুক আমরা শান্তির মেলবন্ধনে অবস্থান করতে চাই। বিশ্ব জানুক, বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই।’
অবিনাশ মিত্র বলেন, ‘কিছু লোক ওখানে (ভারত) বসে বিভেদ ছড়াচ্ছে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান মুসলিম আমরা সবাই একত্র হয়েছি। কারও মধ্যে ফাটল নেই, বিভেদ নেই।’
দেশের বিরুদ্ধে যাতে কেউ কোনো ধরনের অপপ্রচার চাপিয়ে দিতে না পারে, সে জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন সংলাপে অংশগ্রহণকারী প্রায় সব আলোচকই।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার যেকোনো মূল্যে যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র রুখবে। কোনো ধরনের হটকারিতা এই সরকার আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অন্তর্গত শক্তি, আমাদের দেশের ভেতরকার সংহতি শক্তি বৃদ্ধি করব। বাইরে যতই ষড়যন্ত্র হোক, আমরা যদি দেশের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ থাকি রাজনৈতিক ও সম্প্রদায়গতভাবে, তাহলে যত অপপ্রচারই চলুক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে-এটাই ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন।’
মাহফুজ আলম সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘যদি কোথাও কোনো নিপীড়ন হয়ে থাকে কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, আমরা বলি না নিপীড়ন হয় না, অলআউট এটা বলা অসত্য। যদি হয়ে থাকে, সেটার বিপরীতে সরকারের নেওয়া ব্যবস্থার কথাও আপনারা প্রচার করবেন।’

















সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লা আসছেন সিইসি
৭ দিনের রিমান্ডে আকাশ মণ্ডল
মাস্টারের প্রতি ক্ষোভের জের ধরেই জাহাজে সাত খুন
দীর্ঘ তের বছর পর ২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের আসামি বিপ্লব আটক
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
ডাকাতদের টার্গেট প্রবাসীর বাড়ি
কুমিল্লার লাকসামে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ; ককটেল বিস্ফোরণ
কুমিল্লা আসছেন সিইসি
চৌদ্দগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্চিতের ঘটনায় আটক ৫
দীর্ঘ তের বছর পর ২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২