৬ ডিসেম্বর ২০১৩ সাল। এ
দিনে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (কুবিসাস)।
কিছু স্বপ্নবাজ তরুণের হাত ধরে 'সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল' স্লোগানকে সামনে
রেখে বস্তুনিষ্ঠতা, পেশাদারিত্ব, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল ক্যাম্পাস
গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছে কুবিসাস। আপোষহীনতার দীপ্ত পদচিহ্ন নিয়ে স্রোতের
বিপরীতে দাঁড়িয়ে অকপটে বলে যাচ্ছে নানা অনিয়মের কথা।
ক্যাম্পাস থেকেই
শুরু হয় সাংবাদিকতা শেখার হাতেখড়ি। সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীলতার বিচরণ হয়
লেখনিতে। এখান থেকেই বের হন ভবিষ্যতের সাংবাদিক দিকপাল। ক্যাম্পাস
সাংবাদিকেরা এসময়টাতে শিক্ষানবিশ সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে থাকেন বিভিন্ন
টিভি, অনলাইন এবং প্রিন্ট মিডিয়া গুলোতে কাজ করে এখানে একেকজন নিজেকে গড়ে
তোলেন ক্যাম্পাস সাংবাদিক হিসেবে।
সংবাদ, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা এ তিনটি
বিষয়ের সঙ্গে যখন ক্যাম্পাসের কোন শিক্ষার্থী যুক্ত থাকেন তখন সেই
শিক্ষার্থী হয়ে ওঠেন অনন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা মানেই প্রতিনিয়ত
সংবাদ লেখা ও সংবাদ শেখার জায়গা। লাল মাটির ক্যাম্পাসেও সাংবাদিকতার প্রতি
অগাধ ভালোবাসা রেখে পড়াশোনার পাশাপাশি একদল তরুণেরদের ক্যাম্পাস সাংবাদিক
হিসেবে গড়ে তুলছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (কুবিসাস)।
১১
বছর ধরে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ধারায় ব্যালট-ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব
নির্ধারণ করে আসছে কুবিসাস। প্রতিবছর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমিতির নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয়। সমিতির সংবিধান অনুযায়ী সমিতির সদস্য পদ লাভ করেছেন এমন সকল
সদস্যই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।
দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস সাংবাদিক
সংগঠনের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য বাড়াতে হাতে নেওয়া হয় বিভিন্ন
কর্মসূচি। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে কুবিসাস বরাবরই সোচ্চার।
দেশের যে কোন সংকটে এর অবস্থান চোখে পড়ার মত। বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবের
সময়ও সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা জীবনবাজি রেখে ভূমিকা পালন করেছে। দেশের কোন
সাংবাদিক আক্রান্ত হলে প্রতিবাদের ঝড় তুলে পাশে দাঁড়ায় সংগঠনটি।
কুবিসাস
তার শুরু থেকেই সবকিছুর ওপরে পেশাদারীত্বকে প্রাধান্য দিয়েছে। সুন্দর
শিক্ষাঙ্গণ, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, নিরাপদ পরিবেষ্টনী গড়ে তোলার জন্য
আপ্রাণ কাজ করে যাচ্ছে সাংবাদিক সমিতির প্রতিটি কর্মী। তাদের কলমে উঠে
এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অর্জন, সমস্যা, সম্ভাবনা, দুর্নীতি ও অনিয়ম।
তারা বারবার প্রমাণ করেছে, ‘সত্য যত তিক্তই হোক তা দেশ ও জাতির কল্যাণে’
তুলে ধরেছেন। বর্তমানে এই সমিতিতে প্রায় অর্ধশতাধিক সংবাদ কর্মী দেশের
শীর্ষস্থানীয় অনলাইন, প্রিন্ট, মিডিয়ায় কাজ করছে।
শুরু থেকে আজ পর্যন্ত
এই সংগঠনটির ইতিহাস পুরোদস্তুর ‘আপোষহীনতার ইতিহাস’। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই
কর্মরত সাংবাদিকরা নানা হুমকি ধমকির শিকার হয়েছেন। এই সংগঠনটির কলমের উপর
আঘাত ও লেখনীকে স্তব্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনায় ন্যাক্কারজনক ভাবে শোকজ ও
বহিষ্কার করা হয় এই সংগঠনের কর্মীদের। কিন্তু তবুও আজ এই সময়ে সংগঠনটি
সুপ্রতিষ্ঠিত। সকল শত্রুতার জাল চিহ্ন করে বিভিন্ন ক্রান্তিকাল পার করে আজ
এই সংগঠনটি মাথা উঁচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ক্যাম্পাসের বটবৃক্ষ হয়ে।
কুবিসাস
এভাবেই সাহসিকতার প্রদীপ জ্বেলে আলোকোজ্জ্বল সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
সংগঠনটি প্রমাণ করেছে আপসহীন পথচলায় সংকট আসতে পারে, সেই সংকট মোকাবিলা করে
সত্য বলতে পারলে তা ইতিহাসের আয়নায় চিরভাস্মর হয়ে থাকে। বস্তুনিষ্ঠতা
রক্ষার্থে ক্যারিয়ার ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের
কল্যাণের কথা।