আজ
৮ ডিসেম্বর, কুমিল্লা মুক্ত দিবস। একাত্তরের এ দিনে রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধের পর
পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় কুমিল্লা। কুমিল্লা মুক্তদিবস পালন
উপলক্ষ্যে কুমিল্লায় আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানমালা।
জানা গেছে,
মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে আইন উদ্দিনের নেতৃতা¡ধীন নবম বেঙ্গল ৫
ডিসেম্বর সকালে কুমিল্লা বালুতুপায় এসে অপেক্ষা করতে থাকে। বালুতুপা থেকে ৮
মাইল দূরে পাকসেনারা বাঙ্কার ডিফেন্স নিয়েছিল। নবম বেঙ্গলের অল্প সংখ্যক
সৈন্য হওয়ায় তারা পাকিস্তানিদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি।
পাকিস্তানিসেনাদের পিছনের দিক দিয়ে ৬ ডিসেম্বর কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করে।
কুমিল্লা শহরের পূর্বদিক থেকে ঢুকে নবম বেঙ্গল কুমিলা শহরের পশ্চিম দিকে ৭
ডিসেম্বর দুপুর ১২ টার দিকে পৌঁছে যায়। দুপুরে বারোটায় ভারতীয় শিখ জাট
ব্যাটালিয়ন কমান্ডার টমসনের সঙ্গে আইন উদ্দিনের দেখা হয়। শিখ জাট বাহিনীর
কাজ ছিল কুমিলা বিমান বন্দর আক্রমণ করা। শিখজাট ব্যাটালিয়ন বিমান বন্দর
আক্রমণ করেছিল ৬ ডিসেম্বর রাতে। রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধ হয় সেখানে। এই আক্রমণে
শিখজাট সেনাদের কয়েকজন আহত ও নিহত হয়। পাকসেনারা বিমান বন্দর ছেড়ে চলে যায়।
মুলত এর মধ্য দিয়ে মুক্ত হয় কুমিল্লা শহর। নবম বেঙ্গলের কনভয় যখন শহরের
পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছিল তখন হাজার হাজার জনতা তাদের স্বাগত জানাতে সামনে
আসে। আইন উদ্দিন তাদের বিশৃংখলা সৃষ্টি না করার আহবান জানান এবং বলেন,
‘আমরা আগে শহর সম্পূর্ণ মুক্ত করি’। কিন্তু কেউই তার কথা না শুনলে তিনি বল
প্রয়োগ করেন। মনঃক্ষুন্ন হয়ে জনতা ফিরে যায়। ৭ ডিসেম্বর বিকাল পাঁচটায়
জেনারেল অরোরা হেলিকপ্টার যোগে কুমিলা বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। জেনারেল
অরোরা আইন উদ্দিনকে শহরের সম্পূর্ণ শান্তি শৃঙ্খলা আয়ত্তে আনার দায়িত্ব
দিয়ে হেলিকপ্টারের পুনরায় ফিরে যান। আইন উদ্দিন শহরে এসেই সমস্ত সোনার
দোকান সীল করে দেন। যতদিন পর্যন্ত না বাংলাদেশ সরকারের কোন রকম আদেশ না আসে
ততদিন পর্যন্ত পাক আমলের ডি সি নুরুন্নবী চৌধুরী ও এস, পিকে কাজ চালিয়ে
যাবার নির্দেশ দেন।
৮ ডিসেম্বর বুধবার প্রত্যুষে কুমিলা শহরকে যেন
হালকা, স্বচ্ছ ও পবিত্র বলে মনে হয়। জনগণ আনন্দে উলাসে একে অন্যের সঙ্গে
আলিঙ্গন ও ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিতে থাকে। সকাল ৮টায় শহরে উত্তর পূর্ব সীমান্ত
থেকে বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষিপ্রতার সঙ্গে
শহরে প্রবেশ করে। আনন্দিত উলসিত জনগণ তাঁদের ফুল দিয়ে স্বাধীনতার অভিনন্দন
জানায়। সে দিনই বাংলাদেশ সরকারের পূর্বাঞ্চল প্রশাসনিক পরিষদের চেয়ারম্যান
জহুর আহমেদ চৌধুরী, পূর্বাঞ্চলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী রকিব উদ্দিন
আহমদ যুব শিবিরের উপদেষ্টা চেয়ারম্যান এডভোকেট আহাম্মদ আলী, যুব শিবিরে
পরিচালক প্রশিক্ষণ ডঃ মোঃ হাবিবুর রহমান, আবদুল আজিজ খান এম পি এ, আবদুর
রশিদ ইঞ্জিনিয়ার এম পি এ, সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ কুমিলা বিমান বন্দরে
পৌঁছান। সেখান থেকে শহরের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন উদ্দিনকে
নিয়ে বিকালে কুমিলা টাউন হলে পৌছান। এসময় বিজয়-উলাস, আনন্দ-বিষাদ মিশ্রিত
এক অবর্ণনীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার মুহূর্তে জহুর আহমেদ
চৌধুরী ও এডভোকেট আহাম্মদ আলী যথাক্রমে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
সে সময় এডভোকেট আহাম্মদ আলীকে কুমিলা জেলা বেসামরিক প্রশাসক নিয়োগের
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়।