সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা চাকরিজীবন শেষে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এককালীন টাকা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, ছুটি পাওনা থাকলে ১৮ মাসের ছুটি, মাসিক পেনশন ও গ্র্যাচুইটির সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মতো সুবিধা পান না। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশনের জন্য রয়েছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট। শিক্ষকদের প্রতি মাসের মূল বেতন থেকে অবসর বোর্ডে কেটে নেওয়া হয় ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ ট্রাস্টে কেটে নেওয়া হয় ৪ শতাংশ টাকা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বাজেটে এবং চাহিদামতো এককালীন থোক বরাদ্দ না দেওয়ায় ৭৪ হাজার শিক্ষকের আবেদনের স্তূপ জমা হয়েছে। এর মধ্যে অবসর বোর্ডে আবেদন জমা রয়েছে ৩৮ হাজার এবং কল্যাণ ট্রাস্টে আবেদন জমা ৩৬ হাজার। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া ৬ শতাংশ অর্থে প্রতি মাসে জমা হয় ৭০ কোটি টাকা। বোর্ডের এফডিআর থেকে আসে তিন কোটি টাকা।
প্রতি মাসে মোট আয় হয় ৭৩ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতি মাসে যতসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে যান, তাদের পেনশনের টাকা পরিশোধ করতে প্রয়োজন ১১৫ কোটি টাকা। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি থাকে ৪২ কোটি টাকা। শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন থেকে পাওয়া ৪ শতাংশ অর্থে কল্যাণ ট্রাস্ট ফান্ডে প্রতি মাসে জমা হয় ৫০ কোটি টাকা।
আর ট্রাস্টের এফডিআর থেকে মাসে পাওয়া যায় দুই কোটি টাকা। ফলে সব মিলিয়ে ট্রাস্টের মাসে আয় হয় ৫২ কোটি টাকা। অথচ প্রতি মাসে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন ৬৫ কোটি টাকা। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি থেকে যায় ১৩ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেতন থেকে কেটে নেওয়া অর্থে পেনশনের পুরো টাকা পরিশোধ করা সম্ভব নয়।
সব শিক্ষকের পাওনা একবারে পরিশোধ করতে সরকারের কাছ থেকে এককালীন সাত হাজার ২০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ প্রয়োজন। প্রতিবছর বাজেটে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।
হাইকোর্ট গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই মর্মে নির্দেশ দেন যে অবসরে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসরকালীন সুবিধা দিতে হবে। একই সঙ্গে বেতন থেকে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হলেও তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, তাদের অবসর ভাতা ছয় মাসের মধ্যে দিতে হবে। উল্লেখ করা হয়, ‘অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য শিক্ষকরা বছরের পর বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে পারেন না।’
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরের পর যাতে যথাসময়ে তাদের অবসর ভাতা পান সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।