লোকশিল্পের প্রধান
ভূ-ভাগ গ্রামাঞ্চল, আর লোকশিল্পীরা প্রধানত শ্রমজীবি মানুষ। গ্রামাঞ্চলের
চাহিদা, ইচ্ছা, স্বপ্ন, অভিজ্ঞতা লোকশিল্পের নানা উপাদান; এই শিল্পের
কৃৎকৌশল সামান্য। লোকশিল্পকে তিনভাবে চিহ্নিত করা যায় ? আধুনিক শিল্পের
পূর্ব অবস্থা বলে; গ্রামীন শিল্পকর্মের নমুনা বলে এবং শ্রমজীবি মানুষ,
কৃষক, ভূমিহীন, সমাজ অন্ত্যজদের শিল্পকর্ম বলে। তিন অর্থেই লোকশিল্প
স্টাবলিশমেন্টের শিল্পের বিপরীত, পরিুশীলিত শিল্পের উল্টো।
লোকশিল্পে
সামাজিক ও ব্যক্তি অভিজ্ঞতা প্রবিষ্ট, গভীর ও ব্যাপ্ত; বস্তুতপক্ষে
লোকশিল্প ঐ অভিজ্ঞতার গভীরতা ও ব্যাপ্তিরই ফল। তবু, শিল্পগতভাবে লোকশিল্প ।
বিবেচিত সরল ও অভিজ্ঞতার অভাব বলে। এই বৈপরীত্য বোঝা দরকার। লোকশিল্পী
অপেশাদার কারকর্মী; এই তাঁর সংজ্ঞা। এই সংজ্ঞার সঙ্গে যুক্ত
স্টাবলিশমেন্টের মতাদর্শগত পরিমন্ডল। পেশা এবং কারকর্মের মধ্যেকার তফাৎ
দুরূপ, তবু এই সীমারেখার তাৎপর্য দূরস্পর্শী। কারুকর্মী ততদিন টিকে থাকেন
যতদিন তাঁর কাজের বিচারের মাপকাঠিতে অংশ গ্রহণ করেন বিভিন্ন শ্রেণী।
পেশাদার তখনই দেখা দেয় যখন কারকর্মীর দরকার পড়ে তার শ্রেণী কিংবা স্তর
ত্যাগ করার এবং স্টাবলিশমেন্টের কাছে পৌছুবার। স্টাবলিশমেন্টের বিচারের মান
ভিন্ন, সে-বিচারে বিভিন্ন শ্রেণীর অংশ গ্রহণ সম্ভব নয়। লোকশিল্পকে আমি
তিনভাবে চিহ্নিত করেছি ঃ ১. আধুনিক শিল্পের পূর্ব-অবস্থা, ২. গ্রামীণ
শিল্পকর্মের নমুনা, ৩, শ্রমজীবি মানুষ, কৃষি, ভূমিহীন, সমাজ-অন্ত্যজদের
শিল্পকর্ম বলে। আধুনিক শিল্পের পূর্বঅবস্থা বাংলাদেশে কাকে বলব? গ্রামীণ
শিল্প কর্মের নমুনা হিসাবে বাংলাদেশে কি সব চিহ্নিত করব? শ্রমজীবি মানুষ,
কৃষক, ভূমিহীন, সমাজ-অন্ত্যজদের শিল্পকর্মের অর্থ কি? এ সকল প্রশ্ন পরস্পর
প্রবিষ্ট এবং সমান্তরাল; এ সকল প্রশ্নের জবাব জরুরী উত্থাপিত সমস্যার
কেন্দ্রে, মূলে পৌছবার জন্য।
লোকশিল্পের এই তিন সনাক্তকরণের প্রধান
ভূভাগ গ্রামাঞ্চলের প্রধান বাসিন্দা কৃষক। কৃষক এবং কৃষকের সহযোগী শ্রেণী
কারকর্মীদের নিয়ে আবর্তিত গ্রামীণ জীবন। এই জীবনের লক্ষ্য বেঁচে থাকা। তার
হালবলদ, তার ফসলাদি, তার জমি; তার। মালিক কিংবা প্রভু ভিন্ন হতে পারে,
কিন্তু সে দাঁতে দাঁত কেটে, চামড়া টানটান করে বেঁচে থাকে। কৃষক অর্থনীতি
সর্বদাই একটি বৃহত্তর অর্থনীতির মধ্যকার অর্থনীতি। এজন্যই বাংলাদেশের
বৃহত্তর অর্থনীতি ও বিকৃত ধনতান্ত্রিক এবং বৈশ্বিক ধনতান্ত্রিক। তুড়ি মেরে
কৃষক-অর্থনীতি টিকে আছে। এ সকল রূপান্তরের মধ্যে কৃষকের টিকে থাকার
সংগ্রামের কানুন প্রায় সময় বদলেছে। কৃষক শ্রেণী অনান্য শ্রমজীবি এবং শোষিত
শ্রেণীর মতন নয়। কারণ এই শ্রেণীটি নিজেদের খাদ্য উৎপন্ন করে বলে কিছুটা
স্বতন্ত্র। আবার প্রয়োজনীয় উদ্বৃত্ত উৎপন্ন করে বলে কৃষক শ্রেণী একটি
প্রবল। অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। নিজেদের খাদ্য উৎপন্ন
করে বলে ঐ ব্যবস্থায় তার অবস্থান সীমান্তে। উদ্বৃত্ত উৎপন্নের দিক থেকে সে
শোষিত। তাকে শোষণ করে প্রবল শ্রেণী, শহরাঞ্চল এবং বৃহত্তর অর্থনীতি।
নিজেদের খাদ্য উৎপন্ন করে বলে সে কিছু পরিমাণ স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র। এই
স্বাধীনতা দিয়ে সে প্রতিরোধ করে প্রবল শ্রেণী এবং রাষ্ট্রকে এবং একই সঙ্গে
স্বাতন্ত্রের দিক থেকে নিজেদের দিকে তাকিয়ে থাকে; তার গ্রামীণ সমাজ, তার
পরিবার, তার হালবলদ, তার তৈজসপত্রের দিকে। এ কারণেই গ্রামীণ সংস্কৃতি
স্বতন্ত্র এবং স্বাধীন সংস্কৃতি নয়।
এ কারণেই লোকজ সংস্কৃতি স্বতন্ত্র,
কিছু পরিমাণ স্বাধীন বৃহত্তর এবং প্রবল সংস্কৃতি থেকে। যদি এভাবে দেখি
তাহলে মৌলিক প্রশ্ন হচ্ছে ঃ বাংলাদেশ কি আসলে এক দেশ? আসলে বাংলাদেশ এক দেশ
নয়, বাংলাদেশের সমাজ এক সমাজ নয়, বাঙালি জনসমষ্টি, আসলে পরস্পর বিরোধী এক
লোকসমাজ। এ যেমন পরস্পর বিরোধী বিন্যাস, তেমনি এই বিন্যাস স্তরবিভক্ত।
প্রথমটি শ্রেণীর ইঙ্গিতবহ, দ্বিতীয়টি ক্ষমতার। পরস্পর বিরোধী।
শ্রেণীবিন্যাস সমাজের ক্রিয়াশীলতার ভিত্তি ক্ষমতা। সেই বিন্যাসে ব্যক্তির
কিংবা শ্রেণীর কিংবা সকলের অবস্থান নির্ণীত। সেজন্য শ্রেণীবিন্যস্ত সমাজে
যারা শাসক, তাদের অবস্থান কেন্দ্র শহর, প্রবল শ্রেণীর কর্তৃত্ব অর্থনীতির
ওপর; আর জনসমষ্টির অধিকাংশ যে-অঞ্চলের বাসিন্দা তারই ভৌগোলিক নামঃ গ্রাম আর
বাসিন্দাদের নাম ও কৃষক, কারুকর্মী, শ্রমজীবী মানুষ। সেজন্য লোকশিল্পের
অপর অভিধা গ্রামীণ শিল্প, আর লোকশিল্পীদের উৎসারণ কৃষক, কারুকর্মী এবং
শ্রমজীবী মানুষের স্তর থেকে।
গ্রামীণ মানুষ তার পরিবেশ আবিষ্কার করেছে
কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির মধ্যে দিয়ে, ঐ অর্থনীতি কেন্দ্র করে পরিভ্রমণ করেছে
ঋতুচক্র দিবস-রজনী, জন্মমুত্যুর মধ্যে দিয়ে, সেজন্য ঐ আবিষ্কার ও পরিভ্রমণ
তার বোধে ধরা দিয়েছে। প্রতিবেশের ফর্ম এবং টেকচার ঐ বোধের মধ্য দিয়ে সে
শিখেছে। বোধের অভিজ্ঞতায় প্রকৃতির অন্তরঙ্গতা স্পষ্ট, সেজন্য প্রকৃতির নকশা
তার চোখে উজ্জ্বল এবং অন্যান্য মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তার কল্পনায়,
সৃষ্টিশীল। এই উজ্জ্বলতা তার কল্পনাকে উদ্দীপিত করেছে। ফর্মে, রূপকল্পে
এসেছে এভাবেই ইন্দ্রিয়জাত প্রত্যক্ষতা এবং কালো প্লাস্টিসিটি জীবন যাপনের
বিভিন্ন অভিজ্ঞতার বোধ, অনুভূতি এবং চেতনা হচ্ছে ফর্মের নানা উপাদান;
মানবিক ফর্ম এবং প্রাকৃতিক ফর্মে অনবরত ক্রিয়াশীল গভীর অনুভূতিশীলতা,
ব্যাপক বোধ এবং বিদ্যুতের মতন চেতনা, এভাবে তৈরী হয় বিভিন্নতার মধ্যে
সূত্রতা, সম্পর্ক এবং সাযুজ্য ও এভাবে একটি মেয়ের কুঁজো হয়ে বসে থাকা, নৌকো
এবং দো-চালার মধ্যে সাযুজ্যতা তৈরী হয়; এভাবে কথার সূচিকর্ম এবং তাঁত
বোনার মধ্যে সম্পর্ক তৈরী হয়; এভাবে বাঁশ এবং বেতের বেড়া এবং জ্যামিতির
পরিকল্পনার মধ্যে মিল তৈরি হয়; এভাবে পোড়ামাটির কাজ পুতুল এবং দেবতার মধ্যে
সূত্রতা তৈরি হয়; এভাবে লক্ষ্মীর সরায় নদী লহর ওঠে; আবার, শাড়ির আঁচল এবং
নদীর লহরের মধ্যে রূপান্তরিত হয়ে যায় প্রিয়তমার শরীরের গড়ন এবং নদীর উচ্ছল
ঢেউ।
আমি আগে উল্লেখ করেছি কারুকর্মী তখনই পেশাদারে পরিণত হয় যখন সে
নিজের শ্রেণী ত্যাগ করে এবং স্টাবলিশমেন্টের রচিকে নিজের কাজে অনুবাদ শুরু
করে। তার প্রশিক্ষণ তাকে করে তোলে পেশাদার, তাকে শেখায় এক সার বিধিবদ্ধ
দক্ষতা। সে এভাবে দক্ষ হয়ে ওঠে এক সার বিধি ব্যবহারে। এই সব বিধির খুব মিল
আছে সরল অভিজ্ঞতার সঙ্গে কিংবা যে-শ্রেণীর পরিচারক সে-শ্রেণীর সমাজ-আচরণের
সঙ্গে। এভাবে তার মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয় সে যা করছে সবই চিরন্তন। কিন্তু অপর
শ্রেণীর কাজ, যে-শ্রেণীকে সে ত্যাগ করেছে সেই শ্রেণীর কাছে তার এখনকার কাজ
তাদের অভিজ্ঞতা থেকে দূরবর্তী। কেন এমন হয়? এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার মধ্য
দিয়ে আমি চেষ্টা করব লোকশিল্প, লোকশিল্পের বিকল্প ব্যবহার এবং লোকশিল্পের
সঙ্গে প্রবল শিল্পের সামাজিক সম্পর্ক স্পষ্ট করার।
দুই ভিন্ন কাজ ও
কাঁথা কিংবা মসজিদ থেকে এর নজির দেয়া যায়। কাঁথার নকশার সঙ্গে তাঁত বোনার
মিল আছে। কাথার পাড়ের অলঙ্করণ এবং ডুরে শাড়ির পাড়ের অলঙ্করণের মিল স্পষ্ট,
দুটিতেই অফুরন্ত নকশা, পাড় আবার দুটিতেই শক্ত। দু'ক্ষেত্রেই সাধারণত নকশা
রৈখিক কিংবা বৃত্তাকার, নকশার পুনরাবৃত্তি শাড়ির আঁচলে আনে বৈচিত্র এবং
লাবণ্য। কিন্তু জামদানীর নকশা ভিন্ন, জামদানির সঙ্গে সাধারণ তাঁতের শাড়ির
তুলনা যদি করি তাহলে, স্পষ্ট হবে গ্রামবাংলার এই শিল্পের সামাজিক।
যেক্ষেত্রে জামদানীর কারিগর প্রবল শ্রেণীর রচি কেবলি অনুবাদ করে চলেন,
সেক্ষেত্রে খসখসে মোটা উজ্জ্বল বহুরঙা শাড়ি পরেন গ্রামের কৃষক মেয়েরা,
জেলেনীরা, বেদেনীরা।
বাংলাদেশে অতীতে কিংবা বর্তমানে, অধস্তন শ্রেণী
ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার মধ্যে কখনো সক্রিয় ছিলেন না, এখনো নেই। তাঁরা ইতিহাসের
কেন্দ্রে নিজেদের স্থাপন করতে সক্ষম হন নি। সেজন্য তাঁদের শিল্প, সমগ্র
ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে এওঁক, সেজন্য অতীত ঐতিহ্যের মূল্যায়ন মূলত একটি রাজনৈতিক
সমস্যা ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতায় অংশগ্রহণ করার দিক থেকে, ইতিহাসে সক্রিয় হওয়ার
দিক থেকে।যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসাধারণ রাজনীতির কেন্দ্রে পৌছতে না
পারবেন, ততদিন লোকশিল্প এই সমাজে প্রান্তিক থাকবে। এই প্রান্তিক অবস্থানের
দরুণ লোকশিল্পের নবায়নে ব্যবসাদারী প্রবল হয়ে উঠেছে। সেজন্য লোকশিল্পীরা
জীবন যাপনের অভিজ্ঞতা থেকে বিভিন্ন, অজস্র ফর্ম তৈরি করতে সক্ষম হন না।
তারা শোষিত হন, আর তাঁদের শিল্প ব্যবসার পণ্যে পরিণত হয়। সেজন্য মূল প্রশ্ন
হচ্ছেঃ ঐতিহ্যের নবায়ন করবেন তারা? স্টাবলিশমেন্ট, না জনসাধারণ?
স্টাবলিশমেন্ট যদি ঐতিহ্যের নবায়ন করেন, যেমন করছেন বর্তমান মুহূর্তে,
লোকশিল্প পর্যবসিত হয় ব্যবসালারীতে, আর যদি জনসাধারণ নবায়ন করেন তাহলে,
লোকশিল্প পরিণত হয় জীবনের সরঞ্জামে। আর শেষেরটির জন্য জনসাধারণের রাজনীতির
কেন্দ্রে আসা দরকার। বুর্জোয়ারা বর্তমানে বৈচিত্র চান।
উন্নত
ধনতান্ত্রিক দেশগুলিতে কৃৎকৌশল শিল্পের। বিভিন্ন শাখায় যান্ত্রিকতা তৈরি
করেছে, এক ব্যক্তির যা আছে অন্য ব্যক্তিরও তাই। এই সমাজ পরিসরে পিছিয়ে পড়া
দেশগুলো শিল্প ক্ষেত্রে বৈচিত্র যোগায়, তার অধিকাংশ বৈচিত্র আসে লোকশিল্পের
নিকট থেকে। এভাবে লোকশিল্প রপ্তানী শিল্পে পর্যবসিত হতে থাকে। আবার
বুর্জোয়াদের দুই অংশ ও আন্তর্জাতিক এবং দেশজ বুর্জোয়াদের রটি লোকশিল্পে
অনুদিত হতে থাকে। এভাবে কাঁথা, পুতুল, শিকা, সরা, মুখোশ কিংবা নকশা লোক
জীবনের উৎস থেকে সরে যায়। সেজন্য পাটের দুই দামের মতন লোকশিল্পেরও দুই দাম :
দেশের মধ্যে এক দাম, দেশের বাইরে আর এক দাম। দুর্ভিক্ষ, অনটন, মন্দা হলে
পাটচাষীরা যেমন না খেয়ে মারা যায়, তেমনি লোকশিল্পীরাও; কিন্তু কখনো কি
পাটের রপ্তানীকারক মারা যায় না খেয়ে? কিংবা লোকশিল্পের? যে প্রক্রিয়ায় একই
দ্রব্যের, পণ্যের, শিল্পের দুই দাম হয় সে প্রক্রিয়ার নামঃ আন্তর্জাতিক
বাজার এবং বাজারজাত শোষণ। লোক শিল্পের নবায়নের ক্ষেত্রে শোষণের প্রক্রিয়া
বাদ দিয়ে সমস্যার মূলে, কেন্দ্রে পৌছানো সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে
এই দুই সংস্কৃতির ভিন্নতাই বাঙালি সংস্কৃতির অন্তঃসার। এই দুই ভিন্নতা
সমীকরণের ক্রমিকতা তৈরি করে। লোকজ সংস্কৃতি এবং স্টাবলিশমেন্টের সংস্কৃতি
দুই-ই ফলবান হয় যোগাযোগ থেকে এবং এই যোগাযোগের ভিত্তি, কেন্দ্র, মূলে আছে
গুণবাচক বিচ্ছিন্নতা! কিন্তু বিনিময়ের পর্যায়ে এই বিচ্ছিন্নতা হ্রাস পায়,
যেন তিরোহিত হয়েই যায়। এমন অবস্থায় তৈরি হয় সাংস্কৃতিক স্থিতিশীলতা।
ইতিহাসে অবশ্য এমন মুহূর্ত কমই হয়। স্টাবলিশমেন্টের সংস্কৃতি কথাটির মধ্যে
দুটি উপাদান ক্রিয়াশীল, একটি হচ্ছে শ্রেষ্ঠতা, অপরটি হচ্ছে প্রগতি। প্রগতির
ধারক বাহক। স্টাবলিশমেন্ট, সেজন্য কোন এক সময়ে কিংবা স্থানে ক্রিয়াশীল
নির্দিষ্ট সংস্কৃতি অন্যান্য সংস্কৃতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এই বোধটি প্রগতি
ধারণার ইঙ্গিতবহ। সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতার বোধ ক্রিয়াশীল না হলে লোকজ
সংস্কৃতির বিকল্প ভিত্তি, যোগাযোগের অর্থ যথার্থ হয় না। দুই সংস্কৃতির
মধ্যে সহযোগিতার অর্থ অসমতা নয়, ভিন্নতা। এই ভিন্নতার বোধই বর্তমানে
বাংলাদেশে নষ্ট হচ্ছে। বর্তমান মুহূর্তে বাংলাদেশের সংস্কৃতির ক্ষেত্রে
স্টাবলিশমেন্ট অসমতার বোধের ওপর জোর দিচ্ছে। ঢাকা শহরের সৌন্দর্যকরণ তার এক
নমুনা। আর জনসাধারণ লোকজ সংস্কৃতির মধ্যে জীবন যাপনের সরঞ্জাম খুঁজে
পাচ্ছে ও জনসাধারণের জীবন যাপন সেই প্রতিরোধের প্রাত্যহিক নজির।