পাসপোর্ট
আবেদন অনলাইনে দাখিল করার সময়ে বিভিন্ন খরচের পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করতে হয়।
এর মধ্যে একটি ধরন হলো ৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছরের মেয়াদের পাসপোর্ট ২১ দিনের
মধ্যে পাওয়ার জন্য ৫৭৫০ টাকা, ১০ দিনের মধ্যে পাওয়ার জন্য ৮০৫০ টাকা, সুপার
এক্সপ্রেস ২ দিনের মধ্যে পাওয়ার জন্য ১০৩৫০ টাকা হলে বাস্তবে পুলিশ
ভেরিফিকেশন নামে চলে নানা হয়রানি। যেহেতু বর্তমানে অনলাইনে পুলিশ
ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। পাসপোর্ট আবেদনের সাথে পুলিশ
ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট সংযুক্ত করে দিলে পাসপোর্ট আবেদনে পর পুলিশ
ভেরিফিকেশন হয়রানি বন্ধ করা সম্ভব।
এ ছাড়াও পাসপোর্ট করার ফি কমালে
সমস্যা কোথায়? যেখানে বিদেশ গেলে দেশের রেমিটেন্স আয় বেড়ে অর্থনীতিতে
সুবিধা বৃদ্ধি পায়। আমাদের যেখান থেকে প্রাপ্তি বেশি সেখানেই বেশি
সুবিধা দেওয়া উচিত। অভিবাসীরা আমাদের বছরে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার
রেমিট্যান্স পাঠান। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, আমরা এখানে কতটুকু বিনিয়োগ করছি
এই ২৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণের বিপরিতে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের
সরকার এই ২৩ বিলিয়ন ডলার আহরণে কি পরিমান বিনিয়োগ করে থাকেন ?
আমাদের
দেশে জাতীয় বাজেটের দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে।
সরকারের কোনো মন্ত্রণালয় বা ডিপার্টমেন্ট এরকম বিলিয়ন ডলার আয় করে? আমাদের
জাতীয় বাজেটের আকার ১ লাখ ৫০ হাজার কোটির বেশি থাকে । সবচেয়ে কম বরাদ্দ
দেওয়া হয় এই প্রবাসীদের মন্ত্রণালয়ে। এর যৌক্তিকতা কী? আমি মনে করি, এরকম
চিন্তার পেছনে একমাত্র কারণ আমাদের মানবসম্পদকে শোষণ করা।
বাংলাদেশের
অর্থনীতিতে প্রবাসীদের রেমিটেন্স আয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক
মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। জনশক্তি রপ্তানি প্রথম ধাপ
পাসপোর্ট তেরি। পাসপোর্ট দিয়ে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার ভিসার জন্য আবেদন করতে
হয়। পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়ার ফি, জমা দেওয়ার পদ্ধতি ও বিতরনের প্রক্রিয়া
আরো সহজ করা দরকার।
এক সময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল সৌদি
আরব। এর পাশাপাশি ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান ও কুয়েত। কাছের দেশ
মালয়েশিয়াও এক সময় দেশের অভিবাসী কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় ছিল। গত কয়েক দিন
পূর্বে দৈনিক কালের কণ্ঠের পত্রিকায় দেখা যায় মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও
কাতার-বাংলাদেশি কর্মীদের বড় এই তিনটি শ্রমবাজারে পাসপোর্ট জটিলতায় প্রায়
দেড় লাখ প্রবাাসী অবৈধ হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। ছয় মাস অপেক্ষা করেও এই জটিলতা
থেকে সমাধান মিলছে না।
বেশির ভাগ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। সময় মতো
ভিসা নবায়ন করতে না পারলে গ্রেপ্তার ও জরিমানা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাসপোর্ট না পেলে অনেককে দেশেও ফিরতে হতে পারে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ
হাইকমিশন সত্রে জানা যায়, মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশী কর্মী কঠোর
পরিশ্রম করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠায়। অথচ সেখানে এ পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি
প্রবাসী মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ২৮
হাজার কর্মীর পাসপোর্ট ছাপার অপেক্ষায় রয়েছে। বাকি ১৪ হাজারের বেশি
পাসপোর্ট এখনো প্রক্রিয়াধীন। সৌদি আরবে এক লাখের বেশি কর্মীর পাসপোর্ট
আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৮৫ হাজারের বেশি কর্মীর পাসপোর্ট ছাপার অপেক্ষায়
আটকে আছে। কাতারে প্রায় ১০ হাজার কর্মীর পাসপোর্ট আবেদন জমা রয়েছে। সময়মতো
পাসপোর্ট না পেলে তিন দেশের দেড় লাখের বেশি কর্মীর অবৈধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
রয়েছে।
বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীদের ক্ষেত্রে বাস্তবতা এই যে অনেক
পুরনো বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন বাজার খুলছে না। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের
দিক থেকে পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট পিছিয়ে আছে। আর
সে কারণেই আমাদের এই বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আমাদের
রেমিট্যান্সযোদ্ধা, যারা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করছেন, তাদের
নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও
কাতার-এই তিন দেশের দূতাবাস বলছে, এমআরপির বুকলেট, লেমিনেশন ফয়েল পেপার
ঘাটতি ও এমআরপির প্রিন্টিং মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাংলাদেশ থেকে
পাসপোর্ট ছাপা হতে দেরি হচ্ছে।
আমার চাচাত বোনের জামাই মালয়েশিয়া
প্রবাসী কম্পিউিটার ইঞ্জিনিয়ার সামসুল আলম ভূই্য়া থেকে জানা যায় পাসপোর্ট
না থাকায় মালয়েশিয়ায় কেউ কেউ এরই মধ্যে অবৈধ হয়ে গেছেন। অনেকে আবার অবৈধ
হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। সৌদি আরবে পাঁচ-ছয় মাস ধরে এমআরপি পাসপোর্টের জটিলতায়
কারো ইকামা ও কারো ভিসা নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। অনেকে অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন।
পাসপোর্ট
নবায়ন জটিলতায় কাতারে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি চাকরি
হারানোর শঙ্কায় আছেন। ভোগান্তি বাড়ছে রেসিডেন্সি নবায়নেও। যাদের শ্রমে-ঘামে
দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, সেই কর্মীদের প্রবাসীজীবন নিশ্চিত করতে হবে।
একই সঙ্গে দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে। দক্ষ জনশক্তির
রপ্তানি বাড়াতে পারলে রেমিট্যান্সও বাড়বে। নুতুন বাজারও খুঁজতে হবে।
পাসপোর্ট
নিয়ে দীর্ঘদিন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মালয়েশিয়া-সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের
প্রবাসীরা। ইতি মধ্যে প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন,
আপনাদের পাসপোর্টে খুবই সমস্যা হচ্ছে আমরা জানি। যারা আবেদন করেছেন তিন
থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে তারা এমআরপি পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। পাসপোর্ট
প্রাপ্তিতে সৌদি ও মালয়েশিয়ায় অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়ে আইন উপদেষ্টা
বলেন, প্রথম প্রায়োরিটি দেওয়া হবে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াতে। এরপর যেসব
কান্ট্রিতে ডিমান্ড বেশি তাদের ক্ষেত্রে প্রাায়োরিটি দিয়ে সমস্যাটা তিন
থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সমাধান করা হবে। এতো পরিমাণ এমআরপি পাসপোর্ট
ছাপানো হচ্ছে যে আগামী দুই তিন বছরে এই সমস্যা আর হবে না।
পাসপোর্টের
জন্য অনেক দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া পাসপোর্ট যাতে
সহজে করা যায় তার জন্য বড় জেলাগুলোতে পাসপোর্ট অফিস বৃদ্ধি করা যেতে পারে,
বিদেশে যেতে হলে ফিঙ্গার দিতে হয়, গত ১৭ ডিসেম্বর সরজমিনে কুমিল্লা শহরের
বাগিচাগাও কুমিল্লা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে দেখা যায়, ফিঙ্গার
দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রবাসীদের অনেক কষ্ট হচ্ছে, প্রতি দিনই সকাল থেকে
সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাড়িয়ে ফিঙ্গার দিতে হয়। কুমিল্লা জেলা কর্মসংস্থান ও
জনশক্তি অফিসের সহকারি পরিচালক রাহেনুর ইসলাম জানা প্রতি রবিবার ৭০০ থেকে
৭৫০ জন প্রবাসে যাওয়ার জন্য ফিঙ্গার দিতে আসেন, বন্ধের দিন ছাড়া সপ্তাহের
অন্যান্য দিনে ৩৫০ থেকে ৪০০জন ফিঙ্গার দিতে আসেন। বর্তমানে আমাদের মূল
সমস্যা হচ্ছে খোলা মাঠসহ নিজস্ব ভবন দরকার, কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের
সেবার মান বৃদ্ধির জন্য জনবলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বর্তমান সরকার
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাসপোর্টের ফি কমানো ও প্রবাসীদের পাসপোটেৃর সমস্যা
সমাধানের প্রতি নজর দেওয়ার দরকার।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা।