শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
৭ পৌষ ১৪৩১
শীতে রোগের প্রকোপ বাড়ে
অধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:৫৩ এএম |

 শীতে রোগের প্রকোপ বাড়ে

কনকনে ঠান্ডা ও হিমবাহে ব্যাহত হচ্ছে সাধারণ জীবন। শীতে বিভিন্ন জেলায় ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। বয়স্ক ও শিশুরা নিউমোনিয়া, শ^াসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের নভেম্বর থেকে ১৩ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দেড় মাসে শীতে ও শীতজনিত রোগে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে শ^াসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে এবং ১ জনের মৃত্যু হয়েছে ডায়রিয়ায়। ঠান্ডা পরিবেশে ধূলাবালি বেড়ে যায় এবং এ পরিবর্তিত আদ্রতায় শরীর হঠাৎ করে খাপ খাওয়াতে গিয়ে একটু সমস্যা হয়। আমাদের শরীরের ভেতরে টনসিল, ফ্যারিংস, নাসিকা ও গলায় অসংখ্যা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস থাকে। তাপমাত্রা কমে গেলে জীবাণুগুলো বিকশিত হয়, এরপর ইনফেকশন তৈরি করে। শীতে গলার যে সমস্যাগুলো সচরাচর দেখা যায় এবং এ নিয়ে করণীয় কি এটাই এখন আলোচনার বিষয়। 
গলাব্যাথা বা ফেরিনজাইটিস ঃ
জ¦র, গলাব্যথা বা খুসখুসে কাশির সমস্যা হয়। এগুলো সবই ফেরিনজাইটিসের লক্ষণ। অনেক সময় দেখা যায়, শীতের সময় অনেকই সকালে ঘুম থেকে উঠে আর কথা বলতে পারছে না। গলাব্যথা ও গিলতে অসুবিধাসহ বিরক্তিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাসজনিত কারণে এ সমস্যা হয়। এছাড়া শীতকালে তৃষ্ণা খুব কম। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে পরদিন ঘুম থেকে উঠার পর গলা শুকিয়ে গিয়েও ব্যাথা হতে পারে। ফেরিনজাইনিস থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে ঠান্ডা পরিহার করা। যাদের কোল্ড এলার্জি আছে বা ঠান্ডা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাঁরা শীতের রাতে ঘুমানোর সময় একটি পাতলা সুতির মাফলার বা কাপড় পেঁচিয়ে নিতে পারেন। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন, নিয়মিত হাত ধোঁয়ার গরম পানিতে লবন মিশিয়ে কুলি করলে উপকার পাওয়া যায়। গলাব্যথায় চা অত্যন্ত উপকারি। আদার রস, আদা, লবঙ্গ, মধু বেশ আরামদায়ক। ফেরিনজাইটিস রোগীর জন্য গরম পানি, গরম স্যুপ সঙ্গে লেবু বা মধু মিশিয়ে খেলে বেশ আরাম পাওয়া যায়। অ্যান্টিবেকটেরিয়েল এজেন্ট হিসাবে মধু অতুলনীয়। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি পেরাসিটামল ও এন্টিহিস্টমিনই যথেষ্ট। গলার সঙ্গে কানের ব্যথা আসতে পারে। এজন্য গলাব্যথা ২/১ দিনের ভেতর ভাল না হলে নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞর নিকট যেতে হবে।
গলাভাঙ্গা বা কন্ঠস্বর বসে যাওয়া ঃ
যেখান থেকে আমরা কথা বলি সেই ভোকাল কর্ড বা কন্ঠনালী শীতে আক্রান্ত হতে পারে। নাসারন্ধ্র থেকে ফুসফুস পর্যন্ত যে কোন জায়গা শীতে আক্রান্ত হলে এটি সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে থেকেও কন্ঠস্বর বসে যেতে ২ পারে। শীতকালে গলাকে ভিজিয়ে নেয়ার কাজটি কম হলেই গলা ভেঙ্গে যায়। তার উপর শীতকালে বাতাস ভারী হওয়ার কারণে ধুলা, ময়লা সবই বেড়ে যায়। ফলে দূষণের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই সাইনাস ও নাকের সংক্রমণ বেশি হয়। স্বরযন্ত্রের লুব্রিকেশন কমার কারণে ঘষা লেগে খুসখুসে হয়ে যায়। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে রাতে বা ভোরে বের হতে হলে কান, মাথা, গলা ঢেকে বের হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আরামদায়ক মাফলার ব্যবহার করা উচিত। গলার কন্ঠস্বর বসে গেলে গরম পানির ভাপ নিতে পারেন। গরম পানিতে মেনথল মিশিয়ে চোখ বন্ধ করে ভেপার বা ইনহেলেশন সকাল ও রাতে মুখ দিয়ে টেনে নিন। 
টনসিলে ইনফেকশন ঃ
শীতের ভোগান্তিতে টনসিলের ব্যথা অত্যন্ত পরিচিত। জীবাণুঘটিত সংক্রমণ থেকেই টনসিলে ব্যথা হয়। টনসিল এক ধরনের লাসিকাগ্রন্থি যা আমাদের গলার ভেতরে শ^াস ও খাদ্যনালীর মুখে অবস্থিত। শীত এলেই মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কমে যায়। শীতকালে বিশেষ করে শিশুদের ঠান্ডা পানি ও ঠান্ডা খাবার খাওয়া, অপর্যাপ্ত শীতের পোষাক, দুর্বল স্বাস্থ্য, অপুষ্টি, অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় টনসিলের প্রদাহ দেখা দেয়। তবে যে কোন বয়সীরাও এতে আক্রান্ত হতে পারেন। সাধারণত টনসিল ও এডিনয়েডের প্রদাহ ছাড়াও টনসিলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ও শীতকালীন অন্যান্য সমস্যার জন্য ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত। 
এ সময়ে নিউমোনিয়া, ব্রংকিউলাইটিস, ডায়রিয়া, শ^াসকষ্ট, অ্যাজমা ও শ^াসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯৯ হাজার ৫১৭ জন (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে)। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৭২ হাজার ৪২৭ জন ও শ^াসতন্ত্রের রোগী ২৭ হাজার ৯০ জন। শ^াসতন্ত্রের রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত নরসিংদী জেলায়। ঐ জেলায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪ হাজার ৬০ জন। মারা গেছে ৫ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ময়মনসিংহ জেলায় ৯ জন। খাগড়াছড়িতে ৫ জন। ভোলা ও নেত্রকোনায় ২ জন করে মারা গেছেন। এছাড়া খুলনা, পিরোজপুর, বরগুনা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বান্দরবনে ১ জন করে মারা গেছেন। বিশেষজ্ঞগণের মন্তব্য, শীতকালে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অন্যকোন জীবানুর সংক্রমনের আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, ২১ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা সামান্য বাড়া-কমার মধ্যেই ঘুরপাক খাবে। তবে মাসের শেষের দিকে আবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। ফলে এ সময়ে শীতের তীব্রতা খানিকটা বাড়তে পারে। বছরের শীতলতম মাস হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই জানুয়ারীতে শীত সবচেয়ে বেশি থাকবে।
লেখক: প্রাক্তন অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ














সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লায় অটোচালকের মৃত্যুর ঘটনা ভাইরাল;
কুমিল্লায় রোপা আমন ধান কাটার উৎসব
কুবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন নিয়ে উদ্যোগ নেই
নগরীর চাঙ্গিনীতে দখলকৃত সরকারি রাস্তাটি আজও দখলমুক্ত হয়নি
যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ লাকসামে ইঞ্জিন লাইনচ্যুত, আড়াই ঘন্টা পর ছেড়ে গেলো ট্রেন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
লটারীতে যাদের নাম আসেনি, তারা যাবেন কোথায় ?
কুমিল্লায় অটোচালকের মৃত্যুর ঘটনা ভাইরাল;
কুমিল্লায় ঝগড়া থামাতেগিয়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
মনোহরগঞ্জে আইডিয়াল ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ অ্যাসোসিয়েশনের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
কুমিল্লায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২