সংকট চারদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে
পারছে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
বেশির ভাগ মানুষ
পরিবারের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে পারছে না। অর্থ উপদেষ্টা এক ধরনের
অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সরবরাহ সিন্ডিকেট ভাঙা কঠিন।’ এর মধ্যে আরো
বড় দুঃসংবাদ দিচ্ছে আমাদের শিল্প খাত। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে
বলা হয়, একের পর এক সংকট ও অভিঘাতে ধুঁকছে দেশের প্রধান প্রধান শিল্প
গ্রুপ।
নানা কারণে তারা তাদের উৎপাদন সক্ষমতার পুরোটা কাজে লাগাতে পারছে
না। এর ফলেও বাজারে সরবরাহের সংকট তৈরি হচ্ছে। আর চূড়ান্তভাবে তার অভিঘাত
গিয়ে পড়ছে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর।
ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যাংকঋণ অত্যাবশ্যক।
অনেকেরই
রয়েছে বিরাট অঙ্কের ব্যাংকঋণ। সম্প্রতি ব্যাংকঋণের সুদের হার অনেক বেড়ে
গেছে। ৯ থেকে বেড়ে তা ১৫ শতাংশের বেশি হয়ে গেছে। এর ফলে ব্যবসায়ীদের ওপর
অনেক বড় চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ক্রমাগত বাড়ছে ডলারের দাম।
বছর দুয়েক আগে
অর্থাৎ ২০২২ সালের মে মাসেও ৮৬ টাকায় ডলার কেনা যেত। বর্তমানে আনুষ্ঠানিক
দাম ১২০ টাকা হলেও খোলাবাজারে দাম ১২৫ টাকার বেশি। এভাবে অতি দ্রুত টাকার
মান কমে যাওয়ার কারণেও প্রচণ্ড চাপে পড়েছে দেশের শিল্প-ব্যবসা-বিনিয়োগ।
রয়েছে শ্রমিক অসন্তোষ। ক্রমাগতভাবে বেতন বৃদ্ধির দাবি উঠছে এবং বেতন
বাড়াতেও হচ্ছে। রয়েছে জ্বালানি সমস্যা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটেও শিল্পের
উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ছে জ্বালানিসহ বিভিন্ন ইউটিলিটির দাম। বাড়ছে
পরিবহন খরচ। ফলে আমাদের শিল্প-কারখানায় বহুমুখী খরচের চাপ তৈরি হয়েছে।
করোনা মহামারিতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প-কারখানা ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই
দেশে শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। এই অবস্থায় শুধু শিল্প-কারখানা নয়,
লাখ লাখ কর্মীর জীবন-জীবিকাও আজ হুমকির মুখে পড়েছে।
নানা রকম সংকটের
মুখে এরই মধ্যে ছোট-বড় অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কারখানা
বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে। কিছুদিন ধরে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি
পোশাক শিল্পে ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজ করছে। অর্ধশতাধিক কারখানা এরই
মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত খরচ বেড়ে যাওয়ায় কারখানা সচল রাখা নিয়েও
দুশ্চিন্তায় আছেন উদ্যোক্তারা। এই সংকট আমাদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে
শুরু করেছে। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা
অর্জন নিয়েও দুশিন্তা তৈরি হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যানেও তা উঠে আসছে।
বেসরকারি বিনিয়োগেও স্থবিরতা ক্রমে বেশি করে দৃশ্যমান হচ্ছে। জানা যায়,
বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান থার্মেক্স গ্রুপের
আওতায় বিভিন্ন স্তরের কারখানা রয়েছে ১৭টি। কাঁচামালের স্বল্পতায়
কারখানাগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। ১০টি কারখানা চলছে মাত্র ৩০
শতাংশ এবং সাতটি চলছে ৬০ শতাংশ সক্ষমতায়। এ রকম অবস্থা আরো অনেক গ্রুপেরই।
শিল্প
খাত, বিশেষ করে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের
মুখে পড়বে। যেকোনো মূল্যে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে হবে।
বেসরকারি খাতের বিদ্যমান সংকট মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার
ভিত্তিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।