গঠনতন্ত্র
অনুযায়ী, প্রতি বছর ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার
কথা থাকলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের কোনো
উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি। ফলে শিক্ষকদের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা দেখা
দিয়েছে।
শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন সংক্রান্ত
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি বছরের ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন
সম্পন্ন করতে হবে। তবে অনিবার্য কারণে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা সম্ভব
না হলে, ১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কার্যনির্বাহী পরিষদ একটি সাধারণ সভা
আহ্বান করবে এবং সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা
হবে।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সভাপতি
নির্বাচিত হয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের এবং
সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক
মেহেদী হাসান।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গঠনের পর থেকে এই
পর্যন্ত নয়বার কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে
প্রতিবারই জয়ী হয়েছে আওয়ামীপন্থী নীল দল। তবে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট আওয়ামী
সরকারের পতনের পর আওয়ামীপন্থী নীল দলের অবস্থান অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে পড়েছে
বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। তাদের মতে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের
প্রভাব শিক্ষক সমিতির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে।
জানা যায়,
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দলে ১৫০ জনেরও বেশি শিক্ষক
রয়েছেন, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে। অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত
সাদা দলে রয়েছেন মাত্র ২০ জন শিক্ষক। এছাড়া, ইউনিভার্সিটি টিচার্স
অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) ফোরামে যুক্ত আছেন প্রায় ১২ জন শিক্ষক।
বর্তমান
কার্যনির্বাহী কমিটির এক সদস্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের
সঙ্গে শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এমন
পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করলে শিক্ষকদের মধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি
হতে পারে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমেও আবার অচলাবস্থা নেমে আসতে
পারে।
বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দল নির্বাচন চাচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তিনি জানান, "সাদা দলের তেমন কোনো আগ্রহ নেই।"
বিএনপি
জামাত সমর্থিত সাদা দলের সদস্য গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার
হোসেনের বক্তব্যে আবার ভিন্ন সুর তিনি বলেন, “শিক্ষক সমিতি কোনো রাজনৈতিক
সংগঠন নয়। এটি পেশাজীবী সংগঠন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন হওয়া উচিত। যারা
দায়িত্বে আছেন, তাদের দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।”
নীল দলের সদস্য
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দুর রহমান বলেন, “যারা দায়িত্বে আছেন, তারা
সাধারণ শিক্ষকদের কাছে দায়বদ্ধ। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন দেওয়া তাদের
দায়িত্ব।”
ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) এর
কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম
শরীফুল করিম বলেন, “শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত স্বার্থ
রক্ষা এবং উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী
নির্বাচন না হওয়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সাংগঠনিক দায়িত্বের অবহেলা
বলেই মনে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে একটি
স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন নিশ্চিত করাই সমিতির প্রধান দায়িত্ব।
সকলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করে সমিতি তার গণতান্ত্রিক
ধারা বজায় রাখতে পারে। দ্রুত সাধারণ সভা আহ্বান করে সবার মতামতের ভিত্তিতে
কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।"
তিনি আরো বলেন, “নীল দল বিগত সময়ে
তাদের কার্যক্রমে নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তারা ফ্যাসিস্ট
সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। এ ধরনের
পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ শিক্ষক সমিতির গণতান্ত্রিক চরিত্রকে ক্ষুণ্ন করেছে।
বর্তমান বাস্তবতায় ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো গোষ্ঠী
শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না বলে আমি মনে করি।
আমরা চাই শিক্ষক সমিতি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক এবং শিক্ষকদের সবার জন্য
সমানভাবে কাজ করুক।”
নির্বাচনের বিষয়ে শিক্ষক সমিতির (ভারপ্রাপ্ত)
সাধারণ সম্পাদক ড. মাহমুদুল হাছান বলেন, “দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও নির্বাচন বন্ধ আছে। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে
নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করব। সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
কবে
নাগাদ সাধারণ সভা হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “ঠিক সময় বলতে পারছি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জটিলতা কাটিয়ে পরিস্থিতি বুঝে উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. আবু তাহেরকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তার কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য,
২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি গঠিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নতুন
কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল
মঈনের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয় মার্চ মাসে। সাত দফা দাবি আদায়ের
লক্ষ্যে শিক্ষক সমিতি একাধিকবার কর্মবিরতি এবং ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেয়। এই
পরিস্থিতির কারণে ১৩ মার্চ থেকে শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব চলে ২৩ জুন পর্যন্ত।
এর ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি একাডেমিক কার্যক্রমেও অচলাবস্থার
সৃষ্টি হয়।