আমাদের অর্থনীতি কি সংকটের দিকে যাচ্ছে? দেশের
অর্থনীতিবিদরা প্রশ্নটি কয়েক বছর আগে থেকেই বলে আসছেন। তারা মনে করছেন,
দেশের অর্থনীতিতে যে ম্যাক্রো স্থিতিশীলতা ছিল, তা অনেকটাই উঠে গেছে।
বিনিয়োগ-ভোগ কমে গেছে। দ্রব্যমূল্যের উল্লম্ফন ঘটছে।
সামনের দিনগুলোতেও
মূল্যস্ফীতি কমার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অনেক
আগেই তারা বলেছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নিম্ন রিজার্ভ, সেই সঙ্গে নিম্ন
বিনিয়োগ এবং নিম্ন ভোগ-এই সব নিয়তি হতে চলেছে।
এটিই এখন বাস্তবতা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দুর্বল অর্থনীতি
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আরো আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছে।
মূল্যস্ফীতি
নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আশঙ্কা করছে, চলতি
অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৮ শতাংশে এসে ঠেকবে। আইএমএফের রিভিউ মিশন
প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার সফল না হলে তার প্রভাব
পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের ওপর পড়বে। বাংলাদেশের বাজারে অব্যাহতভাবে
খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ার প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ
প্রকাশ করেছে আইএমএফ।
এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রব্যমূল্য কমাতে
কার্যকর উদ্যোগ নেওয়াসহ কর অব্যাহতি অপসারণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের রাশ টেনে
ধরা, মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার আরো নমনীয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার
রিজার্ভ ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। আইএমএফ মনে করে, মূল্যস্ফীতির
চাপে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এ জন্য প্রবৃদ্ধি কমবে। রাজস্ব আদায়ও কমেছে।
রিজার্ভের অবস্থাও চাপের মুখে রয়েছে।
সরকার যে টাকা নতুন করে বাজারে
ছেড়েছে, সেটি দ্রুত বাজার থেকে তুলে না নিলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে, যা
দেশের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়াবে বলে মনে করে তারা।
সব মিলিয়ে
চ্যালেঞ্জ বহুমুখী। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে
হলে রাষ্ট্রের প্রধান অঙ্গগুলোকে একযোগে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হয়। কারণ
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার মান এবং অন্যান্য ব্যাপার
জড়িত। দেশের অর্থনীতি অনেক আগে থেকেই ঝুঁকির মধ্যে ছিল। সেখান থেকে
অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রয়োজন। আইএমএফ মনে করছে, ব্যাংক খাতে সুশাসন
ফেরানোসহ রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগেও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ব্যাংকিং খাতের
সমস্যাগুলো সবার জানা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংকিং খাত বড় রকমের ভঙ্গুরতার
ভেতরে রয়েছে। সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজন।
আমাদের প্রধান
সমস্যা মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। সাধারণ মানুষ,
নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষ কষ্টে আছে। কারণ সাধারণ লোকজনের আয় বাড়ছে
না। চাকরির ক্ষেত্রও এখন নিম্নমুখী। এটি একটি চিন্তার বিষয়। বাজারে উৎপাদন
এবং রপ্তানি কমে গেছে। চারদিকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-অনিশ্চয়তা।
ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কিছু বড় ব্যবসায়ী পরিবারের
সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে দেশের
অর্থনীতি ক্ষতির সম্মুখীন।
অন্যদিকে সাংসারিক এবং ব্যক্তিগত জীবনে
মানুষের চাহিদা একটি শান্তিময় ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন। জীবনের একটি গুণগত
মান। সেটি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের অর্থের সংকুলান
হচ্ছে না। ব্যাংকে তারল্য সংকট। বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। আমরা বড় একটি
চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা আছে। রাজনৈতিক
ইস্যু আছে। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার দুর্বলতা আছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন,
সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের সক্রিয় হতে হবে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা
করতে হবে। সব কিছু নির্ভর করছে কিছু বিষয়ের ওপর-সরকার প্রাধিকারগুলো কিভাবে
সাজাচ্ছে, সময়কাল কিভাবে নির্ধারণ করছে, দেশ ও দেশের বাইরে থেকে কতটুকু
সমর্থন পাচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা, অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার
দক্ষতার পরিচয় দেবে।