ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে রাজধানীর কুড়িল থেকে
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ পর্যন্ত ৩০০ ফুট প্রস্থের সড়কটি, যা পূর্বাচল সড়ক বা
৩০০ ফুট সড়ক নামে পরিচিত। রাত যত বাড়তে থাকে, সড়কটি তত বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠতে
থাকে। উচ্ছৃঙ্খল বাইকাররা প্রতিযোগিতা করে বাইক চালায়। বেপরোয়া গতিতে
চলাচলকারী যানবাহনগুলোও হন্তারকের ভূমিকায় নেমে যায়।
পত্রিকান্তরে
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বছরখানেক আগে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি
অভিযানের কারণে বাইকের রেস খেলা ও দ্রুতগতিতে গাড়ি চলাচল বেশ কিছুদিন বন্ধ
ছিল। অভিযান বন্ধ হওয়ার পর আবারও শুরু হয়েছে বেপরোয়া গতির তাণ্ডব। সড়কে
পুলিশের বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট থাকলেও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না
উচ্চগতির কারণে দুর্ঘটনা। ফলে প্রায়ই ঘটছে শোকাবহ পরিস্থিতির।
বৃহস্পতিবার
রাত ৩টার দিকে বেপরোয়া গতির প্রাইভেট কারের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র মোটরসাইকেল আরোহী মুহতাসিম
মাসুদ (২২)। গুরুতর আহত হয়েছেন তার দুই সঙ্গী অমিত সাহা (২২) ও মেহেদী
হাসান (২১)। তারা দুজনও বুয়েটের ছাত্র। যারা গাড়িতে ছিলেন, তারাও
শিক্ষার্থী।
তাদের তিনজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানা যায়, প্রাইভেট কারের চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।
জানা
গেছে, গত পাঁচ বছরে এই সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৭৪ জন। এর মধ্যে
শুধু ২০২৪ সালেই নিহত হয়েছে ১২ জন। অন্যদিকে গত তিন দিনে নিহত হয়েছে
পাঁচজন।
রূপগঞ্জ থানার পুলিশ জানিয়েছে, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, লাইসেন্স
ছাড়া গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো, হেলমেট ছাড়া
মোটরসাইকেল চালানো ইত্যাদি অভিযোগে প্রায়ই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের
নভেম্বরে পূর্বাচলের এই সড়কে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১১৯টি গাড়ির বিরুদ্ধে
মামলা হয়েছিল। জরিমানা আদায় করা হয়েছিল দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা। ট্রাফিক আইন
ভাঙার অভিযোগে ১৩টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। পাশাপাশি ১৪টিকে
রেকার দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পাঁচটিকে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়। যৌথ
বাহিনীর অভিযান বন্ধ থাকায় আবারও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর ঘটনা বেড়ে
গেছে।
পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়কটিকে এভাবে মৃত্যুফাঁদ বানিয়ে রাখা
কোনোভাবেই কাম্য নয়। গতি নিয়ন্ত্রণসহ সড়কে যানবাহন চলাচলের শৃঙ্খলা ও
নিরাপত্তা রক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।