মাদকাসক্তি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে চুরি,
ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা রকম অপরাধ। বাড়ছে খুনাখুনি। ভেঙে পড়ছে পরিবার ও সমাজ
কাঠামো।
হারিয়ে যাচ্ছে সব ধরনের অনুশাসন। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একাধিক
প্রতিবেদন থেকে জানা যায় এমন সব তথ্য, যা সমাজের বেদনাদায়ক ও বিপজ্জনক
অধোগতিকেই নির্দেশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা
বাহিনীর কার্যক্রমে শিথিলতার কারণে সারা দেশ মাদকে রীতিমতো সয়লাব হয়ে গেছে।
তরুণদের পাশাপাশি কিশোররাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।
অথচ মাদকের এই সর্বনাশা বিস্তার ঠেকানোর দায়িত্ব যাদের, তারা সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে।
দেশে
তরুণসমাজের অবক্ষয় চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। আগামী দিনের সুনাগরিক গড়ে
উঠবে দেশের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে, সেসব শিক্ষাঙ্গনই হয়ে উঠেছে মাদকের
আখড়া। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা এখন শুধু মাদকসেবী
নয়, অনেকে একই সঙ্গে মাদকের কারবারিও বনে গেছে।
ফলে পাড়া-মহল্লা,
অলিগলিতে এখন উচ্ছৃঙ্খল মাদকসেবীদের বাড়বাড়ন্ত। মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ,
আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে বাড়ছে খুনাখুনি। মাদকের অর্থ সংগ্রহের জন্য
এসব তরুণের অনেকেই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
সুযোগসন্ধানীরা সামান্য অর্থের বিনিময়ে মাদকাসক্তদের দিয়ে নানা অপরাধ করিয়ে
নিচ্ছে। অনেকে ভাড়াটে খুনি হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
আবার যারা অর্থের
জন্য এসবের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে না, তারা চড়াও হচ্ছে পরিবারের ওপর। একটি
সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে, বর্তমানে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা এক কোটির বেশি।
এ ছাড়া মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে বহু পরিবারে চলছে অশান্তি। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে
পরিবারের স্থিতি। সন্তানের হাতে খুন হচ্ছেন মা-বাবা। মা-বাবা বাধ্য
হচ্ছেন, সন্তানকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে কিংবা আরো অসহ্য হলে প্রিয়
সন্তানের প্রাণও কেড়ে নিতে। এরই মধ্যে দেশের কয়েকটি জায়গায় এমন অনেক
মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, বাংলাদেশে ৩০ ধরনের মাদকের প্রচলন
রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, কোকেন, গাঁজা, হেরোইন,
পেথিডিন, সিসা, এলএসডি, টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনলযুক্ত কুশ,
ক্যানাবিনলযুক্ত কান্ডি, তরল ক্যানাবিনয়েড, ম্যাজিক মাশরুম ইত্যাদি।
ফুটপাত, রেললাইন থেকে শুরু করে অনেক বড় হোটেলেও মাদক বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
অনেক মাদক কারবারি ইন্টারনেটও ব্যবহার করছে মাদক বিক্রির জন্য। শুধু তরুণ
বা কিশোর নয়, মাদকসেবীদের মধ্যে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে তরুণী ও কিশোরীর
সংখ্যাও। বাংলাদেশে মাদক আসে মূলত বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে। প্রধান দুটি
মাদকের মধ্যে ইয়াবা আসে মূলত মায়ানমার থেকে এবং ফেনসিডিল আসে ভারত থেকে
পাচার হয়ে। স্থলসীমান্তের পাশাপাশি জলপথেও প্রচুর মাদক আসে। তথ্য বলছে,
বর্তমানে মাছ ধরার ট্রলারগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন উপকূল দিয়ে ব্যাপক হারে
মাদক প্রবেশ করছে। শুধু রাজধানী বা বড় শহরগুলোই নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও
মাদকের ছড়াছড়ি।
মাদকের বিস্তার এভাবে চলতে থাকলে দেশের যুবসমাজ ধ্বংস
হয়ে যাবে। তাই এর লাগাম টানতেই হবে, তা যত কঠোর বা কঠিনই হোক। বিশেষজ্ঞদের
মতে, প্রয়োজনে ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্কার কমিশন’ গঠন করা যেতে পারে।