কুমিল্লার
চৌদ্দগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ভুঁইয়া কানুকে জুতার মালা পরিয়ে
লাঞ্চিত করার ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে তথ্যটি
নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তার
উজ জামান। আটককৃতরা হচ্ছে- উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা গ্রামের
ইসমাইল হোসেন মজুমদার, জামাল উদ্দিন মজুমদার, ইলিয়াছ ভুঁইয়া, ওই এলাকার
মসজিদের ইমাম নাঙ্গলকোটের রায়কোট এলাকার আবুল কালাম আজাদ ও চাঁদপুর সদর
উপজেলার মইশাদী গ্রামের ইমতিয়াজ আবদুল্লাহ সাজ্জাদ।
ওসি আক্তার উজ
জামান জানান, গত রোববার দুপুরে বাতিসা ইউনিয়নের পাতড্ডা এলাকায়
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ভুঁইয়া কানুকে কিছু লোকজন বিব্রতকর কথাবার্তা ও
কর্মকান্ডের মাধ্যমে লাঞ্চিত করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের মধ্য থেকে
বিষয়টি মোবাইল ফোনে ধারন করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ঘটনা
সম্পর্কে অবগত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জাতির বীর সন্তানের লাঞ্চিত করার বিষয়টি
গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে ভিডিও ফুটেজে থাকা ব্যক্তিদের সনাক্ত করে আটক
করতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ৫ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা জানান,
ভিকটিম মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ভুঁইয়া কানুর সাথে একই এলাকার আবুল হাশেম
মজুমদারের দীর্ঘদিন যাবৎ সামাজিকভাবে পূর্ব বিরোধ চলে আসছে। ২০০৮ সালে
কুলিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ভুঁইয়া কানু ভোট কেন্দ্র থেকে আবুল হাশেম
মজুমদারের বড় ভাই আব্দুল হালিমকে মারধর করাসহ কলার ধরে টেনে পানিতে ফেলে
দিয়ে অপমান অপদস্ত করেন। আব্দুল হালিম চলতি বছর মৃত্যুবরণ করেন। ভাইয়ের এই
অপমানকে কেন্দ্র করে রোববার দুপুরে আবুল হাশেম পাতড্ডা বাজার থেকে
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ভুঁইয়া কানুকে ধরে কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে এলাকার লোকজন জমায়েত হলে তাদের কাছে আবুল
হাশেম মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ভুঁইয়া কানুর কি বিচার করা যায় জিজ্ঞাসা
করেন এবং সেখানে অবস্থানরত নয়ন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ভুঁইয়া কানুকে
গ্রামের সকল মানুষের কাছে মাপ চাইতে বলেন এবং এলাকা থেকে চলে যেতে বলেন।
এমনকি কুমিল্লা জেলা আউট হয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। তিনি বাড়িতে যেতে চাইলে
অপমানকারীরা তাকে বাড়িতে যেতে বারন করেন। এ সময় উপস্থিত লোকজন তার গলায়
জুতার মালা পরিয়ে দিয়ে আরো বলেন, আমরা বিগত দিনে বাড়িতে থাকতে পারি নাই।
আটককৃতরা
জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গত রোববার দুপুর অনুমান ১২ঘটিকার সময় কৃষকলীগের
কেন্দ্রীয় নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ভুঁইয়া কানু এলাকায় প্রবেশ করলে
আবুল হাশেমের সামনে পড়ে অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটে।
ওসি আরো জানান, সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ফুটেজ দেখার পর থানা পুলিশ ভূক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার
বাড়িতে গিয়ে তার নিকট হতে ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করে। কিন্তু তাকে
এলাকাতে পাওয়া না গেলেও তিনি বর্তমানে নিরাপদ জায়গায় অবস্থান করছেন বলে তার
ঘনিষ্ঠ লোকজন জানান। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সাথে থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তার সরকারি নাম্বারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে
তিনি সংঘটিত হওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে কোন কিছু বলতে রাজি হননি। এছাড়া
অভিযুক্তদের সম্পর্কেও কোন তথ্য প্রকাশ করেননি। ভূক্তভোগী বীর
মুক্তিযোদ্ধাকে আইনগত সকল সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হলেও তিনি কোন ধরনের
অভিযোগ করতে অস্বীকৃতি জানান। মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান
চালিয়ে ৫ জনকে আটক করা হয়। ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে অন্যদের সনাক্ত ও আটকের
অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ভুঁইয়া কানুর বিরুদ্ধে হত্যা, তথ্য প্রযুক্তি,
মারামারি ও রাজনৈতিক মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। মামলাগুলোতে অভিযুক্ত হয়ে
তিনি জেলখেটেছেন।