গত
প্রায় চার মাস ধরে ভারতের ভিসা কার্যক্রম সীমিত, মেডিকেল ভিসা ছাড়া ভিসার
আবেদন প্রায় বন্ধেন পথে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি
শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ভারতের ভিসা না পেয়ে বিপদে পড়েছেন। শিক্ষার্থীদের
উপস্থিতি ছাড়া ভিসা দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো।
দেশের
প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর এবার উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপে যাওয়া
অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ঢাকায় অবস্থিত মোট ৫২টি দূতাবাস ও হাইকমিশনের মধ্যে
যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড,
ডেনমার্কসহ ইউরোপের মোট ১৩টি দূতাবাস রয়েছে। ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক,
নেদারল্যান্ড, অস্ট্রিলিয়া, পর্তুগাল, বেলজিয়াম গ্রিসসহ ইউরোপের অধিকাংশ
দেশের দূতাবাস ভারতের রাজধানী দিল্লিতে।
ভিসা জটিলতার কারণে এসব
শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর ভিসা
সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় আনার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও
অভিভাবকরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ
ইউনূস বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভিসা সেন্টার
দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের
অনুরোধ জানিয়েছেন।
গত ১৩ ডিসেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় নিউজে দেখা
যায় গত ৯ ডিসেম্বর ইইউর কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ অনুরোধ করেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ইইউর
১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয়
ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার।
এমনিতেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা
গ্রহণে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ইউনেসকো,
ফ্যাকড-ক্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার জরিপের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে বাংলাদেশ
থেকে মোট ৫২ হাজার ৭৯৯ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য বিদেশে যান।
২০২২ সালে ৪৯ হাজার ১৫১ জন এবং ২০২১ সালে ৪৪ হাজার ৩৩৮ জন শিক্ষার্থী
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গেছেন। বাংলাদেশ শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে যাওয়ার
প্রবণতা সংখ্যার দিক দিয়ে বাড়লেও জরিপের তথ্যমতে এখনো প্রতিবেশী ভারত,
নেপাল, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের তুলনায় কম। ভারত থেকে
২০২৩ সালে মোট ৫ লাখ ৮ হাজার ১৭৪ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে
যান।
একই বছর নেপাল থেকে ৮৮ হাজার ৯০৪ জন শিক্ষার্থী এবং পাকিস্তান থেকে
৭১ হাজার ৮৬৫ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গেছেন। বাংলাদেশ থেকে গত
বছর সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৫২৪ শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে যান। এছাড়া ৬ হাজার
৫৮৬ জন যুক্তরাজ্যে, ৫ হাজার ৮৩৫ জন কানাডায়, ৫ হাজার ৭১৪ জন মালয়েশিয়ায়, ৫
হাজার ৪৬ জন জার্মানিতে, ৪ হাজার ৯৮৭ জন অস্ট্রেলিয়ায়, ২ হাজার ৮২ জাপানে,
২ হাজার ৬০৬ জন ভারতে, ১ হাজার ২০২ জন দক্ষিণ কোরিয়ায় এবং সৌদি আরবে ১
হাজার ১৯০ জন উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ ছাড়েন।
এছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন
দেশে যান প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী। এ বছরও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,
কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় উল্লেখযোগ্য-সংখ্যক শিক্ষার্থী বিদেশে যেতে পাচ্ছেন।
তবে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অধিকাংশ দেশে শিক্ষার্থী যেতে পারছেন না।
উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপ যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক
শিক্ষার্থী অন্যান্য দেশের পাশাপাশি মূলত ফিনল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল,
গ্রিস-এ চার দেশের ভিসার জন্য আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছে বিদেশে
শিক্ষার্থী পাঠানোর কনসালটেন্সি এজেন্সিগুলোর একমাত্র সংগঠন ফ্যাকড-ক্যাব।
কিন্তু এই চারটি দেশসহ ইউরোপের অধিকাংশ দেশের দূতাবাস ভারতে।
ভারতের
দিল্লিতে বিদেশি মিশনের সংখ্যা ১৫১টি। ফলে বেশির ভাগ দেশের ভিসা দিল্লি
থেকেই নেওয়ার প্রয়োজন হয়। গত ৫ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি
বিভাগের মাধ্যমে ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ইউরোপের চার দেশের কাছে
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসার জন্য বিকল্প ব্যবস্থার অনুরোধ করা হয়েছিল।
তবে সশরীরে উপস্থিতি ছাড়া তারা ভিসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।
ফরেন
এডুকেশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালটেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব
বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক গাজী তারেক ইবনা মোহাম্মদ জানান ইউরোপীয়
ইউনিয়নভুক্ত অধিকাংশ দেশের দূতাবাস ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত। ভারত
এখন ভিসা দিচ্ছে না বললেই চলে। এমন অবস্থায় দেশের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী
ভিসা জটিলতায় বিদেশে উচ্চশিক্ষায় পথে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা।