মধ্যশীতে সবজির দাম
কিছুটা কমলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম ক্রমান্বয়ে
বেড়েই চলেছে। আমনের ভরা মৌসুম হলেও চালের দাম না কমে বরং বাড়ছে। গণমাধ্যমে
প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দুই মাসের ব্যবধানে চালের দাম কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে
১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি আট টাকা
বাড়ানোর পরও বাজারে তেল কম পাওয়া যায়।
অনেক দোকানি দাম আরো বাড়িয়ে নেন।
ডাল, ছোলা, চিনি, আদা, রসুন, মসলা ইত্যাদি পণ্যের দামও বাড়তি। নতুন করে
বেড়েছে মুরগির দাম। মাছ-মাংসের দামও বাড়তি।
ফলে নিম্নবিত্ত ও স্থির আয়ের
মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো অবর্ণনীয় কষ্টের মুখোমুখি হয়েছে। যারা জীবনে টিসিবির
ট্রাকের পেছনে লাইনে দাঁড়ায়নি, তারাও এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা
করে দুই কেজি ডাল ও দুই লিটারের একটি সয়াবিন তেলের বোতল কিছুটা কম দামে
কেনার জন্য। কোথাও কোথাও ট্রাকের পেছনে হাজার মানুষের লাইন হয়ে যায়, কিন্তু
দেওয়া হয় শ তিনেক মানুষকে। বাকিরা কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর খালি হাতে ফিরে
যায়।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী,
গত নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১৪ শতাংশ। তা নিয়ে দ্বিমত আছে
অনেক বিশ্লেষকের। তারা মনে করেন, বর্তমানে প্রকৃত মূল্যস্ফীতি বিবিএসের
তথ্যের চেয়ে বেশি। প্রতি মাসেই হচ্ছে এমন মূল্যস্ফীতি। কালের কণ্ঠে
প্রকাশিত প্রতিবেদনে গত চার বছরে মূল্যস্ফীতির একটি আংশিক চিত্র তুলে ধরা
হয়েছে।
এতে দেখা যায়, গত চার বছরে পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, চাল, ডাল, রসুন,
আলু, ব্রয়লার মুরগি ও ডিম-এই আট পণ্যের দাম সর্বোচ্চ ১৫৫ শতাংশ পর্যন্ত
বেড়েছে। সেই তুলনায় সাধারণ মানুষের আয় কি বেড়েছে? বাড়েনি, বরং অনেক
ক্ষেত্রে কমেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার কিছু
পদক্ষেপ নিলে বাজারে তার সুফল নেই। গরিব মানুষকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়
চালের মূল্যবৃদ্ধি। চার বছরে মোটা চালেরই দাম বেড়েছে ৯ থেকে ১৭ শতাংশ।
সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি বেড়েছে ৫৪ থেকে ৬৬ শতাংশ। দেশি পেঁয়াজ কেজিতে
৬০ থেকে ১০০ শতাংশ, দেশি মসুর ডাল ১৮ থেকে ৩০ শতাংশ, দেশি রসুন ১১৫ থেকে
১৫৫ শতাংশ, দেশি আলু ৬০ থেকে ৭১ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগি ৫৩ থেকে ৬২ শতাংশ
পর্যন্ত বেড়েছে। ডিমের দাম হালিপ্রতি বেড়েছে ৫১ থেকে ৬১ শতাংশ। প্রকাশিত
প্রতিবেদন থেকে জানা যায় রিকশাচালক জাহাঙ্গীরের আক্ষেপের কথা। আগে রিকশা
চালিয়ে খাওয়াদাওয়ার পরও তার হাতে কিছু টাকা থাকত। এখন সংসারই চলে না।
আমাদের
বাজারে নানা ধরনের কারসাজি চলে। সেই সঙ্গে চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি হলে
বাজার আরো অস্থির হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকটের কারণে এবং আমদানি
পর্যাপ্ত না হওয়ার কারণেও পণ্যমূল্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সেই সঙ্গে
বাজার মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণের অভাবও রয়েছে। সামনে রোজা। এ সময়টায় বাজারে যেন
কোনো ধরনের কারসাজি বেড়ে না যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। টিসিবির পণ্য
বিক্রয়, ওএমএসসহ অন্যান্য কর্মসূচি ব্যাপক করতে হবে। মনে রাখতে হবে,
ভোক্তাদের স্বস্তি দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।