বিগত
নির্বাচনগুলোতে যারা অন্যায় করেছে, তাদের শাস্তির সুপারিশ করা হবে বলে
জানিয়েছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচনব্যবস্থা
সংস্কার বিষয়ে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
বদিউল আলম মজুমদার
বলেন, নির্বাচনে যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিচারের আওতায় এনে এবং নিরপেক্ষ
বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি প্রদান করার দাবি এসেছে। যারাই নির্বাচনে
অপরাধ করেছে, নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছে, কারচুপিকে আশ্রয় দিয়েছে, তাদের
অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা উচিত। এ বিষয়ে সুপারিশ করা হবে।
সভায় রাজশাহীর
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন
সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত
কর্মকর্তারা অংশ নেন। সকাল ১০টার দিকে তাঁদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু হয়। বেলা
দেড়টার দিকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বদিউল আলম মজুমদার।
নির্বাচনব্যবস্থা
সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘আজকে আমরা রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এখানে
আলোচনা করেছি। আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। নির্বাচন
নির্বাসনে চলে গেছে। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে আসা ব্যক্তিদের মতামত
নিয়েছি। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় আমরা যতগুলো সংলাপ করেছি, এটাই বোধ হয়
সবচেয়ে দীর্ঘ সংলাপ। আজকের আলোচনাটা খুব জমেছে। সবাই না বললেও অনেকে মন
খুলে বলেছেন।’
নির্বাচনপদ্ধতি ভেঙে পড়েছে এবং নির্বাচন কমিশনকে
শক্তিশালী করতে হবে উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিদেশে থাকা
নাগরিকদের ভোটাধিকারের সুযোগ দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ও
শক্তিশালী করা, ভোটার তালিকা করা, সংসদের আপার হাউস (উচ্চকক্ষ), লোয়ার হাউস
(নিম্নকক্ষ), রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, বিভিন্ন দলের নিবন্ধন, নির্বাচনী
অপরাধ, আচরণবিধি, গণমাধ্যম আচরণবিধিসহ নির্বাচন প্রাসঙ্গিক যেগুলো
নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ভূমিকা রাখতে পারে, সেসব বিষয় নিয়ে
তাঁরা আলোচনা করেছেন এবং মতামত নিচ্ছেন। আর এই বিষয়গুলো নিয়েই তাঁরা
সুপারিশ করবেন।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম
মজুমদার বলেন, ‘এই মাসের মধ্যেই আমরা নির্বাচনী সংস্কারের প্রস্তাবগুলো জমা
দেব। আমাদের কাজ হলো টেকনিক্যাল। আমরা মতামত নিয়ে যে প্রস্তাবগুলো করব,
সেগুলোর কতগুলো নির্বাচন কমিশন বাস্তবায়ন করবে। কিছু বাস্তবায়ন করবে সরকার,
রাজনৈতিক দলসহ সবাই করবে।’
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে বদিউল
আলম মজুমদার বলেন, একটা কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়, সামনে নির্বাচনে ইভিএম
ব্যবহার হবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও বলেছেন, ‘ইভিএমে নির্বাচন হবে
না।’ কারণ এটা দুর্বল যন্ত্র। এটার মাধ্যমে কারচুপি করা সম্ভব। সবচেয়ে বড়
কথা, কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হলে সেখানে রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকা দরকার।
সবার মতামত থাকা দরকার। শুধু তা–ই নয়, ইভিএম কেনার ব্যাপারে কারিগরি কমিটির
যিনি প্রধান ছিলেন, প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরী, উনিও দ্বিমত করেছিলেন।
ওনার দ্বিমতকে উপেক্ষা করে এটা কেনা হয়েছিল। ইভিএম এবার ব্যবহার হবে না,
এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
রাজনৈতিক দল থেকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ
পাচ্ছেন উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কেউ কেউ তাঁদের মধ্যে দ্বিমত
করছেন। তবে বহু পরামর্শ আসছে। সব বিবেচনায় নিয়ে সবার স্বার্থে, ভবিষ্যৎদের
স্বার্থে এবং যাঁরা রক্ত দিয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের ঋণ শোধ করার
স্বার্থে আন্তরিকতার সঙ্গে প্রস্তাবগুলো জমা দেওয়া হবে।
সকাল ১০টায়
মতবিনিময় সভার শুরুতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার স্বাগত বক্তব্য
দেন। সভায় নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন
টুলি, শাসন প্রক্রিয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বিশেষজ্ঞ মীর নাদিয়া নিভিন,
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের
সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন, বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও
সাবেক সিটি মেয়ক মোসাদ্দেক হোসেন (বুলবুল), জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক
মুরাদ মোর্শেদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলা সভাপতি আহমদ সফি
উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।