কুমিল্লার
লালমাই উপজেলায় জেলা-জরিমানা করেও থামানো যাচ্ছে না তিন ফসলি জমির (কৃষি
জমি) মাটি কাটা। আবাদি জমি ও নদী এবং নদীর পার থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি
কাটা হচ্ছে। মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। জমির উপরের অংশ অর্থাৎ টপ সয়েল
ইটভাটায় যাওয়ায় জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। দ্রুত ইটভাটা ও মাটির দালালদের
বিরুদ্ধে কার্যকর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতিসহ
ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সচেতনরা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
গ্রামের পাকা রাস্তা।
জমির মালিক, ইটভাটা সংশ্লিষ্টরা ও দালালদের
কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, লালমাই উপজেলা ও সীমান্তবর্তী এলাকায়
১৫টি ইটভাটা রয়েছে। এদের বেশির ভাগই অনুমোদনবিহীন। মাটির চাহিদা মেটাতে এসব
ইটভাটার মালিকরা পুরো উপজেলায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিক দালাল নিয়োগ দিয়েছেন।
কৃষি জমির মালিকদের অতিরিক্ত টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মাটি কিনতে দালালদের
দেওয়া হয়েছে বিপুল টাকা। প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক
নেতাদের ম্যানেজ করার নামে দালালরা ইটভাটার মালিকদের থেকে নিয়েছেন
অতিরিক্ত টাকা।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার বাগমারা উত্তর
ইউনিয়নের সৈয়দপুর, জয়কামতা, দত্তপুর, রায়পুর, নোয়াগাঁও,
মৌলভিরহাটখোলা,বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়নগর, পাইকপাড়া, সিধুছি, ভুলইন
দক্ষিণ ইউনিয়নের মোস্তফাপুর, আমুয়া, জামুয়া, ভুলইন, যাদবপুর, ভুলইন উত্তর
ইউনিয়নের হাজাতিয়া, কুসুমবাড়ি, ছোট চলুন্ডা, পেরুল উত্তর ইউনিয়নের আলীশ্বর,
মাতাইনকোট, বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের ভৈরবপুর, বাতাবাড়িয়া, উন্দানিয়া, ভুশ্চি,
বাকই উত্তর ইউনিয়নের মোহনপুর, কাপাসতলা, হাতিলোঠা, বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের
রাজসা, কালোরা, যুক্তিখোলা. প্রেমনল, রানিচোঁ এবং পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের
জাফরপুর, শাকেরাসহ উপজেলার কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক স্পটে ফসলি জমিতে একযোগে
মাটি কাটা হচ্ছে। এসব স্পটে নির্বিঘ্নে মাটি কাটা সম্পন্ন করতে মাটির
দালালরা কৌশল হিসেবে বর্তমান সময়ের ক্ষমতাবান রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের
ভাড়া করেছেন। প্রতিটি স্পটে কমপক্ষে একজন করে রাজনৈতিক কর্মী ভাড়া খাটেন।
উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ বা সচেতন মহলের কেউ মাটি কাটায় বাঁধা দিতে আসলে
রাজনৈতিক কর্মীরা সামনে আসেন।
লালমাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
সোরওয়ার্দি হোসেন বলেন, মাটি বিক্রি করায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটিতে যে
টপসয়েল ও জিপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া মাটিতে যে
জীবাণু থাকে এবং অণুজীবের কার্যাবলী আছে তা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এতে করে দিন
দিন ফসলি জমিতে উৎপাদন ক্ষমতা কমছে। মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি
ক্ষতির মুখে পড়বে। আর এভাবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় যেতে থাকলে আস্তে আস্তে
ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে।
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত র্কমর্কতা (ওসি) মো.
শাহ আলম বলেন, ফসলি জমিতে মাটি কাটা বন্ধে উপজেলা প্রশাসন যখনই পুলিশের
সহযোগিতা চাইবে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমরা নিজে থেকে মাটি কাটা নিয়ে কিছু
করতে পারিনা।
লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার এহসান মুরাদ বলেন, কৃষি
জমিতে মাটি কাটা ও বালি উত্তোলন বন্ধে এই উপজেলায় গত দুইমাসে কমপক্ষে ১০টি
অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। নীতিমালা লঙ্গন করায় মোবাইল কোর্টে কয়েকজন মাটি
ব্যবসায়ীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত পাইপ কেটে নষ্ট করে
দেওয়া হয়েছে। এরপরও মাটি কাটা থামছে না।