রাজধানী ঢাকা শুধু নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে
বছরজুড়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গত কয়েক বছরে রাজধানীতে বড় বড় অগ্নিকাণ্ড
ঘটেছে। জানমালের ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু প্রাণহানি না ঘটলেও বাংলাদেশ সচিবালয়ে
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। গত বুধবার দিবাগত
মধ্যরাতে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭ নম্বর ভবনের
চারটি তলার কয়েকটি দপ্তর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট ছয়
ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও পুরোপুরি আগুন নেভাতে সময়
লেগে যায় ১০ ঘণ্টা। আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হোজপাইপ নিয়ে দ্রুত সচিবালয়ে
ঢোকার সময় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয়েছেন নয়ন নামের এক ফায়ারফাইটার।
সচিবালয়ে এর আগেও আগুনের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু এবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা।
আগুন
লেগেছে ভবনটির দুই মাথায়। আগুনে দীর্ঘ সময় ধরে পুড়েছে পাঁচ মন্ত্রণালয় ও
বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নথি। দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের ৭ নম্বর
ভবনের ষষ্ঠ থেকে নবম তলা পর্যন্ত চারটি ফ্লোর আগুনে পুড়ে গেছে। এতে ছাই
হয়ে গেছে পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথি।
আগুন লাগা ৭ নম্বর ভবনের নবম তলার
পুরোটিতেই রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দপ্তর। ভবনের অষ্টম তলার
পূর্ব অংশে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কয়েকটি দপ্তর। অর্থ
মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দপ্তরও
রয়েছে এখানে। সপ্তম তলায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
ষষ্ঠ তলায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের
দপ্তর রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, সচিবালয়ের ভেতরে থাকা
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে দেখা
হচ্ছে। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
করেছে সরকার। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং পরবর্তী ১০
কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে হবে কমিটিকে। কমিটির
কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ উদঘাটন করা, এর পেছনে
কারো ব্যক্তিগত অবহেলা বা পেশাগত দায় কিংবা অন্য কোনো সংযোগ আছে কি না সেটি
উদঘাটন এবং এমন ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ করবে এই কমিটি। সচিবালয়ের সার্বিক
নিরাপত্তার বিষয়েও সুপারিশ দেবে। এ ছাড়া সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি
নিরূপণে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দুটি কমিটি এবং স্থানীয় সরকার
মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পৃথক আরেকটি কমিটি গঠন করা
হয়েছে। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি মানবসৃষ্ট বিপর্যয়, নাকি ভিন্ন
কিছু-তার উত্তর নিশ্চয় মিলবে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর। কিন্তু কিছু
প্রশ্ন তো জনমনে থেকেই যাবে। কারণ সচিবালয় হচ্ছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ
স্থাপনাগুলোর (কেপিআই) একটি। বাংলাদেশ সচিবালয়ের নিজস্ব একটি
নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে। সেই নিরাপত্তাব্যবস্থাটি কি আদৌ কার্যকর, নাকি
ব্যর্থ?
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা
কেপিআইয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে সারা দেশে কেপিআই
আছে ৫৮৭টি। এগুলোর নিরাপত্তার কার্যক্রম দেখভাল করার জন্য রয়েছে সরকারের
একটি শক্তিশালী নীতিমালা। কেপিআইয়ের নিরাপত্তাসংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা
হয়েছে, নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি তদারকি বাড়াতে হবে।
সচিবালয়ে
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কেপিআইয়ের
নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, দেশের সব
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হবে।