কয়েক বছর ধরেই নানা সংকটের মধ্য দিয়ে
যাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত। বিশেষ গোষ্ঠীর মাধ্যমে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ,
ঋণের নামে লুটপাট ও বিদেশে অর্থপাচার, লাগামহীন খেলাপি ঋণ, ব্যাংকে তারল্য
সংকটসহ আরো অনেক কারণে ব্যাংক খাতে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৪ সাল বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের জন্য মোটেও ভালো যায়নি। ২০২২ সালের মার্চে শুরু হওয়া ডলার সংকট চলতি বছরেও পুরোপুরি দেখা গেছে।
ডলার
বাজারের অস্থিরতায় ২০২৪ সালজুড়ে অস্থির সময় পার করতে হয়েছে। চলতি বছর চরম
তারল্য সংকটে পড়ে ব্যাংকগুলো। আগস্ট মাসে সরকার পরিবর্তনের পর সেই তারল্য
সংকট আরো তীব্র হয়। গ্যারান্টি সহায়তার মাধ্যমে গত এক মাসে মোট ছয় হাজার
৮৫০ কোটি টাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ধার দিয়েছে ১০টি তুলনামূলক সবল ব্যাংক।
পাশাপাশি
২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংকট কাটাতে সব মিলিয়ে ২৯ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা সহায়তা পেয়েছে ব্যাংকগুলো।
বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহে বড় ধস নেমেছে। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ কমাতে নানা
লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হলেও তাতে তেমন সাড়া মেলেনি।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং
খাতে, বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে অনেক দিন ধরেই ঋণের নামে
রীতিমতো লুটপাট হয়েছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। একসময়
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতেই খেলাপি ঋণের এই সংস্কৃতি প্রবল ছিল। পরে সে পথে
পা বাড়িয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোও। দেশের ব্যাংকিং খাতের বড় সমস্যা
হচ্ছে সুশাসনের অভাব, মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ এবং ঋণ জালিয়াতি।
পত্রিকান্তরে
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন
দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের
সেপ্টেম্বরে সেই খেলাপি ঋণ দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় পৌঁছে। অর্থাৎ
গত ১৫ বছরে খেলাপি ঋণ প্রায় ১২ গুণ বেড়েছে।
ব্যাংকিং খাতের সৃষ্ট
সমস্যা সমাধানে এরই মধ্যে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। পত্রিকান্তরে
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন, আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা
প্রত্যাহার, কঠোর নজরদারির মাধ্যমে বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচার রোধ,
মূল্যস্ফীতি কমাতে নীতি সুদ হার বৃদ্ধিসহ আরো কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া
হয়েছে গত ছয় মাসে। বিধ্বস্ত ব্যাংক ও আর্থিক খাত ঢেলে সাজাতে সাহসী পদক্ষেপ
নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্তর্বর্তী সরকারের হাত ধরে পরিবর্তন আসতে শুরু
করেছে আর্থিক খাতে।
দেশের ব্যাংকিং খাতে সমস্যা ও সংকট নতুন কিছু নয়। এই
সমস্যা ও সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে প্রথমেই প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংকের
কর্মতৎপরতা, দক্ষতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ
ব্যাংক দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। এর পাশাপাশি গতানুগতিকতার বাইরে
ব্যাংকগুলোকে অর্থায়নে সৃজনশীলতা দেখাতে হবে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে সুশাসন
নিশ্চিত করা গেলে ব্যাংকিং সেক্টর সবল হবে।