জীর্ণ পুরনোকে পেছনে ফেলে মানুষ
এগিয়ে যায়। প্রত্যাশা থাকে সুন্দর ভবিষ্যতের। তেমনিভাবে আমরা ২০২৪ সালকে
পেছনে ফেলে এসেছি। শুভ-সুন্দরের প্রত্যাশায় বরণ করে নিচ্ছি আরেকটি নতুন
বছরকে। আমরা আশা করি, নতুন বছরে নতুনভাবে শুরু হবে আমাদের পথচলা। বছরের
প্রথম দিনে সব মানুষের আজ একটিই প্রত্যাশা-শুভ হোক, সুন্দর হোক নতুন বছর।
বিদায়
নিয়েছে ২০২৪ সাল। নতুন বছরের নতুন সূর্যোদয়। অন্যান্য দেশের মতো
বাংলাদেশও স্বাগত জানাবে নতুন বছরকে। ভালো-মন্দ মিলিয়ে কেমন গেল বছরটি?
কিন্তু
রাজনৈতিক অঙ্গন নিস্তরঙ্গ ছিল না। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে
শিক্ষার্থীদের ডাকা আন্দোলন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন অবস্থার
সৃষ্টি হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। পতন
হয় সরকারের।
ক্ষমতার পালাবদলে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। কেমন গেল ২০২৪?
দেশে
২০২৪ সালে মূল্যস্ফীতির চাপে ছিল ভোক্তা। বছরজুড়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ১৫
শতাংশের বেশি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হঠাৎ করে চাল, আলু, আটা,
ডিম, মাংসের দাম বাড়তে থাকে।
তার পর থেকে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম
কমেনি। দেশি পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকায় উঠে যায়। ডিমের দাম বেড়ে ডজনপ্রতি ১৮০
টাকায় ওঠে। ২০ থেকে ৩০ টাকার আলু ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। সব ধরনের
চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে যায়।
ভোজ্য তেলের সংকট তৈরি করে লিটারে আট টাকা দাম বাড়াতে বাধ্য করে কম্পানিগুলো। মাছ, মুরগিসহ শাক-সবজির দামও অস্বাভাবিক বেড়ে যায়।
২০২৪
সালে আগের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলে খেলাপি ঋণ। ২০২৪ সালে চরম তারল্য সংকটে পড়ে
ব্যাংকগুলো। বছরজুড়ে মুদ্রাবাজারে ছিল ব্যাপক অস্থিরতা। ব্যাংকগুলোর
পাশাপাশি ডলার বাজারের অস্থিরতায় ২০২৪ সালজুড়ে অসহায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২
হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সেই খেলাপি ঋণ দুই লাখ
৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় পৌঁছে।
২০২৪ সালের প্রথম দিকে রেমিট্যান্সের
গতি ভালো থাকলেও জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তা কমে যায়। সরকার
পরিবর্তনের পর পুনরায় বাড়তে শুরু করে রেমিট্যান্সপ্রবাহ। অন্তর্বর্তী সরকার
গঠনের পর আগস্টে প্রবাসীরা ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স
দেশে পাঠিয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসে দেশে আসে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার,
অক্টোবর মাসে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার ডলার। নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০
হাজার ডলার এবং ডিসেম্বরের প্রথম ২১ দিনে দেশে বৈধ পথে ২০০ কোটি ৭৩ লাখ
মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সৃষ্টি
হয়েছে নতুন অস্থিরতা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত
হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি শপথ নেবেন। সিরিয়ায়
ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন বাশার আল-আসাদ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ২০২৪ সালে তৃতীয়
বছরে গড়িয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে গাজার যুদ্ধের বিস্তার ঘটেছে
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র,
যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, তাইওয়ান ও পর্তুগালে এ বছর নির্বাচন
হয়েছে।
ভালো-মন্দ সব মিলিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০২৪। আসছে ২০২৫। নতুন বছরেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক।