শনিবার ৪ জানুয়ারি ২০২৫
২১ পৌষ ১৪৩১
ইতিহাসের এক সাড়া-জাগানো বছর ২০২৪
গাজীউল হাসান খান
প্রকাশ: বুধবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:৩৮ এএম |


  ইতিহাসের এক সাড়া-জাগানো বছর ২০২৪
মানবজাতির বিভিন্ন উত্থান-পতন, ঘাত-প্রতিঘাত, সমস্যা ও সম্ভাবনার চলমান ইতিহাসে সময় একটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। কোনো মানবগোষ্ঠী কিংবা জাতির জীবন সব সময় এক রকম যায় না। বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনা কিংবা পরিবর্তনের ইতিহাসে কতগুলো সময় অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে। আবার কতগুলো সময় নীরবে-নিভৃতে পার হয়ে যায়।
মানবজাতির পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় কতগুলো সময়, মাস কিংবা বছর অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। সে কারণেই শুধু কোনো নির্দিষ্ট দেশ নয়, বিশ্বব্যাপী মানুষ তাদের জীবন থেকে একটি বছর বিদায় নিলে তারা পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে সে বিদায়ি বছরটি কেমন গেল। সার্বিক বিবেচনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেমন ছিল সে সময়টি। খ্রিস্ট জন্মের বহু আগে থেকেই মানবসমাজে সে চর্চা জারি রয়েছে।
এরই ভিত্তিতে মানুষ নির্ণয় করার চেষ্টা করে একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাদের প্রাপ্তি বা প্রবঞ্চনা কী ছিল? তারা কী হারিয়ে কী পেয়েছে কিংবা কী পেয়ে কী হারিয়েছে। আধুনিকতা কিংবা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর অগ্রগতি নিঃসন্দেহে আমাদের জীবন-জীবিকাকে অনেক জটিল করে তুলেছে। সে কারণেই আমরা অতীতের তুলনায় এখন আরো বেশি বেশি করে খতিয়ে দেখি, আমাদের সময়টি কেমন যাচ্ছে। বিশ্ব ক্রমে ক্রমে আরো ছোট হয়ে আসছে।
তাই এর যেকোনো প্রান্তে কিছু ঘটলে তা অন্যের ওপর প্রভাব ফেলে অতি দ্রুত।
ইতিহাসের এক সাড়া-জাগানো বছর ২০২৪উল্লেখিত বিভিন্ন তাত্ত্বিক বিষয়ের প্রেক্ষাপটেই সময় বয়ে যায়। মাস যায় এবং এরই ধারাবাহিকতায় বছর পেরিয়ে যায়। প্রকৃতির সে নিয়মেই ২০২৪ সাল আমাদের জীবন থেকে বিদায় নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক এবং আমাদের জাতীয় জীবনে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ২০২৪ সালকে আমাদের কাছে অত্যন্ত স্মরণীয় করে রাখবে বলে অনেকের বিশ্বাস।
২০২৪-এর নভেম্বরে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনাপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত কপ২৯ বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন, উন্নত বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার লক্ষ্যে জাপান ও চীনের পক্ষ থেকে চাঁদে মিশন প্রেরণ এবং সর্বোপরি ২০২৩-এর অক্টোবর থেকে হামাস যোদ্ধা ও ইসরায়েলি সংঘর্ষে গাজায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড শান্তিকামী বিশ্ববাসীকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তার পরও ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কার্যকর হয়নি এ অঞ্চলে। তা ছাড়া ২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া আফ্রিকার সুদানের গৃহযুদ্ধ ক্রমেই আরো ব্যাপকতা লাভ করছে। ক্ষমতাসীন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও মোহাম্মদ হামদানের বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে। দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয়েছে ৬০ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ। তেমন একটি বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধ, যা বিশ্বের অর্থনীতি, বাণিজ্য, রাজনীতি ও কূটনীতিতে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করা কিংবা একটি টেকসই আপস-নিষ্পত্তি থেকে এখনো অনেক দূরে এই দুটি বিবদমান প্রতিবেশী দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে এর একটি সুরাহা হবে বলে যারা এত দিন আশায় আশায় ছিলেন, তারা এখনো এই জটিল বিষয়টি নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তবে সেখানে যুদ্ধবিরতি কিংবা সংঘর্ষ বন্ধ হলেও আপস-নিষ্পত্তির ব্যাপারে রাশিয়া ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বে দখল করা রুশ ভাষাভাষী অঞ্চল ছেড়ে দেবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সীমাহীন সন্দেহ। তা ছাড়া জানা মতে, রাশিয়া ক্রিমিয়া বন্দরসহ তাদের প্রাচীন অঞ্চল কোনোমতেই ছেড়ে দিতে রাজি হবে না।
উল্লেখিত অবস্থায় সিরিয়ার বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বাধীন তুরস্ক সমর্থিত সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি গত ৮ ডিসেম্বর রাজধানী দামেস্ক আক্রমণ করে। এতে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের বিতর্কিত একনায়কতান্ত্রিক শাসক বাশার আল-আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যান। উল্লেখ্য, বাশার আল-আসাদের বাবা পরলোকগত হাফিজ আল-আসাদসহ এই পিতা-পুত্র বিগত ৫৩ বছর সিরিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। সিরিয়ার অত্যন্ত সংখ্যালঘু আলাওয়াইট মুসলিম সম্প্রদায়ের এই পিতা ও পুত্র সিরিয়ায় একটি ‘কাল্ট’ ভিত্তিক একদলীয় (বাথ পার্টির নেতৃত্বে) শাসন শুরু করেছিলেন, যার সূচনা হয়েছিল ১৯৭১ সালে হাফিজ আল-আসাদের হাত ধরে। প্রেসিডেন্ট হাফিজ ২০০০ সালে মৃত্যুবরণ করলে তার তরুণ পুত্র বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। এরই মধ্যে ২০১১ সালে আরববিশ্বজুড়ে (উত্তর) স্বৈরাচারী ও একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন (আরব বসন্ত হিসেবে খ্যাত) শুরু হলে বাশার আল-আসাদের পতন প্রায় অবধারিত হয়ে ওঠে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতে হস্তক্ষেপ করে প্রতিবেশী ইরান। কারণ ইরান তখন সিরিয়ার মধ্য দিয়ে হিজবুল্লাহ বাহিনীর কাছে নিয়মিতভাবে অস্ত্র প্রেরণ করত। পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত বেসামাল হয়ে পড়লে ইরান দামেস্ক ও দখলকৃত গোলান হাইট রক্ষার জন্য কৌশলগতভাবে রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুুতিনকে ডেকে এনে গভীরভাবে সম্পৃক্ত করে ফেলে, কিন্তু তাতেও হাল ছাড়েনি সিরিয়ার ন্যাশনাল আর্মি। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কুর্দি বাহিনীকে তার সীমান্ত থেকে উৎখাতের জন্য এইচটিএস ও তাদের মিত্র যোদ্ধাদের সর্বতোভাবে সাহায্য করতে থাকেন। তুরস্কের অভ্যন্তরে এখনো লাখ লাখ সিরীয় উদ্বাস্তু বসবাস করছে। বাশার আল-আসাদের রাশিয়ায় পালানোর পর তার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেয়। শুধু তা-ই নয়, আসাদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গাজী আল-জালিলিও মুক্তিকামীদের সঙ্গে হাত মেলান। হায়াত তাহরির আল-শামের নেতা আবু মোহাম্মদ আল-দুসানি সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি ৭৯.১৯, শিয়া ১৪.১০, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য সম্প্রদায়কে নতুন স্বাধীনতার সুখবর দিয়েছেন। তিনি তাদের নিজ দেশে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন ও জীবনযাপনের নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে এইচটিএস আহমেদ আল-শারাকে অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপ্রধান ও মোহাম্মদ আল-বশিরকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দান করে।
এবার ফিরে আসি ২০২৪ সালে ঘটে যাওয়া নিজ উপমহাদেশের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির দিকে। বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত একটি গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছিল, যা গুরুত্বের দিক থেকে উনসত্তর কিংবা নব্বইয়ের চেয়ে কোনো অংশেই কম ছিল না। গত জুন থেকে শুরু হওয়া ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত জুলাই ও আগস্টে গিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক গণ-অভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়েছিল, যার ফলে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। এর ফলে পতন ঘটে শেখ হাসিনার দেড় দশক স্থায়ী স্বৈরাচারী শাসনের। হাসিনার মন্ত্রিপরিষদের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বার পর্যায়ের ব্যক্তিরাও দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। আবার অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। অবসান হয় বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত একটি অগণতান্ত্রিক, দুর্নীতিপরায়ণ ও স্বৈরশাসনের, যার তুলনা এই মহাদেশের কোনো দেশের সঙ্গেই চলে না। প্রায় দেড় দশকের রাজনৈতিক নির্যাতন, নিষ্পেষণ, জেল-জুলুম ও গুম-খুনের পর আবার রাস্তায় নেমে আসেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি অন্তর্বর্তী সরকার, যারা এক বছর পর একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে সরে যাবে বলে আশা করা যায়। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় সরকারি বাহিনী ও সরকারদলীয় অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে দেড় শতাধিক নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা ও শিশু প্রাণ হারিয়েছে। চূড়ান্ত গণনায় সে সংখ্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। অভিযোগ উঠেছে যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশেই সেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। সে কারণে এরই মধ্যে শতাধিক মামলা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর আইনি তদন্ত এখন শেষ পর্যায়ে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এরই মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ভারতের আশ্রয় থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর। জানা গেছে, ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এখনো ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে রেড নোটিশ জারি না হলেও যেকোনো সময় হতে পারে। কারণ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে ভারতকে কূটনৈতিক চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ।
হাসিনা সরকারের পতনের পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি দলীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও মামলা রিভিউ করার পর মহামান্য আদালত তাকে এরই মধ্যে মুক্তি দিয়েছেন। উল্লিখিত দুটি মামলার চার্জ গ্রহণ করা হয়েছিল ২০১৮ সালে, তাতে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে তার চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালে তাকে হাসপাতালে এবং ২০২০ সালে নিজ বাসভবনে স্থানান্তর করা হয়েছিল। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অন্যান্য সাজানো মামলা থেকেও ক্রমে ক্রমে তিনি এখন অব্যাহতি পাচ্ছেন। তা ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, যিনি এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, তাকেও বিভিন্ন মামলা রিভিউ করে আদালত মুক্তি দিচ্ছেন। এখন দেশে ফিরে আসা কিংবা সামনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানের কোনো বাধা নেই বলে তাদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন। খালেদা জিয়া ১৯৯১, ১৯৯৫ ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু পরে ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা তার (খালেদা) বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি শুরু করেন।
এ বছরব্যাপী আরেকটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ঘটনা ছিল একটির পর একটি মিথ্যা বা বিভিন্ন সাজানো মামলা দিয়ে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলে আটকে রাখা। তার অপরাধ হচ্ছে তিনি পাকিস্তানের সামরিকপ্রধানের বাধ্য বা অনুগত নন। তা ছাড়া চীনের বিরুদ্ধে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনামতো কাজ করার বিপক্ষে সাবেক জনপ্রিয় এই ক্রিকেটার ও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বর্তমানে ৭২ বছর বয়সী জনাব খান ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত বছরের মে মাসে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হলে পাকিস্তানব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিভিন্ন স্থানে সামরিক স্থাপনাগুলো সংগ্রামী জনগণের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এতে পাকিস্তানের সামরিক আদালতে এখন বেসামরিক মানুষকে দীর্ঘ মেয়াদে সাজা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব ইমরান খানের মুক্তি কিংবা সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্ব কিংবা বাড়াবাড়ি নিয়ে কিছুই বলছে না। গণতন্ত্রকামী সংগ্রামী পাকিস্তানিরা মনে করে, বাংলাদেশ ও সিরিয়ায় পরিবর্তনের পর এবার পাকিস্তানের পালা। বাংলাদেশ ও সিরিয়ার মতোই হঠাৎ করে একদিন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ধসে পড়বে।
বিশ্বরাজনীতির ক্ষেত্রে মায়ানমারের সামরিক স্বৈরশাসকরাও এখন পতনোন্মুখ। তাদের মরণঘণ্টাও ২০২৪ সালেই বেজে গেছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মায়ানমারের আরাকান (রাখাইন), চিন, কাচিন, শান ও কারেন নামক রাজ্যগুলো যেকোনো সময় এখন স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে। ভেঙে খান খান হয়ে যেতে পারে সাবেক বার্মা কিংবা বর্তমানের সামরিক জান্তা শাসিত মায়ানমার রাষ্ট্রটি। বহু সম্প্রদায় বা জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত এই রাষ্ট্রটি সামরিক জান্তাদের দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের কারণে ভেঙে খণ্ডবিখণ্ড হতে পারে। অপশাসন ও অর্থনৈতিক শোষণ-বঞ্চনার কারণে সেখানকার জনগোষ্ঠী এখন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সে কারণে তারা মুক্তির লক্ষ্যে শেষ অবলম্বন হিসেবে চূড়ান্ত লড়াইয়ের পথকে বেছে নিয়েছে। এ অবস্থায় কোনোমতেই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধরে রাখতে পারছে না সামরিক জান্তা। শোনা যাচ্ছে, জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং যেকোনো মুহূর্তে নিজ দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। নতুবা অন্যদের মতো পালিয়েও যেতে পারেন দেশ ছেড়ে। মায়ানমার নিয়ে এখন চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ভারতের স্বার্থের ঘুঁটি চালাচালি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। বিদায় ২০২৪।
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক












সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লায় মাদক পরিবহনে বাড়ছে নারীদের সম্পৃক্ততা
হঠাৎ আসিফ আকবরের বাসায় কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু
কুমিল্লায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ
শহরে আবারো কিশোর গ্যাং গ্রুপের অস্ত্রসহ মহড়া
কুমিল্লা মহানগর ১১ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
তামিল সিনেমার ‘কুড়াল’ দেখা গেল মনোহরগঞ্জের সংঘর্ষে!
নাঙ্গলকোটে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
মনোহরগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, আহত ১০
অধ্যাপিকা শরমিন কাদেরের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
দুই শিক্ষকের রাজসিক বিদায়
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২