বশিরুল ইসলাম:কুমিল্লায়
ধর্ষণের অভিযোগে ৩শ ৫৫জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ১ জানুয়ারী থেকে ৩১
ডিসেম্বর পর্যন্ত গত ১ বছরে এ পরীক্ষা করেছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক
মেডিসিন বিভাগ।
জানা যায়, ৪ বছরের শিশু থেকে ৪০ বছর বয়সের নারী
পর্যন্ত ধর্ষণের অভিযোগে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে
নমুনা পরীক্ষা করেছেন। ফলে ধর্ষণের সংখ্যা দিনদিন আশংকাজনক হারে
বাড়ছে।কোনভাবেই এর লাগাম টেনে রাখা যাচ্ছে না। ২০১৬ সালে যেখানে ধর্ষণের
অভিযোগের সংখ্যা ছিল ২৬৭জন সেখানে ৮ বছরের ব্যবধানে ২০২৪সালে এসে এই সংখ্যা
দাড়িয়েছে ৩৫৫জনে। গত আট বছরে ধর্ষণের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় অর্ধেকেরও
কাছাকাছি। পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, ২০১৭ সালে ৩৩০জন, ২০১৮ সালে ২৯৭জন,
২০১৯সালে ৩৫৬জন, ২০২০সালে ৩৬৭জন, ২০২১সালে ৩৬৫জন, ২০২২সালে ৪১৮জন এবং
২০২৩সালে ৩৫০জন। এছাড়াও২০২৪ সালে ৩শ ৫৫জন ধর্ষণের অভিযোগে নমুনা পরীক্ষা
করেছে। শুধু গত নভেম্বর মাসেই ৪৩জন ধর্ষণের অভিযোগে নমুনা পরীক্ষা করেছে
কুমেক পরীক্ষাগারে। এছাড়াও গত জানুয়ারী মাসে ১৯জন, ফেব্রুয়ারী মাসে ২৮জন,
মার্চ মাসে ৩২জন, এপ্রিল মাসে ২৫জন, মে মাসে ৩৭জন, জুন মাসে ৩১জন, জুলাই
মাসে ২৬জন, আগষ্ট মাসে ১৭জন। সেপ্টেম্বরে ৩৩জন, নভেম্বর মাসে ৩২জন ও
ডিসেম্বর মাসে ৩২জন।
এ বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন
বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এসোসিয়েট প্রফেসর ডা. সারমিন সুলতানা বলেন, গত ২/৩
বছরের তুলনায় ২০২৪সালে ধর্ষণের অভিযোগের সংখ্যা বেশি একটা বাড়েনি। যে টুকু
বেড়েছে তা পরিমানে সামান্য। এতে বুঝা যায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা
তৈরি হচ্ছে। আর সচেতনতা তৈরি হলেই আমাদের সমাজ তথা রাষ্ট্রে ধর্ষণের সংখ্যা
কমে আসবে। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আমরা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সভা সেমিনার
করে গণসচেতনতা তৈরি করতে পারি। অভিভাবকরাও এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে
পারে। তারা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলা, কবিতা আবৃত্তি,
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। ধর্ষণের ঘটনাগুলো
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। গত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে
দেখা যায় ১৬ থেকে ২২ বছরের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। অনেক
সময় প্রেম সংক্রান্ত বিষয় থাকে যার কারণে এদের বেশির ভাগই স্বেচ্ছায় যায়।
সত্যিকারের ধর্ষণ কিন্তু পরিমানে অনেক কম। ৩শ ৫৫জনের অধিকাংশেরই স্বেচ্ছায়
বা সম্মতিতে হয়েছে।
সমাজকর্মী দিলনাসি মহসীন বলেন, এই বিষয়ে সরকারকে আরো
কঠোর হতে হবে। আইনের প্রয়োগ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সমাজে
সচেতনতাবৃদ্ধির জন্য স্বপ্ল ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, মানুষ এখন বেশি
আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে। এটা আমার চাই-ই এবং এটা আমার হতে হবেই। অন্যথায়
সে যে কোন অন্যায় বা অপরাধের রাস্তা বেছে নিচ্ছে। তাই আইনের কঠোর বাস্তবায়ন
প্রয়োজন।