আজকের সূর্য পৃথিবীতে হাজির হয়েছে নতুন বছর ২০২৫ এর সুবাস
নিয়ে। সুন্দর আগামীর প্রার্থনায় ব্যাকুল হবে পৃথিবীর মানুষ। তবু নানা কারণে
বিশেষ গুরুত্ব বহনকারী ২০২৪-এর দিকে বারবার ফিরে তাকাবে তারা।
বিদায়ি
খ্রিষ্টীয় বছরটি প্রায় সবার জীবনেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক, সামাজিক,
অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০২৪ একটি ঘটনাবহুল বছর
পার করল বাংলাদেশ। মূলত ব্যক্তি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চড়াই-উতরাই আর
নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছে পুরো সময়। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার
অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরাচারী
শাসনের পতন হয়েছে।
২০২৪ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হচ্ছে
কোটা সংস্কার আন্দোলন বা জুলাই-আগস্ট আন্দোলন অথবা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান।
২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮
সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা
পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন আবার নতুনভাবে আলোচনায় আসে।
প্রথম দিকে এই
আন্দোলন সভা-সমাবেশের মধ্যে স্থির থাকলেও ১৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের পরোক্ষভাবে রাজাকারের
নাতি-পুতি হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়। আরও জোরদার হয় আন্দোলন। একপর্যায়ে
স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও
আন্দোলনকারী আহত হন। আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধসহ নিহত হন সহস্রাধিক।
২১ জুলাই
বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে সরকারি চাকরিতে
মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগের নির্দেশ দেন। ২২ জুলাই এই বিষয়ে সরকার
প্রজ্ঞাপন জারি করে। ৫ আগস্ট তীব্র আন্দোলনের তোপে পদত্যাগ করে ভারতে
পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সেনাপ্রধান জেনারেল
ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। সরকারের প্রধান
হিসাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম ঘোষণার ৩ দিন পর ৮ আগস্ট তার শপথ গ্রহণের
মধ্য দিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের যাত্রা শুরু হয়।
এ বছরের শুরুতেই সংসদ
নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির এ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর
বর্জনের মুখেই শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার জয়লাভ
করে। এতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় লাভ করে। জাতীয় পার্টি ও আরও
কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে।
২২ মে
ভারতের কলকাতায় আওয়ামী লীগের সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মরদেহ উদ্ধার হয়।
ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গিয়ে তিনি ১৩ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এই ঘটনায় ৩
জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিদায়ি বছরের ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুরা এমভি
আব্দুল্লাহ নামের একটি জাহাজ ছিনতাই করে। এতে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ছিলেন
যাদের জিম্মি করেছিল জলদস্যুরা। বিষয়টি সেই সময় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি
করে। পরে ১৫ সোমালিয়ান জলদস্যুর হাত থেকে ছাড়া পায় জাহাজটি।
বিদায়ি
বছরের ২৫ নভেম্বরে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময়
কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে
গ্রেফতার করে। জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের অভিযোগে তার
বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম
ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়, যেখানে ম্যাজিস্ট্রেট
কাজী শরিফুল ইসলাম তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
দেন। চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের রিমান্ড শুনানিকে কেন্দ্র করে তার সমর্থকরা
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করে। পুরো ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড়
ওঠে।
এ ঘটনা ছাড়াও অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ভারতীয়
মিডিয়া এবং দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনের নানা পর্যায় থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে
নেতিবাচকভাবে বক্তৃতা-বিবৃতি আসতে থাকে। এতে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন
শুরু হয়। অবস্থার উন্নতিতে দুই দেশের কূটনেতিক নানা পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা
এখনও চলমান।
বিদায়ি বছরে অন্যতম বড় দুর্ঘটনা হলো ঢাকার বেইলি রোডের একটি
বহুতল ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যু। এ ছাড়া আরও ৭৫ জনকে বিভিন্নভাবে আহত
অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। গ্রিন কোজি নামক বহুতল ভবনে ২০২৪ সালের ২৯
ফেব্রুয়ারি রাতে এই অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। ঘূর্ণিঝড় রেমাল ২৬ ও ২৭ মে
বাংলাদেশে আঘাত হানে। এ ঘূর্ণিঝড়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়।
ভারতকে ফাইনালে
হারিয়ে ৮ ডিসেম্বর এসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ শিরোপা জেতে বাংলাদেশ
অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। বছরের শেষের দিকে ২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে সচিবালয়ে
ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় দেশবাসী অবাক হন। এতে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের
অনেক নথি পুড়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বাইরেও মনে রাখার মতো
বাংলাদেশে আরও নানা ঘটনা ঘটে।
বিদায়ি বছরের ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ সালে জো বাইডেনের
কাছে হারলেও আবার জনগণের সমর্থনে ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে চমক
দেখালেন ট্রাম্প। ২৭ নভেম্বর সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ভয়ংকর রূপ নেয়। আল কায়দার
শাখা সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নেতৃত্বে আলেপ্পো দখল করে নেওয়ার
ঘোষণা দেয় বিদ্রোহীরা। এরপর একে দারা, হোমসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল
করার পর ৮ ডিসেম্বর রাজধানী দামাস্কাসে পৌঁছায় বিদ্রোহীরা। প্রেসিডেন্ট
বাশার আল আসাদের বাহিনী পিছু হটে আর পতন ঘটে আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের
শাসনের।