শীতের
সব্জির সরবরাহ ভালো থাকায় দামে কিছুটা স্বস্তি মিললেও চাল, মাছ আর মুরগির
দামে তা ফিঁকে হয়ে যাচ্ছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় বাজার ঘুরে সয়াবিন
তেল কিনতেও বেগ পেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজার ঘুরে
দেখা গেল এই চিত্র।
রাজধানীর বাজারগুলোতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে কোনো কোনো শাক-সবজির দাম।
মানভেদে
প্রতিকেজি বেগুন ৬০-৭০ টাকা, করলা ৫০-৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০ টাকা, মুলা
২০-৩০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা, ডাটা ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা ও পটল ৪০
টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি আঁটি লাল শাঁক পাওয়া যাচ্ছে ১০-১৫ টাকায়।
লাউশাক ২৫-৩০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি
হচ্ছে ১৫ টাকায়।
শিম ৩০ টাকা, ফুলকপি আকৃতিভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর
৫৫-৬০ টাকা, প্রতিকেজি পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, লেবুর হালি
২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসার পর চড়া
দাম কিছুটা কমে এসেছিল। কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবার বাড়তে শুরু
করেছে রান্নার এই প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম।
প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজে
৬০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে। অথচ গত সপ্তাহেও
দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকা ছিল।
টাউন হল বাজারের
বিক্রেতা জুবায়ের হাসান বলেন, “পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা বাড়ছে। কারণ
আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে, আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেশি পড়ে।”
মাছের
বাজার এখনো চড়া। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে
ইলিশের দাম। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ টাকায়।
এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩২০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২০০০ টাকা পড়ছে।
গরিবের মাছ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া পাঙাস ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়ার দামও ২২০- ২৩০ টাকা।
এছাড়া কৈ ৮০০ টাকা, গুলসা ৭০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ টাকা, পাবদা মাছ ৩৬০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রুই মাছ আকৃতি ভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০, কাতলা মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং বিভিন্ন ধরনের চিংড়ি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বর্ষবরণের
অনুষ্ঠানের জন্য চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে মুরগির। গত সপ্তাহেও প্রতি
কেজি ব্রয়লার মুরগি যেখানে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকায় কেনা যাচ্ছিল, শুক্রবার তা
২০৫ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েতে দেখা গেল। আর সোনালি মুরগির দাম কয়েক
সপ্তাহ ধরেই চড়া। শুক্রবার দেখা গেল দোকানিরা দাম হাঁকছেন ৩৫০ টাকা। দুই
সপ্তাহ আগেও বিক্রি হচ্ছিল ৩৩০ টাকায়।
চালের দামও বাড়তি। আগের সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে অন্তত ৫ টাকা বেশি রাখছেন বিক্রেতারা।
মোহাম্মদপুরের
টাউন হল বাজারে প্রতি কেজি নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৭৬ টাকায়। আগের
সপ্তাহে দাম ছিল ৭০-৭২ টাকা। তার আগের সপ্তাহে ছিল ৬৬-৬৮ টাকা।
একইভাবে কেচিতে ৫ টাকার মত বেড়ে মিনিকেট ৭৬-৮০ টাকা, আটাইশ ৬০-৬২ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫২-৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী
চালের আড়তের যমুনা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন শাহ বলেন, “আমনের এ
সময়ে এক বস্তা (৫০ কেজি) আটাইশ চালের দাম আড়াই হাজার টাকা থাকার কথা হিসাব
মত। মাঝখানে দাম কমছিল, ২৬০০ টাকাতেও বিক্রি করছি। পরে ২৭০০ হল, এখন ২৮৫০
টাকায় বিক্রি করতেছি।’’
একই আড়তের সরদার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী
ফারুক হোসেন বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাপ্লায়াররা বলছেন, এই দামে চাল নাই।
বাজারে ধান কিনতে গেলে করপোরেটরা সব কিনে নেয়, ভাগে পাওয়া যায় না। তারা
বেশি বেশি কিনে, হাটে যারা আসে, একটু বেশি দামে তাদেরকেই একসঙ্গে সব দিয়ে
দেয়।”
গত মাসে হঠাৎ বাজার থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল সয়াবিন তেল। সরকারের উদ্যোগে তখন দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি এখানো।
ক্রেতারা কিনতে এলে বিক্রেতারা বলছেন নেই। তবে ক্রেতারা চলে যাওয়ার সময় বিক্রেতারা আবার জিজ্ঞাস করছেন কত লিটার লাগবে।
মোহাম্মদপুরের
কৃষি মার্কেট বাজারে মাজেদ মোর্শেদ বাজার করতে এসেছিলেন শুক্রবার। তিনি
বলেন, “তিনটা দোকানে ঘুরে তেল পেলাম। দোকানগুলোতে মনে হচ্ছে তেলের সংকট
রয়েছে।”
কারওরান বাজারেও একই চিত্র দেখা গেছে। সরকার বোতলের তেল প্রতি
লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশনা দিয়েছে। আর খোলা তেলের দাম নির্ধারণ
করা হয়েছে ১৫৭ টাকা। তবে খোলা তেল বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
কৃষি মার্কেটে বাজার করতে আসা শামিমা আক্তার বলেন, “চাহিদা মোতাবেক তো বাজারে তেলের চাহিদা নেই। তেল পাওযা যাচ্ছেনা।”
সয়াবিন
তেলের এই সঙ্কট নিয়ে প্রশ্ন করলে কৃষি মার্কেটের একজন বিক্রেতা বলেন,
“কোম্পানি থেকেই সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে না। তাই চাহিদা মোতাবেক পাওয়া যাচ্ছে
না।”
আর বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা
বলেন, “এস আলম গ্রুপ আমাদের ভোগ্যতেল সরবরহ দিত। সেই গ্রুপ এখন নেই। তাই
সরবরাহ আগের মত হচ্ছে না।”