সোমবার ৬ জানুয়ারি ২০২৫
২৩ পৌষ ১৪৩১
কুমিল্লায় মাদক পরিবহনে বাড়ছে নারীদের সম্পৃক্ততা
এক বছরে আটক দুই শতাধিক, আদালতেও মাদক মামলার জট
তানভীর দিপু
প্রকাশ: শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:৫২ এএম |

কুমিল্লায় মাদক পরিবহনে  বাড়ছে নারীদের সম্পৃক্ততা
বেশি আয়ের লোভ দেখিয়ে মাদক পরিবহনে নিরাপদ কৌশল হিসাবে নারীদের ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাদক পরিবহন ছাড়াও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রনেও এখন নারীদের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। গত এক বছরে কুমিল্লা জেলা পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরের অভিযানে দুই শতাধিক নারী মাদকবহনকারী ও ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। আটক নারীদের বেশির ভাগই তরুণী এবং মধ্য বয়সী। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কয়েকগুণ বেশি উপার্জনের লোভ দেখিয়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র্য পরিবারের নারীদের দিয়ে মাদক পরিবহন করানো হচ্ছে। নারীরা বডিফিটিং  (শরীরে বেঁধে) কিংবা শরীরে প্রবেশ করিয়ে মাদক পরিবহন করলে ধরা পরার সম্ভাবনা কম মনে করে বলে তাদেরকে সম্পৃক্ত করানো হচ্ছে এই অবৈধ কাজে। তবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর জালে ধরা পড়ছেন তাদের অনেকেই। সাধারণত পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদক পাচার রোধে বিভিন্ন সময় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে মাদক বিরোধী অভিযানে সেনাবাহিনীও সহযোগিতা করছে পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে।
এদিকে কুমিল্লায় প্রতিমাসে গড়ে দুই শ’ মাদকের মামলা দায়ের হয় বলে জানা গেছে। ডিসেম্বর মাসে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপিত তথ্য থেকে জানা গেছে, এবছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত  কুমিল্লার আদালতে মাদক ও চোরাচালানের পেন্ডিং বা ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে পুলিশের মামলার সংখ্যা ১৮ হাজার ৮শ ৭১ টি এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের দায়েরকৃত ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা ১ হাজার ৬ শ ২১টি। এসব মামলায় মাদক অপরাধে জড়িতরা মামলার দীর্ঘ সূত্রিতার সুযোগ নিয়ে পার পেয়ে আবারো মাদকের সাথে জড়িয়ে পরে। যে কারণ সীমান্ত এলাকায় আদালতে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মাদক মামলা নিষ্পত্তির পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবীগণ।       
জানা গেছে, ভারত থেকে কুমিল্লা সীমান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার হয় মদ, গাঁজা, ইয়াবা। এছাড়া কক্সবাজারের টেকনাফ, ফেণীর সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার উপর দিয়েই পাচার হয় মাদক। সম্প্রতি মাদক পাচার করার সময় বেশ কয়েকটি অভিযানে নারীদের গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, শুধু মাত্র পরিবহন করাই তাদের কাজ। এজন্য পাওয়া যায় মোটা অঙ্কের টাকা। কুমিল্লা জেলা পুলিশের তথ্য মতে, গত এক বছরে কুমিল্লা জেলায় মাদক মামলায় ১৭১ জন নারী গ্রেপ্তার হয়েছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে ৩২ জন। এছাড়াও ১০ বিজিবি ও ৬০ বিজিবির সদস্য সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক পাচারের সময় আরো ১৪ জন নারীকে আটক করেছেন। যাদের বেশির ভাগই মাদক পরিবহনে কাজে নিয়োজিত ছিলেন। 
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক চৌধুরী ইমরুল হাসান জানান, টাকার লোভ দেখিয়ে নারীদের মাদক পরিবহনে ব্যবহার করা হচ্ছে। নারী হওয়ার তল্লাশিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ এড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলেই মাদক কারবারিরা নারীদের ব্যবহার করছে। এসব নারীদের বেশির ভাগই নিম্নআয়ের কাজ করতো বলে জানা গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে এমনও তথ্য জানা গেছে, কারা তাদের গাঁজা কিংবা ইয়াবা দিচ্ছে তাও তারা জানে না। তাদের কাজ শুধু টাকার বিনিময়ে পাচার করা। 
তিনি আরো জানান, সম্প্রতি অভিযানে একই পরিবারের বাবা, মা ও মেয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে। এছাড়া বাড়ির গৃহকর্মীর কাজ করতো এমন এক তরুণীকে একমাসের বেতনের  দ্বিগুণ টাকা এক ট্রিপে দেয়া হবে বলে লোভ দেখিয়ে মাদক পরিবহন করানো হয়েছে এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। এছাড়া বাজারের ব্যাগে শাক সবজির আড়ালে গাঁজা পরিবহনের সময়ও ধরা পড়েছেন একাধিক নারী। 
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানা গেছে, মাদক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত নারীরা যে শুধু কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা এমন নয়, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নারীরাও গ্রেপ্তার হয়েছে কুমিল্লায়। 
বিশিষ্ট আইনজীবী বদিউল আলম সুজন জানান, মাদকের মামলার বিচারকার্যে গিয়ে আমরা পুলিশের তদন্তে গাফেলতি লক্ষ্য করি। এসব গাফেলতির কারণেও কিন্তু আসামিরা পার পেয়ে যায়। আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদকের মামলা যে পরিমান হচ্ছে তারচেয়ে কম নিষ্পত্তি হচ্ছে। যে কারণে জট বাড়ছে। সেক্ষেত্রে একটি ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের মাধ্যমে এসব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব। 
কুমিল্লা আদালতের পিপি(সরকারি কৌসুলি) কাইমুল হক রিংকু জানান, আমরা চেষ্টা করছি মাদকের মামলার জট কমিয়ে আনতে। আমাদের কুমিল্লা আদালতে একটি আলাদা ভাগ রয়েছে যেখানে মাদকের মামলা নিষ্পত্তি হয়। আমরা চেষ্টা করবো তদন্তকারী সংস্থার সক্রিয়তায় এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে।














সর্বশেষ সংবাদ
বাপে-মেয়ে মিল্লা পালাইছে কোথায় বাহার-লোটাস
কুমিল্লা মহানগরীর ৪ওয়ার্ডে বিএনপি’র কমিটি
বেদখল হয়ে আছে কুমিল্লার সড়ক-মহাসড়কের যাত্রীছাউনি
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে দুই ভারতীয় নাগরিক আটক
কুমিল্লায় ফসলের মাঠজুড়ে সাদা বকের মিলন মেলা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কেন ভাঙলো কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি ?
অবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ও কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা পুনর্বহালের দাবীতে জনসভা আজ
কুমিল্লায় শীতে কাবু শিশুরা
কুমিল্লা জেলা ব্রেড, বিস্কুট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত
এড. নাজমুস সা’দাত বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২